ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসিদের প্রতি রাষ্ট্রপতি

-

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

ডিসিদের প্রতি রাষ্ট্রপতি

সম্পাদকীয়

জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদ তাঁর ভাষণে ডিসিদের উদ্দেশে বেশ সময়োপযোগী পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিজে দুর্নীতিমুক্ত থাকবেন এবং অন্যরাও যাতে দুর্নীতির সুযোগ না পায় সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।’ এটা সত্য যে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করলেও এখনো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজ করছে দুর্নীতির বিষবাষ্প। যে যত বেশি ক্ষমতাধর, তার দুর্নীতির হাতও যেন ততটাই লম্বা।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দুর্নীতি দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ব্যবস্থা গড়ে তোলা চাই। রাষ্ট্রপতি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ডিসিরা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন।
জেলার মুখ্য আমলা ও ভূমিরাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে একজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) বা জেলা প্রশাসকের সুনির্দিষ্ট সরকারি কাজ ও দায়িত্ব রয়েছে। আন্তরিকতা, দক্ষতা ও সততার সঙ্গে সব দায়িত্ব পালন করলেই তিনি জেলায় সমাদৃত হয়ে থাকেন, এতে কোনো সংশয় নেই। কোনো জেলা প্রশাসক মানবিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তার সাধ্য ও ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত রাখতে সমর্থ হলে সমাজ উপকৃত হয়।

শুধু অন্তরের তাগিদে মানবকল্যাণ ব্রত গ্রহণের মধ্য দিয়ে মানবসেবার অনন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন নিঃসন্দেহে একজন প্রশাসককে সতীর্থদের মধ্যে স্বতন্ত্র করে তোলে। ফলে, প্রশাসকের সমান্তরালে তিনি সহজেই হয়ে উঠতে পারেন মানবসেবক। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বিশেষ অনুদান, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দসহ শিক্ষা বৃত্তি থেকে গরিব মেধাবী ও দুস্থদের আর্থিক সহায়তা করার সুযোগ সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে একজন জেলা প্রশাসক তরুণ সরকারি আমলাদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে উঠতে পারেন।
জেলা প্রশাসকদের প্রতি প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপ্রধানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ছিল ক্ষমতা প্রয়োগ সংক্রান্ত। দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ যেন না হয়, সেটি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ক্ষমতা হাতে পেলে অনেক সময়েই ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির ভেতরে ক্ষমতার দম্ভ তৈরি হয়। এই দম্ভ ও আত্মম্ভরিতা থেকেই চলে আসে অযাচিত ও মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের  বিষয়টি। এটিকে অপপ্রয়োগ বলাই সমীচীন। যা ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ নীতিকে পুরো উল্টে দিতে পারে। অন্যায়কারী বা অপরাধীরা কোনো করুণা পেতে পারে না। পক্ষান্তরে, অন্যায়ের শিকার মানুষ অবশ্যই প্রতিকার পাওয়ার দাবিদার। সেক্ষেত্রে তাকে অভয় দিতে হবে। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে জাতির অভিভাকসুলভ প্রজ্ঞার প্রকাশ ঘটেছে। বললে ভুল হবে না যে, তার কথায় ছিল বিন্দুতে সিন্ধু ধারণের বৈশিষ্ট্য। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, বিজ্ঞ জেলা প্রশাসকবৃন্দ রাষ্ট্রপ্রধানের কল্যাণকামী বক্তব্যের অন্তর্নিহিত বার্তা অনুধাবন করে সামনের দিনগুলোয় যথাযথ দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকবেন।

×