
ছবি: সংগৃহীত
প্রযুক্তির দৌড়ে মানুষ যতই এগিয়ে যাক না কেন, ছোট্ট পিঁপড়ার কাছে আমাদের শেখার এখনও অনেক কিছুই রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, চিকিৎসা, কৃষিকাজ এবং প্রকৌশলে বহু আগেই পারদর্শিতা অর্জন করেছিল এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি। সংবাদমাধ্যম দ্য কনভারসেশনের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চমকপ্রদ তথ্য।
একটি ভারী জিনিস একসাথে তোলার সময় আমরা যেমন পরিকল্পনা করি, সমন্বয় করি, লক্ষ্য নির্ধারণ করি—এই সবকিছুর মধ্যেই থাকে জটিল বুদ্ধিমত্তার ছাপ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোনো কথা না বলেই, ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক নিয়েই পিঁপড়ারা প্রতিনিয়ত এই ধরনের কাজ সম্পন্ন করে—আরো দক্ষতার সঙ্গে।
পৃথিবীতে পিঁপড়ার আধিপত্য
পৃথিবীতে পিঁপড়ার সংখ্যা প্রায় ২০ কুইন্টিলিয়ন—আমাদের গ্যালাক্সির তারার চেয়েও বেশি! এরা ছোট হলেও অত্যন্ত সফল জীব। মূলত, তাদের সমাজব্যবস্থা, সহমর্মিতা এবং দলগত কাজের মাধ্যমে তারা গড়ে তুলেছে শক্তিশালী উপনিবেশ।
লংহর্ন পাগলা পিঁপড়া এমনকি আগেভাগেই পথ পরিষ্কার করে দেয় ভারী কিছু নিয়ে আসার আগে—যেন তারা জানে কী আসছে! এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, মানুষের চেয়ে দলবদ্ধভাবে কাজ করতে এরা আরও সফল। বিশেষ করে, যখন মানুষের যোগাযোগের সুযোগ সীমিত ছিল, তখন পিঁপড়ারা দলবদ্ধভাবে আরও দক্ষতা দেখিয়েছে।
কৃষিতে পিঁপড়ার শ্রেষ্ঠত্ব
মানবজাতি কৃষির সূচনা করেছিল আজ থেকে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে। কিন্তু পাতা কাটার পিঁপড়ারা এই কাজ শুরু করেছে প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে! তারা গাছের পাতা কাটে মূল খাদ্য হিসেবে নয়, বরং একটি বিশেষ ছত্রাক চাষের জন্য, যা তাদের মূল খাবার।
এমনকি ফসল বাঁচাতে এরা প্রাকৃতিক কীটনাশকও ব্যবহার করে। তাদের দেহে বসবাসকারী বিশেষ ব্যাকটেরিয়া থেকে উৎপন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে ছত্রাকের রোগ দমন করে।
পিঁপড়ার পশুপালন
অনেক পিঁপড়া প্রজাতি আবার ‘পশুপালক’ হিসেবেও পরিচিত। তারা উদ্ভিদের রস চোষা অ্যাফিড নামক পোকা পালন করে। এই পোকারা যে মিষ্টি তরল নিঃসরণ করে, তা পিঁপড়ারা সংগ্রহ করে। বিনিময়ে, পিঁপড়ারা তাদের শিকারি পোকা থেকে রক্ষা করে।
এমনকি নতুন কলোনি গড়ার সময় রাণী পিঁপড়া মুখে করে এই পোকার শিশুদের নিয়ে উড়ে যায়—এটি অন্তত ২ কোটি বছর আগের আচরণ বলে মনে করা হয়।
চিকিৎসা ও প্রকৌশলেও পিঁপড়ার অবদান
ফ্লোরিডার কাঠ-পিঁপড়া আহত সঙ্গীর পা কেটে ফেলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এতে আহত পিঁপড়ার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। অন্যদিকে, কিছু পিঁপড়া ক্ষত পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক পদার্থ প্রয়োগ করে।
আর্মি পিঁপড়া নিজেদের শরীর জুড়ে সেতু বা মই বানায়। তাদের বাসাও তৈরি হয় হাজার হাজার জীবন্ত পিঁপড়ার দেহে। প্রতিদিন এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়ে নতুনভাবে বাসা গড়ে তোলে তারা।
উইভার পিঁপড়া গাছে পাতা টেনে এনে তা গেঁথে বাসা তৈরি করে। তারা শিশু লার্ভার তৈরি রেশম ব্যবহার করে পাতা সেলাই করে।
ফায়ার পিঁপড়া বন্যায় পড়লে নিজেদের শরীর দিয়ে ভেলার মতো কাঠামো বানিয়ে ভেসে চলে, শত শত কিলোমিটার দূর পর্যন্ত।
আমরা গর্ব করি কৃষি, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু পিঁপড়া এসব দক্ষতা অর্জন করেছিল বহু আগেই। দলবদ্ধভাবে কাজ করার মাধ্যমে পিঁপড়ারা প্রমাণ করেছে—আকৃতিতে ক্ষুদ্র হলেও সম্মিলিত চেষ্টায় অসাধ্যও সম্ভব।
সূত্র: দ্য কনভারসেশন।
রাকিব