ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাওড় থেকে বঙ্গভবন

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২১:২৮, ১৮ মার্চ ২০২৩

হাওড় থেকে বঙ্গভবন

.

এমন সাহসী কথা তিনিই বলতে পারেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েও নিজের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন তিনি। কঠিন কথা সহজভাবে সরাসরি বলতে পারেন, সংকটকালে সুদৃঢ় থাকতে পারেন বিশ^াসের জায়গায় এবং সকল লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন খাঁটি রাজনীতিক হিসেবে। তিনি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম রাষ্ট্রপতি, যিনি দুই মেয়াদ প্রায় সম্পূর্ণ করেছেন। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী আর ৩৫ দিন পর বিদায় নেবেন তিনি।

গত ১২ মার্চ তাঁরপুরনো পরিচিতদেশের সিনিয়র সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন বঙ্গভবনে। অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ের কথা থাকলেও বিষয়টি অনেকটাই আনুষ্ঠানিক হয়ে ওঠে।ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানেসাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ বাক্য চিরন্তন। দুই মেয়াদ শেষ করে তিনি চলে যাবেন অবসর জীবনে। এই সময়ে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা যাই হোক, সবই সাংবাদিকদের কাছে মূল্যবান। আমন্ত্রিত সিনিয়র সাংবাদিকদের পাশাপাশি হাজির হয়েছেন দেশের সকল প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী। ভূমিকা বক্তব্যের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে তা আনুষ্ঠানিকই করতে হলো। পরে তাঁর ঘনিষ্ঠ একদল সিনিয়র সাংবাদিক স্মৃতিচারণ করেন। পুরনো মানুষদের কাছে পেয়ে সবার প্রিয় হামিদ ভাই স্বভাবসুলভ হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেন।

অতি সম্প্রতি তাঁর আত্মজীবনীমূলক বইআমার জীবননীতি আমার রাজনীতিবের হয়েছে। শৈশব থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর প্রথম - বইয়ের ব্যপ্তি। বঙ্গভবনে বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। আবদুল হামিদ জানালেন তার বই লেখার অভিজ্ঞতার কথা। শুরু হলো তাঁর সত্য ভাষণ।আমি লেখাপড়ায় মোটেও ভালো ছিলাম না। ১৯৬১ সালে মেট্রিক পাস করেছি থার্ড ডিভিশনে। অবশ্য মিঠামইনের মতো প্রত্যন্ত হাওড় অঞ্চলের জন্য এটি ছিল বিরাট কিছু। আশপাাশের গ্রাম থেকেও মানুষ আমাকে দেখতে এসেছিল। ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছিরেফার্ডপেয়ে থার্ড ডিভিশনে। এলএলবি প্রথম দফায় পাসই করতে পারিনি। তখন দেশ মাত্র স্বাধীন হয়েছে। আমি দেশের আইনসভার সদস্য। অনেকে আমাকে বলেছিল, বই দেখে নকল করে পরীক্ষা দিতে। এটি আমার জন্য সম্ভবও ছিল। আমি সেই পথে যাইনি। দেশের একজন আইন প্রণেতা নকল করে পরীক্ষা দেবে, এটি হতে পারে না। ফেল করে দ্বিতীয় দফায় পাস করেছি। আমার জন্য সেটিই ভালো হয়েছে। আজ গর্ব করে বলতে পারি, দুইবারে আমি এলএলবি পাস করেছি। নকল করে পাস করলে আজ বুক ফুলিয়ে একথা বলতে পারতাম না। এখনো বাংলা লিখতে গিয়ে ভুল হয়ে যায়। এক পৃষ্ঠায় ১০/১৫টা বানান ভুল হয়। বই লিখতে গিয়ে এমনটাই হয়েছে। সবাই মিলে ঠিক করে দিয়েছে।এমন সৎ স্বীকারোক্তি আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

