ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষক হত্যা- লাঞ্ছনা এবং সমাজের দায়

মমতাজ লতিফ

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ৬ জুলাই ২০২২

শিক্ষক হত্যা- লাঞ্ছনা এবং সমাজের দায়

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদ্যাপিত হয়েছেএটা কিন্তু সেই বাংলাদেশ যেটা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ তরুণ-তরুণী, ছাত্র-শিক্ষক-কৃষক-শ্রমিক দেশকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার বেদীমূলে প্রাণ উসর্গ করার জন্য ছুটে গিয়েছিলসবধর্মের মিলিত লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত দেশটিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে একটি দৃষ্টান্তমূলক সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন

সংবিধানে তিনি তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা- পাকিস্তানী ভাবধারার জামায়াতে ইসলামীর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কুপ্রভাবমুক্ত দেশ গঠনের স্বপ্ন এঁকেছিলেনবঙ্গবন্ধুর ক্ষিপ্র সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং দূরদৃষ্টি তাঁকে দেশকে চিরতরে ধর্মনিরপেক্ষ সাম্প্রদায়িকতামুক্ত আধুনিক উন্নত গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে অনুপ্রাণিত করেছিলআমাদের পরম সৌভাগ্য যে, আমরা যেমন সে সময় লাখ লাখ প্রাণ উসর্গকারী সব ধর্ম-শ্রেণী-পেশার নর-নারী পেয়েছিলাম, তেমনি পেয়েছিলাম নিঃস্বার্থ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এক এক জেলায় এক এক নক্ষত্র

তাদের সহযোগী যারা ছাত্র রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন, তারাও ছিল মেধা ও ত্যাগের প্রতীক স্বরূপসবাই ছিলেন একদিকে অকুতোভয়, অন্যদিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোসহীনমনে পড়ছে- তাদের সবার অকৃত্রিম দেশপ্রেম এবং অতুলনীয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বিশ^াস এবং বাঙালী সংস্কৃতির উদার-ধর্মনিরপেক্ষ বৈশিষ্ট্যের প্রতি গভীর আস্থা, শ্রদ্ধা ও একাত্মতাবোধমনে পড়ছে, স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানী সামরিক শাসকদের উসকানিতে সংগঠিত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর একমুখী হামলা, বসত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ, যার বিরুদ্ধে সে সময়ের প্রগতিশীল আওয়ামী লীগ ও বামরাজনীতির নেতৃবৃন্দ, যুব সম্প্রদায় এবং সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবীদের সশরীরে অকুস্থলে হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য

৬৪ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে পুরো পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী মুসলিম নেতা, ছাত্র যুব, জনতার প্রতিবাদী অবস্থান এখনও মনে পড়েএরপর ৭১-এ মদ ও বাঈজী-নর্তকীপ্রেমী পাকিস্তানী সেনাদের দেশ পাকিস্তানকে ইসলামের ঘরঘোষণাকারী জামায়াতে ইসলাম-এর নেতা গোলাম আজম শুরু করেছিল হিন্দু ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী সমর্থক, প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী হত্যা-হামলা-লুটপাট

প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলাম এ দেশে হিন্দুবিরোধী কট্টর ধর্মান্ধতা ভিত্তিক রাজনীতি চালু করে ৭১-এএরা প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবধারায় বিশ^াসীদের হিন্দুয়ানী ঘেঁষা, কাফের, মুরতাদ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে আক্রমণ করা শুরু করেএরা ধর্ম-নিরপেক্ষতা অর্থা যার যার ধর্ম সে পালন করবে কিন্তু রাষ্ট্র সবার- বঙ্গবন্ধুর এই নীতিকে ধর্মহীনতাশিক্ষা নামাঙ্কিত করে রাষ্ট্রকে এবং সমাজকে ধর্মভিত্তিক করে তুলতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালায়বঙ্গবন্ধুর প্রণীত সংবিধানে যে চারটি মৌলনীতি রাষ্ট্র পরিচালনার শর্ত ছিল, তা তো সবার জানাÑ গণতন্ত্র, বাঙালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র

