
ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে ঘটে যাওয়া হৃদয়বিদারক বিমান দুর্ঘটনায় নিভে গেল দুই কোমলমতি ভাইবোনের জীবনপ্রদীপ। একদিকে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী, অন্যদিকে শিশু বয়সের উচ্ছ্বাসে ভরা দুটি প্রাণ—নাদিয়া ও নাফিজ—আজ আর নেই। তাদের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা সমাজ ও জাতির জন্যই গভীর বেদনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলামের মেয়ে তাহিয়া তাবাসসুম নাদিয়া (১৩) এবং ছোট ছেলে নাফিজ (৯)—উভয়েই বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়লেও শেষরক্ষা হয়নি। বড় বোন নাদিয়া সোমবার দিবাগত রাত ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর পরের দিন মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাতে ছোট ভাই নাফিজও না ফেরার দেশে চলে যায়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নাদিয়া মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট ভাই নাফিজ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। তাদের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ জয়নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ‘আব্দুল অদুদ হাওলাদার বাড়ি’। শিক্ষিত এ পরিবারটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে অবদান রাখার স্বপ্নে বিভোর ছিল।
ঘটনার সূত্রপাত দিয়াবাড়ির একটি বিনোদন পার্কে অবস্থিত বিমান রাইডের ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে। সেসময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে শ্রেণীকক্ষে থাকা নাদিয়া ও নাফিজের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়। তাদের উদ্ধার করে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হলেও শেষ পর্যন্ত পৃথিবীকে বিদায় জানায় এই দুই শিশু।
ভোলা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া। এলাকায় নেমে আসে নিরবতা। আদরের দুই সন্তানকে হারিয়ে নিথর হয়ে যান বাবা-মা। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলেও সন্তানদের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ফের জ্ঞান হারান তারা। স্বজন ও প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
স্থানীয়রা বলেন, “ওরা ছিল খুবই মেধাবী ও ভদ্র। এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
নাদিয়ার নামাজে জানাজা মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার কামারপাড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়। আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক, সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা শেষ বিদায়ে অংশ নেন। জানাজা শেষে পরিবারের সদস্যরা নাফিজকে দেখতে হাসপাতালে গেলে জানতে পারেন, সেও পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছে।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—বিনোদনের নামে কী ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে নাগরিক জীবন। একটি পরিবারের দুটি নিষ্পাপ সন্তানের এমন মৃত্যুতে দায় কে নেবে? তারা দাবি জানান—নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর ব্যবস্থা ও দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
নুসরাত