শিক্ষা জীবনে সীমাবদ্ধতার কথা তিনি আগেও বলেছেন। বিশেষ করে বিশ^বিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি একথা স্মরণ করেছেন একাধিকবার। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে তাঁর প্রধান অতিথি হওয়া উচিত কি না- এই প্রশ্ন তিনি নিজেই করেছেন। রাষ্ট্রপতির এমন বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারত। প্রশ্ন উঠতে পারত তাঁর স্বঘোষিতঅযোগ্যতানিয়ে। সেই প্রশ্ন ওঠেনি কখনো। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও এই প্রশ্ন তোলেননি। এই বক্তব্যকে সৎ সাহসী স্বীকারোক্তি হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। নিজের দুর্বলতার কথা স্বীকার করার মানসিকতার প্রশংসাই হয়েছে সব ক্ষেত্রে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং ব্যক্তি আবদুল হামিদের সততাই তাঁকে মহিমান্বিত করে তুলেছে। মাঠ পর্যায় থেকে উঠে আসা একজন রাজনীতিক তাঁর সর্বোচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছেন। হাওড়ের পানিবন্দি জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে ধাপে ধাপে পৌঁছে যেতে পেরেছেন বঙ্গভবনে।

তাঁর রাজনীতি শুরু হয়েছিল তৃণমূলে ছাত্রলীগ দিয়ে। ছাত্রজীবনে তিনি ঐতিহ্যবাহী কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তিনি অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং৭০ সালে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন।৭১ সালে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। এর পর তিনি ১৯৮৬, ’৯১, ’৯৬, ২০০১, ’০৮ সালে মোট সাতবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।১৩ সালে প্রথম এবং১৮ সালে দ্বিতীয় দফায় দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

আবদুল হামিদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়৯৩ সালে সংসদ ভবনে। আমি তখন সংসদের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে নিয়োজিত তরুণ রিপোর্টার। রুটিন কাজের বাইরেও বিশেষ রিপোর্টের জন্য দৌড়-ঝাঁপ করি। সংসদ ভবনে বিশেষ রিপোর্টের সোর্স মূলত সংসদ সদস্যগণ। তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে চেষ্টার প্রক্রিয়ায় আবদুল হামিদের সঙ্গে পরিচয়। মাগরিবের নামাজের বিরতিতে দেখা হতো সংসদ ভবনের ক্যান্টিনে।

মাঝে মধ্যে কথা হতো টেলিফোনে। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হয়৯৬ সালে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর। তখন স্পিকার ছিলেন হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী। রাশভারী ভদ্রলোক। বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় ইউরোপে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালনকালে তাঁর ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়। ইউরোপে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার প্রথম আশ্রয় ছিলেন তিনি। দুই বোন- শেখ হাসিনা শেখ রেহানা তাঁর এই ভূমিকার কথা স্মরণ রেখেছেন। তিনি ছিলেন দুই বোনের অভিভাবকের মতো। শিক্ষিত, প্রবল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হলেও হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী সংসদ পরিচালনার ক্ষেত্রে খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। বিশেষ করে কোনো সংকটকালে তিনি অনেকটা অসহায় হয়ে যেতেন। তখন হাল ধরতেন ডেপুটি স্পিকার আবদুল হামিদ। তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ আঞ্চলিক ভাষায় নরমে-গরমে, হাসি-ঠাট্টায় অধিবেশন চালাতেন শক্ত হাতে। তাঁর এই নিজস্ব স্টাইল এক সময় সংসদ সদস্য এবং সাধারণ মানুষের কাছে তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। ২০০১ সালের জুলাই মাসে হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তিনি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আওয়ামী লীগ বসে বিরোধী দলের আসনে। আবদুল হামিদকে নির্বাচিত করা হয় বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে। মূলত এটি ছিল শেখ হাসিনার রাজনৈতিক চমক। আবদুস সামাদ আজাদ, জিল্লুর রহমান, সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, আবদুল জলিল, মোহাম্মদ নাসিমের মতো নেতা তখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে বিরাজ করছিলেন। আবদুল হামিদের ওপর আস্থা রাখেন শেখ হাসিনা। সংসদ ভবনে বিরোধী দলের কর্মকান্ডে কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে উপনেতার কার্যালয়। মূলত আবদুল হামিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তখন। দীর্ঘ পাঁচ বছর সংসদের অধিবেশন চলার সময় অনেকটা সময় কাটিয়েছি তাঁর কক্ষে। প্রায়ই দুপুরে খাওয়া হতো ওখানে। গল্প-আড্ডা, ব্যক্তিগত আলাপ সবকিছুই হতো। তখনই আবিষ্কার করেছিলাম অন্য এক আবদুল হামিদকে। শুধু আমি নয়, অনেক সাংবাদিকই তাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। ডেপুটি স্পিকার এবং পরে স্বল্পকালীন স্পিকার থাকার সময় ব্যাপক জনপ্রিয় এই নেতার কক্ষ ছিল আওয়ামী লীগ ছাড়াও সকল বিরোধী দলের সংসদ সদস্যের আড্ডার স্থান।