এখন কথা হচ্ছেÑ যে, জাতির সামান্য অংশ ৭১-এর জামায়াতে ইসলামী, শিবির, আলবদর, আলশামস্্, শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাদ দিয়ে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ সবাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা ও সমর্থক-সহায়তাকারীসেই ৭১-এ আমরা বলেছিলাম- সাম্প্রদায়িকতার কবর রচনা করেছি ৭১-এর বিজয়ের মাধ্যমেএটি সত্যিই ঘটেছিলএরই একটি বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল হিন্দুদের ভূসম্পত্তি, পাকিস্তান আমলে শত্রু সম্পত্তি ঘোষিত হওয়া হিন্দু সম্পত্তি প্রত্যর্পণআইনের মাধ্যমে

কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের স্বাধীন দেশের জনক, স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে দ্রুত বাঙালী জাতি স্বনির্ভর হবার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল যখন, তখন ৭১-এর পরাজিত ধর্মান্ধ পাকিপন্থী সাম্প্রদায়িক শক্তি ও দেশী-বিদেশী চক্রের সঙ্গে মিলে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলতারই ফলে সংঘটিত হয় ৭৫-এর সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা, তাঁর স্বজন হত্যা

এর কয়েক মাস পরেই জেলখানায় বন্দী মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিচালক চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দীন, মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়৭৬ থেকে ৯৬ পর্যন্ত সময়ে দুই সেনা শাসনকালে হিন্দু সম্প্রদায় নতুন করে স্বাধীন স্বদেশে রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক রীতি-নীতির সম্মুখীন হয়৮১-সালে নতুন করে বহু হিন্দুরা নিজ মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়নতুন করে স্বাধীন দেশকে পাকিস্তান বানানোর প্রক্রিয়া ৭৬-এ শুরু হয়ে ৯৫ পর্যন্ত রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম’-এর পাশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিপুনঃ চালু করে শাসকরা

আজ যখন আমরা হিন্দু শিক্ষক হত্যা, হিন্দু শিক্ষক লাঞ্ছনা, অগণিত হিন্দু তরুণের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় জেলে অন্তরীণ হওয়ার চরম অসম্মানজনক তথ্যগুলো পাই, তখন বিভিন্ন কারণে বিস্মিত হইপ্রথমত, হিন্দু ও মুসলমানের ভেদনীতি আমরা শৈশব থেকে এ পর্যন্ত পরিবারে-প্রতিবেশে দেখিনিদ্বিতীয়ত, আমরা পেয়েছি অসাধারণ উদারমনা, দক্ষ, যোগ্য শিক্ষকদেরযাদের অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু

বাবা বলতেন, হিন্দু সম্প্রদায় মুসলমানদের চার-পাঁচ প্রজন্ম আগে থেকে ইংরেজ প্রবর্তিত, রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর এবং ইয়ং বেঙ্গল যুগের প্রবল উসাহে ইংরেজী, বাংলা, গণিত, বিজ্ঞান শিক্ষায় এগিয়ে এসেছিলএ লক্ষ্যে বিদ্যাসাগর সারা বাংলায় পাঠশালা ও প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেনএরই ফলে সে সময় থেকে গ্রামাঞ্চলের হিন্দু জমিদার থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা শহরে ইংরেজী শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেহিন্দু সম্প্রদায় সে সময় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত নানা অফিস ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে মাসিক বেতনের কেরানির চাকরি গ্রহণে উসাহী হয়এরপর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, কলেজে শিক্ষক হিসেবে তারাই প্রধানত বাঙালী হিন্দু এবং পরে এগিয়ে আসা মুসলিম শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করেন

একই কারণে, আমাদের সময়ে মাধ্যমিক স্কুলের ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞানের শিক্ষকরা ছিলেন হিন্দু দিদি ও মাস্টার মশাইরাসমাজে শুধু আমরাই নই, আমাদের বাবা, নানা, মামা, চাচা সবাই এই শিক্ষকদের বসিয়েছেন শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসনেআমাদের বড় ভাইয়েরাও ছিল তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও কৃতজ্ঞএই সামাজিক বেষ্টনীটাই আমাদের শিক্ষকসহ সব শ্রেণী, পেশার হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সুরক্ষা দানকারী দেয়ালএকই সঙ্গে এই সামাজিক মূল্যবোধের বেষ্টনীটি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাাসী প্রগতিশীল মানবতাবাদী বিজ্ঞানমনস্ক নারী-পুরুষকেও, এমন কি ধর্মে অবিশ্বাাসীদেরও সুরক্ষা দান করে এসেছে

