ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ হোক বডি শেমিং

সাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

বন্ধ হোক বডি শেমিং

অন্যের দৈহিক আকার, বর্ণ, সাজসজ্জা, অঙ্গের তথাকথিত ত্রুটি-বিচ্যুতি, হ্রাস-বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে

অন্যের দৈহিক আকার, বর্ণ, সাজসজ্জা, অঙ্গের তথাকথিত ত্রুটি-বিচ্যুতি, হ্রাস-বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে তাকে দু-চার কথা শুনিয়ে চুপি চুপি আত্মশ্লাঘা অনুভব করা, ঠাট্টার ছলে হুল ফোটানোর বদাভ্যাসের নামই বডি শেমিং। বডি শেমিং একটি মারাত্মক অপরাধ। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো এই অপরাধটি শুরু হয় খুব কাছের মানুষদের দ্বারা। অনেকে হাসতে হাসতেই বলে, তুমি কোন্ গোডাউনের চাল খাও?। অথবা এটাও বলে, দিন দিন হাতি হয়ে যাচ্ছ কেন? এই হাসতে হাসতে বলা কথাগুলোও অপরাধ। 
আপনি একজনকে মানসিকভাবে আঘাত করছেন মানে আপনার পরবর্তী প্রজন্মকেও আত্মবিশ্বাসহীনতায় ঠেলে দিচ্ছেন। আমরা যখন কাউকে শারীরিক গঠন নিয়ে মন্তব্য করি কিংবা উপদেশ দেই, ঐ ব্যক্তি তখন হাসিমুখে কিছু একটা বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে অথবা চুপ থাকে। কিন্তু আপনি এটি বুঝতে পারবেন যখন আপনিও এরকম প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে কাউকে হেয় করে কথা বলা উচিত না।

অনেক দিন পর কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে আমরা অনেকেই প্রথম প্রশ্ন করি এত শুকনা কেন, বা কি খেয়ে এত মোটা হয়েছ? কাউকে কখনোই বডি শেমিং করতে যাবেন না। কালো, মোটা, চিকন, অসুস্থ, বেটে এসব কথাগুলো হয়ত আমাদের কাছে স্বাভাবিক একটা শব্দ মাত্র। কিন্তু যাদের বলা হয় তাদের বুকে যে এই কথাগুলো তীরের মতো বিঁধে, তারা কতটা কষ্ট পায় সেটা বোঝার ক্ষমতা হয়ত আমাদের থাকে না।

নিজের কাছের মানুষগুলোই যখন এসব নিয়ে আলাদা করে দেখে তখন বিষয়টা আরও বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে উপহাসের শিকার মানুষের জন্য। অনলাইনে, অফলাইনে কেউ কাউকে বুলিং, হয়রানি কিংবা ছোট করা উচিত নয়। লম্বা, খাটো, মোটা, চিকন এক কথায় বডি শেমিং করা ঠিক না। এরকম পরিস্থিতিতে কোনো মানসিকভাবে মানুষ একটু দুর্বল হলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। আজকাল অনলাইনে বিষয়টা মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। 
অতিরিক্ত বডি শেমিংয়ের জন্য অনেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মানসিক অসুস্থতা এক সময় অবসাদে রূপ নেয়। বডি শেমিংয়ের কারণে অনেকের পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি এই ধরনের বুলিং, বাজে মন্তব্যের জন্য অনেক তরুণ-তরুণীকে বেছে নিতে হয়েছে আত্মহত্যার পথ ও বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য, যা সত্যি বেদনাদায়ক। 
মহৎ কাজ করা পৃথিবীতে কোনো দিনও সহজ ছিল না। কিন্তু তারপরেও যুগে যুগে অসংখ্য মানুষ স্বেচ্ছায় নিজের লোকসান করে হলেও সঠিক পথটি বেছে নিয়েছেন বলেই আজকে আমরা সবাই এত দূরে এসেছি। এবারে আমাদের অন্যকে পথ দেখাবার পালা। নতুন বছরের শুরুতে আমরা নিজের সঙ্গে অনেক ধরনের কমিটমেন্ট করি। যেমন ভালো কাজ করার, ওজন কমানো বা কোনো কিছু অর্জনের। এই অনেকের সঙ্গে আসুন আরও একটা বিষয় যোগ করি, তা হচ্ছে বডি শেমিং না করা।

মানুষ বৈচিত্র্যময়। আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দের কোনো মাপকাঠি নেই। খুব সহজেই বলে ফেলা যায়, তুমি তো সুন্দর না। কিন্তু খুব সহজে কি একজন সুন্দর মনের মানুষ হওয়া যায়? কারও সামনে বা পেছনে তার শারীরিক গঠন নিয়ে সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন। শরীর খুব ক্ষণস্থায়ী একটি অস্তিত্ব। একজন মানুষের মানসিকতাকে গুরুত্ব দিন। একটি সুন্দর মন পাল্টে দিতে পারে একটি সমাজ। মানুষের মন ভালো করার কাজ যদি অনেক শ্রমসাপেক্ষ ও কষ্টকর মনে হয়, তাহলে সহজ কাজটিই করুন- দয়া করে কারও মন খারাপ করিয়ে দেবেন না। 
 
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

×