২০০৬ সালে আমাকে গ্রহণ করতে হয় জনকণ্ঠের প্রধান প্রতিবেদকের দায়িত্ব।  তখন থেকে বাইরে রিপোর্টিং করার সুযোগ কমে যায়। সংসদের সংবাদ সংগ্রহও হয়ে যায় অনিয়মিত। ২০০৯ সালে আবদুল হামিদ স্পিকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দুএকবার গিয়েছি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। আমাদের মতো সিনিয়র হয়ে যাওয়ার কারণে যারা সংসদের সংবাদ সংগ্রহ ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাদের খুব মিস করতেন তিনি। দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম টেলিফোনে। শপথ গ্রহণের আগে সাক্ষাৎও হয়েছিল। কথা ছিল মাঝেমধ্যে বঙ্গভবনে যাব আড্ডা দিতে। গত দশ বছরে অবশ্য শুধু সাংবাদিকদের নিয়ে কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে আড্ডার সুযোগ হয়নি। বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেওয়ার আগে তিনি আবার পুরনো সম্পর্কের ঝালাই করতে চাইলেন। ব্যক্তিগত পছন্দের একজন মানুষ এবং রাষ্ট্রের অভিভাবকের আমন্ত্রণ ফেলতে পরিনি। আমি এবং আমার মতো অনেক সিনিয়র সাংবাদিক হাজির হয়েছিলেন বঙ্গভবনের দরবার হলে।

আবদুল হামিদ তাঁর সূচনা বক্তব্যে বারবারই বলছিলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে এটি তাঁর শেষ সাক্ষাৎ নয়। এখন থেকে তিনি অবসর জীবনযাপন করবেন। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে এই অবসর জীবনটা হয়তো তাঁর কঠিন সময় হবে। সারা জীবন মাটি মানুষের সঙ্গে কাটানো এই নেতা কর্মহীন হয়ে যাবেন, এই হতাশা তাঁকে কুরে করে খাচ্ছে। অবসর জীবন তিনি রাজধানীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় নিজস্ব বাড়িতে কাটাবেন এমন আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা ছাড়াও আমি সময় কাটাতে যাব প্রিয় মিঠামইনে। আমি এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধ।

চাইলেও দৌড়ঝাঁপ করে আপনাদের কাছে যেতে পারব না। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আপনারা আমাকে নিঃশর্ত সহযোগিতা করেছেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন হয়ে পড়েছিল। এখন আবার আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। আপনারা যদি সময় করে আমার নিকুঞ্জের বাসায় কিংবা মিঠামইনে আসেন, তবে খুবই খুশি হবো। মিঠামইনে গেলে হাওড়ের মাছ দিয়ে আপ্যায়নের চেষ্টা করব। বঙ্গভবনে আমার আর ৪২ দিন আছে। ৪২ দিন পর আমি স্থায়ীভাবেই অবসরে যাব। অনেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এমপি-মন্ত্রী, এমনকি উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। আমি আর সে পথে যেতে চাই না। অবসর সময়ে আমার বইয়ের দ্বিতীয় খন্ড এবং আরও কিছু লেখালেখির ইচ্ছা রয়েছে।’ 