আজ নড়াইলে এক শিক্ষক চরম লাঞ্ছনার শিকার এবং আরেক শিক্ষক এক শিক্ষার্থীর বেশে সন্ত্রাসীর পরিকল্পিত আঘাতে নিহত হয়েছেআবার প্রগতিশীল নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ডাঃ রতন সিদ্দিকী ও  তার স্ত্রী, ঘাতক-দলাল নির্মূল কমিটির উত্তরা শাখার সভানেত্রী একদল ধর্মান্ধ উগ্রবাদীর দ্বারা হয়েছেন নিগৃহীত

প্রশ্ন ওঠে- যে দেশে আমাদের লালন, শাহ আব্দুল করিম, হাছন রাজাসহ শত শত লোকসঙ্গীত ¯্রষ্টারা মাঠে, ঘাটে তৃণমূলে অসাম্যের বিরুদ্ধে সাম্যের সঙ্গীত ছড়িয়ে দিয়েছেন, সে দেশ, সে জাতি এত ধর্মান্ধ, উগ্রবাদী হয়ে উঠল কেন ও কিভাবে? সমাজকে পরিকল্পিতভাবে ধর্মান্ধ, উগ্রবাদী অসহিষ্ণু করে চলেছে একদল ধর্ম ব্যবসায়ী ধর্মান্ধ হিংসা প্রচারকারী মোল্লা

তারা কিন্তু শুধু হিন্দু বিদ্বেষী নয়, বরং তারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী আহমদীয়াদেরও প্রবল বিরোধী! এদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে উত্থান ঘটানো হয়েছিল নিজামী-তারেকের উসাহে-প্রণোদনায় হাজার খানেক জঙ্গী জিহাদী গোষ্ঠীতারা উদীচী, সিপিবি, কাজী আরেফ হত্যা দিয়ে শুরু করে ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় দুব্লগার, যুক্তিবাদী বিজ্ঞান মনস্ক লেখক, প্রকাশক, কবি, লালনভক্ত এবং বিদেশী উন্নয়ন সহযোগীদের ওপর হামলা করে হত্যা করেছেএমনকি তারা যাত্রাপালা, গায়ক, যন্ত্রবাদক, সিনেমা হল, বৈশাখী নববর্ষ, মেলা, শিয়াদের মহরমের মিছিলে হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে

২০১৬-এর ১ জুলাই তারা এদেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নে কর্মরত ইতালীয় ও জাপানী উচ্চমানের বিশেষজ্ঞ, আমাদের দেশীয় দুই পুলিশ, তরুণ-তরুণীসহ ২২ জনকে হত্যা করে! নৃশংস এই হত্যাকা- সংঘটিত করে জঙ্গী জেএমবির দ্বারা মগজ ধোলাই হওয়া ইংরেজী শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় পড়য়াদের মাধ্যমে! এই হত্যাকারীরা আমাদের চোখ খুলে দেয়কিছু বিপদগামী তরুণ নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতার শিক্ষাহীন পরিবারে বড় হয়ে মানুষ হত্যা, বিদেশী অমুসলিম হত্যাকে বেহেশতে যাবার পন্থা হিসেবে বিশ্বাস করেছে! এটি একই সঙ্গে পরিবার ও সমাজের চরম ব্যর্থতা

আশুলিয়ায় শিক্ষক উপল কুমারকে যে সন্ত্রাসী হত্যা করেছে, তার সামাজিক পরিচয়- সন্ত্রাসী গ্যাং লিডারতার বাবা-স্বজনরা যারা এই খুনীকে লুকিয়ে রেখেছিল, তারাও অপকর্মে যুক্ত এবং অবৈধভাবে সম্পদ গড়েছেতবে দুঃখ হয়, হত্যাকা- সংঘটিত হবার সময় অন্য শিক্ষক, প্রতিবেশী বা খেলারত শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে ছুটে এলো না কেন? এমনক্ষেত্রে দল বা গোষ্ঠীগত প্রতিবাদই একমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তিকে রক্ষা করতে পারে

