ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টস পণ্য চুরি

-

প্রকাশিত: ২০:২৬, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

গার্মেন্টস পণ্য চুরি

সম্পাদকীয়

বিষয়টি অতি পুরনো, যা নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ উঠে থাকে পোশাকশিল্প মালিক ও সংগঠনের পক্ষ থেকে। মালামালবাহী ট্রাক অথবা কন্টেনারে তৈরি পোশাক ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম নৌবন্দরে জাহাজে পাঠানোর পথে তা হাতিয়ে নেয় একাধিক চোরচক্র। এর ফলে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক গার্মেন্টস কোম্পানিটিই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, যথাসময়ে মাল ডেলিভারি নিয়েও সৃষ্টি হয় জটিলতা। আর্থিক ক্ষতি তো রয়েছেই। তদুপরি দেশ বঞ্চিত হয় মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন থেকে।

ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ভাবমূর্তি। এমনও হতে পারে যে, কোনো কোনো আমদানিকারক যথাসময়ে পণ্যাদি ডেলিভারি না পেয়ে দ্বারস্থ হন অন্য কোনো দেশের। বহুমুখী এই সমস্যা-সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় ও পদ্ধতি নিয়ে বারবার পোশাক শিল্পসহ সংশ্লিষ্ট মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা সত্ত্বেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। 
মহাসড়কে ট্রাক থেকে গার্মেন্টস পণ্য চুরির মূল হোতাসহ সাতজনকে সম্প্রতি পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় অভিযান চালিয়ে। একটি কাভার্ড ভ্যানসহ উদ্ধার করেছে ৫ কোটি টাকার পণ্য। পুলিশের ভাষ্য, এরকম একাধিক চক্র রয়েছে যাদের কাজই হলো দেশের সড়ক-মহাসড়কে পোশাকশিল্পসহ খাদ্যপণ্য এবং বিভিন্ন মালামাল বহনকারী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থেকে গার্মেন্টস পণ্য চুরি অথবা ছিনতাই করা। এর পেছনে রয়েছে একাধিক মাস্টারমাইন্ড। চক্রটি প্রথমে সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টস কোম্পানি প্রেরিত পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও সহকারীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে।

পণ্যের সঙ্গে প্রেরিত নমুনা পরীক্ষা করে এর বাজারমূল্য যাচাইপূর্বক যদি সেটি লাভজনক হয়, তাহলে লুণ্ঠন করে সেসব। পরে সুযোগ-সুবিধা মতো বাজারে বিক্রি করে দেয়। চুক্তি অনুযায়ী পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও সহকারীকে বখরা দিয়ে থাকে। এর একটি সহজ সমাধান হতে পারে যে, বিদেশে প্রেরিত গার্মেন্টসসহ যে কোনো পণ্য সাধারণত সড়ক পথে পাঠানো হয়ে থাকে রাতের বেলা। সে ক্ষেত্রে বিশেষ করে রাতের বেলায় মহাসড়কগুলোতে হাইওয়ে পুলিশের টহল ও নজরদারি বাড়ানো।

এর পাশাপাশি রপ্তানিমুখী পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলোতে অত্যাধুনিক সেন্সর ও সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত করা। যাতে ট্রাকটি চোরচক্র অথবা ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে সতর্ক ধ্বনি অথবা সাইরেন বেজে ওঠে সঙ্গে সঙ্গে। সেক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে। 
প্রায় দু’বছর করোনাকালীন চরম দুঃসময় এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত কাটিয়ে উঠে দেশের রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে ইতোমধ্যে। এ ক্ষেত্রে যথারীতি প্রধান নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী গত বছর বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের  বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ পৌনে ৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি। যা গত বছরের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি।

২০২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩০৬ কোটি ডলার। একে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন পোশাকশিল্পের মালিকরা। আসছে নতুন নতুন কার্যাদেশও। এবার ৫ হাজার কোটি ডলার বা ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা পূরণ হবে বলেই প্রত্যাশা। পরিবেশবান্ধব পোশাক শিল্পকারখানা স্থাপনে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। আগামী ৩ বছরের জন্য ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা বর্তমান রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিবিধ পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৫৩৭ কোটি মার্কিন ডলার।

পোশাকশিল্পপণ্যের বহুমুখীকরণসহ পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে জোর দিলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হবে না। সে অবস্থায় রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক ও নজরদারি বড়াতে হবে মহাসড়কগুলোতে। যাতে পোশাকসহ রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচলে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইসহ কোনো রকম বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।

×