প্রিয়তমা স্ত্রী রশিদা হামিদকে নিয়ে তিনি প্রায়ই হাঁসি-ঠাট্টা করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানেও তিনি বলেন, ‘প্রথম বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আমার স্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, আমি নাকি সব কিছু লিখিনি। উনার সঙ্গে বিয়ের এক-দেড় বছর আগে থেকেই আমার পরিচয় ছিল। সে সব কথা তো আর বইয়ে লেখা যায় না। বইয়ে আমি আমার সব কথাই লিখেছি। রাজনৈতিক জীবনের কোনো কিছুই বাদ যায়নি। আমি সারাজীবন এত বক্তৃতা করলাম, কিন্তু ফার্স্ট হতে পারিনি। আর উনি ফার্স্টলেডি হয়ে একদিন বক্তৃতা করেই ফার্স্ট হয়ে  গেছেন।

প্রসঙ্গক্রমে একটি ব্যক্তিগত ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। ২০০১ সালে তিনি বিরোধী দলের নেতার কক্ষে বসতে শুরু করেছেন। আমরাও নিয়মিত। একদিন দুপুরে তাঁর কক্ষে গেলে বসতে না দিয়েই তিনি বলেন, ‘একজন এপিএস নিয়োগ দিয়েছি, দেখে আসেন কেমন হয়েছে।পাশে এপিএসের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম একজন সুন্দরী মেয়ে বসে আসেন। কুশল বিনিময় করে তাঁর কক্ষে ফিরে এলাম। জিজ্ঞেস করলেন, কেমন হয়েছে? একটু অন্যরকম জবাব দিতে গিয়েও কেন জানি দেইনি। শুধু বললামভালোই বললেন, ‘আমার মেয়ে। গিন্নি তাকে পাঠিয়েছেন এপিএস করে, আমাকে পাহারা দিতে।আমার ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়ল। একটু হলেইফাউলকিছু বলে ফেলছিলাম। তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এমনই ছিল। হাসি-ঠাট্টা, আনন্দ-হুল্লোড়ে কেটেছে অনেক সময়।

রাষ্ট্রপতি থাকার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি বারবার বলেছেন, ‘আমার হাত-পা বাঁধা। ইচ্ছে করলেও যেখানে সেখানে যেতে পারি না।সেদিন বঙ্গভবনেও তাই দেখেছি। দীর্ঘদিনের পুরনো পরিচিত ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে তিনি যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। আনুষ্ঠানিক বক্তৃতার পর তিনি আরও ঘনিষ্ঠভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য যাচ্ছিলেন টেবিলে টেবিলে। স্মৃতিচারণ ছাড়াও ছবি তুলছিলেন। শৃঙ্খলা তাঁকে বারবার বাধা দিচ্ছিল। একটা সময় তাঁকে প্রায় জোর করেই নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি পেছনের টেবিলগুলোতে আর যেতেই পারলেন না। আমরা জন ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক পেছনের টেবিলে বসেছিলাম। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেখে ছুটে গেলাম সাক্ষাৎ করতে। প্রবল আন্তরিকতায় আপনজনের মতোই তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন। এর পর চলে গেলেন আনুষ্ঠানিক ফাটোসেশনে। এত কিছুর পরও তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা অনেকটা প্রটোকলবিহীন কাটান তাঁর প্রিয় সাংবাদিকদের সঙ্গে। বঙ্গভবনের কাচ্চি বিরিয়ানি, টিকা কাবাব, মুরগির রোস্ট, সালাদ এবং সুস্বাদু দই দিয়ে নৈশভোজের পর ফিরে আসি বঙ্গভবন থেকে।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×