সেদিন খেলায় রত দশ-বারোজন ছাত্রীও যদি ছুটে আসত, হৈচৈ করত, তাহলেও এতটা সময় ঐ সন্ত্রাসী পেত নাজানতে পারছি, উপস্থিত অপর শিক্ষক ঐ বেসরকারী কলেজের ম্যানেজিং কমিটির কর্তাব্যক্তির সন্ত্রাসী আত্মীয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ভয় পেয়েছেনভয় পেয়েছে পাড়া-প্রতিবেশী, সম্ভবত ঐ ছাত্রীরাও! কী ভয়ঙ্কর বাস্তবতা!

২০১৬-এর পর সমাজে জঙ্গী-জিহাদীদের উত্থান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছেকিন্তু তাদের স্থান এখন নানা দল-মতের সন্ত্রাসী-গু-া-ধর্ষক-ডাকাত-লুটেরা-দখলদার দুর্নীতিবাজদের দ্বারা দখল হচ্ছেএর প্রভাব শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বরং পুলিশসহ অন্য পেশাজীবীদের ওপরও পড়েছেনতুবা পুলিশের উপস্থিতিতে একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে আগের যুগের চোর-ডাকাতের সমান লাঞ্ছনা-অসম্মান করা কখনও সম্ভব হতো না

আমাদের কাছে এ ঘটনাও পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছেকেননা, তিনি অন্যায় কাজ করতে চাননি এবং ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেনএখন এই সন্ত্রাস-দীর্ণ সমাজে সমাজ যদি সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ না করে, তাহলে সন্ত্রাসী সমাজের মাথায় চড়ে বসে এবং একের পর এক অন্যায় কাজ করতে থাকে সমাজ থেকে কোন বাধা না পেয়েএ জন্য সমাজকে যত রকম প্রতিষ্ঠান আছে সব প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কিন্তু স, ন্যায়বান ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত কমিটি গঠন করতে হবেগ্রামে বা শহরে, সবখানে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে স মানুষের স্থান থাকতে হবেগ্যাং চালিয়ে যে শিক্ষার্থী ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে সে অপরাধে যুক্তসুতরাং শিক্ষার্থী হবার শর্ত সে হারিয়েছে

এখন তো সে খুনীএই খুনী, তার বাবা-স্বজন এবং নড়াইলের শিক্ষক লাঞ্ছনার হোতা, উপস্থিত পুলিশ সবার বিচার পুরো দেশের দাবিসরকারকে দ্রুত ঐ দুই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি স শিক্ষিত ব্যক্তি দ্বারা গঠন করতে হবেগ্রাম-মফস্বলে, শহরে সব স্কুল-কলেজে পরিচালন কমিটি এবং গবর্নিং কমিটিগুলোর মনিটরিং তথা জরিপ করে পদক্ষেপ নিতে হবে

সরকারকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের সবরকম কাজে, সবরকম পেশা, ব্যবসা থেকে দুর্নীতি হ্রাস করতে হবেকারণ, এই দুর্নীতি জাত অর্থই সন্ত্রাসীর জন্ম দেয়সমাজে একজন ন্যায়বান, যুক্তিবোধসম্পন্ন মানুষ পেশীশক্তি ও কালো টাকার কাছে দুর্বল বোধ করবে- এটি কোন মতেই মেনে নেয়া যায় নাতাকে সুরক্ষা দিতে পারার মতো সমাজ নির্মাণ হবে আমাদের সর্বোত্তম উন্নয়ন

জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচারণার মতই সন্ত্রাসী পেশীশক্তির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে সমাজকে স, ন্যায়বান মানুষের রক্ষায় সক্ষম করে তুলতে হবেসমাজের সুরক্ষা বেষ্টনী দুর্বলকে, নারী, সংখ্যালঘুকে রক্ষার উপযুক্ত ও যোগ্য হতে হবেনতুবা সমাজ সন্ত্রাসী-কালো টাকার মালিক-দখলদারদের হাতে চলে যাবেসেক্ষেত্রে আমরা প্রকৃত অর্থেই পরাজিত হব

লেখক : শিক্ষাবিদ

×