ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৫ মার্চ ২০১৯

কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা

কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করার বিষয়টি অমানবিক, দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। তদুপরি কৃষকের নামে মামলা করার বিষয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৫ সালে কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা না করে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করে। তারপরও সেই নির্দেশ মানছে না সরকারী ব্যাংকগুলো। কিছু মামলার নিষ্পত্তি হলেও আবার নতুন করে জারি করে সার্টিফিকেট মামলা। বর্তমানে জনপ্রতি গড়ে ৩০ হাজার টাকা ঋণ আদায়ের জন্য সারাদেশের প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৫ কৃষকের বিরুদ্ধে ঝুলছে সার্টিফিকেট মামলা, যার সূত্রপাত ১৯৯১ সালে। জারিকৃত মামলাগুলোর মধ্যে আবার ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে ১১ হাজার ৭৭২ কৃষকের বিরুদ্ধে, যারা অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে জেল-জুলুমের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অধিকাংশ কৃষকই আবার বর্গাচাষী, যাদের নিজস্ব কোন জমি-জিরাত নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খড়া, বন্যা, পোকামাকড় অথবা অন্য কোন কারণে ফসল মার খেয়েছে তাদের। ফলে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। আবার মামলা রুজু করায় নতুন করে ব্যাংক ঋণও নিতে পারছেন না। সে অবস্থায় অসহায় একজন কৃষকের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। প্রায় পৌনে দু’লাখ কৃষকের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ বেশি নয়, কয়েক শ’ কোটি টাকা মাত্র। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ হিসেবে পড়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে। প্রভাবশালীদের চাপে এবং কিছুটা রাজনৈতিক কারণেও বটে, সরকার তথা ব্যাংকগুলো তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নিতে পারে না। বরং মন্দ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করে তা অবলোপন করে অথবা নতুন করে ঋণ দেয় রিসিডিউলের নামে। দুর্ভাগ্য হলো, কৃষকরা ঋণ পান না নতুন করে। সত্যি বলতে কি তারা ব্যাংকে যেতে সাহস পর্যন্ত পান না। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে কৃষকের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি এখন পর্যন্ত বাংলার কৃষক। খাদ্য ঘাটতির দেশটিকে তারা প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, বিরূপ প্রকৃতি উপেক্ষা করে খাদ্যে প্রায় স্বনির্ভর করে তুলছেন। বর্তমানে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ, শাক-সবজি উৎপাদনে পঞ্চম। মাছ-মাংস-ডিম-দুধ উৎপাদনেও কৃষকের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ দুঃখজনক হলো, এসবের বিনিময়মূল্য তারা তেমন পান না। দেশে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের তেমন স্থিতিশীল ও সমন্বিত বাজার গড়ে না ওঠায় প্রায়ই তারা বঞ্চিত হন ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে। এমনকি অনেক সময় ফসলের উৎপাদন খরচও তাদের ঘরে ওঠে না। সময়ে সময়ে সরকার তথা কৃষি মন্ত্রণালয় তাদের সার-বীজ-সেচ-বিদ্যুত-ডিজেল ইত্যাদিতে কিছু প্রণোদনা দিলেও উৎপাদিত ফসল অথবা পণ্যের যথার্থ বাজারমূল্য না পেলে কৃষক পরিবার-পরিজনসহ বেঁচে থাকে কি করে? ফলে অভাব-অনটন-দারিদ্র্যের কশাঘাত বাংলার কৃষকের নিত্যসঙ্গী যেন। সে অবস্থায় কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়েরের বিষয়টি অনেকটা অর্থহীনও বটে। এ থেকে পরিত্রাণের পথ বের করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। সাধারণ অসহায় নিরীহ কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা কাক্সিক্ষত নয়। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোপরি খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরা এই সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধান বের করতে পারেন।
×