ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্গোৎসব সর্বজনীন

ড. মিহির কুমার রায়

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২ অক্টোবর ২০২২

দুর্গোৎসব সর্বজনীন

.

প্রতি বছরের মতো এবারও দুর্গোৎসবকে ঘিরে দেশব্যাপী  আনন্দ-উৎসবের ফল্গুধারা বয়ে চলেছে। শরতের শুভ্র আকাশ, কাশফুলে হাওয়ার নাচন আর আগমনী ঢাক-শাঁখের আওয়াজ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। গ্রাম-নগরে ধনী-গরিব ছোট-বড় সবাই মিলিত হন শরতের মহামিলনোৎসবে। এবারের দুর্গাপূজা পড়েছে আশ্বিন মাসে, যা শরত ঋতু হিসেবে পরিচিত। দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও মানবতার সেবায় গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে বস্ত্র ও অন্যবিধ সামগ্রী। সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি জানিয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মের প্রধান অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত এই শারদীয় দুর্গোৎসব, যা বাঙালী  সনাতন হিন্দু  ধর্মাবলম্বীদের  সবচাইতে  বড় উৎসব হলেও এখন  সেটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

কথায় বলে ধর্র্ম যার যার উৎসব সবার। এই ধারণায় বাংলাদেশের সকল বাঙালী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এর আমেজ-আনন্দ উপভোগ করে আসছে কালান্তরে। ওপার বাংলার বারো ইয়ার মানে বারোজন বন্ধুর অপার উৎসাহে যে পূজার শুরু তার নামেই চালু হয়ে গেছে বারোয়ারি তথা সর্বজনীন শারদ উৎসব। বাংলাদেশ ও উভয় বাংলার সীমানা পেরিয়ে এই উৎসব এখন এমন এক রূপ ধারণ করেছে, যার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না।
বাংলাদেশে দুর্গাপূজার ম-পগুলোতে মহাসপ্তমী থেকে মহাদশমী পর্যন্ত বিপুল ভক্তের সমাগম হয়। ২০২১ সালে আঠাশ হাজারেরও বেশি পূজাম-প পারিবারিক ও বারোয়ারিভাবে অনুষ্ঠিত  হয়েছিল। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি ও  ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি সার্বিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকে। দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা খুব জটিল, যা পন্ডিত ও তার সহযোগীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। যেমন- মহাসপ্তমীতে পূজারম্ভ, অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যা আরতি; মহাষ্টমীতে সন্ধী পূজা, কুমারী পূজা (রামকৃষ্ণ মিশন), অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যা আরতি; মহানবমীতে পূজারম্ভ, অঞ্জলি প্রদান, চন্ডীপাঠ, সন্ধ্যা আরতি এবং সর্বশেষ বিজয়া দশমী পূজারম্ভ, দর্পণ বিসর্জন ও শান্তি জল গ্রহণ, সিঁদুর পরানো ও প্রতিমা বিসর্জন।
দুর্গাপূজার ধর্মীয় আচরণের মধ্যে রয়েছে ভক্তিমূলক গান, ভজন, যাত্রাপালা, লক্ষ্মীবিলাস, নৌকাবিলাস, নিমাই সন্ন্যাস ইত্যাদি। আয়োজনের সূচনা হয় দুর্গাপূজার সময় থেকে আর শেষ হয় পহেলা বৈশাখের (১৪ এপ্রিল) অনুষ্ঠানের  মধ্য দিয়ে। এমনিতেই যাত্রাশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে, তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগ সার্বিক আনন্দকে ম্লান করে দেয়। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ে এই পূজার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষত- শিল্পী-কুশলীদের বা সাজসজ্জায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর মধ্যে শারদীয় উৎসবকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে  প্রসার তা এই খাতটিকে উজ্জীবিত করে থাকে। যেমন- ফুল-ফল, ঢাকি, বাদ্য-বাজনা, কাপড়-চোপড় বিতরণ, প্রতিমা সজ্জা, অলঙ্করণ, মুদ্রণ শিল্প, ভোগ্যপণ্য যেমন- চাল, ডাল, শাড়ি ক্রয়-বিক্রয়, মিষ্টি ইত্যাদি। প্রতি বছরই এই দিনটির জন্য ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করে থাকেন, যা দেশের সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক উন্নয়নের  এক অপূর্ব নিদর্শন।
এ বছর দেবীর গজে আগমন ও নৌকায় গমন। ঢাকা শহরের পূজামন্ডপগুলোর মধ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশন, বনানী ও কলাবাগান সর্বজনীন পূজামন্ডপ, সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘ পূজামন্ডপ খামারবাড়ী, শাঁখারীবাজার পূজামন্ডপ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের  মতে এবার সারাদেশে প্রায় ৩২ হাজারের মতো  স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজামন্ডপ স্থাপিত হতে পারে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় মন্ডপের সংখ্যা প্রায় দুইশ’র  মতো।

লেখক : অধ্যাপক, ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য
সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
[email protected]

 

×