ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

বিজিবি জিডি

সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরেই নির্বাচন সহ বাকি কাজে মনোযোগ দেবে বিজিবি

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ১০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৫:৩৯, ১০ জুলাই ২০২৫

সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরেই নির্বাচন সহ বাকি কাজে মনোযোগ দেবে বিজিবি

ছবি:সংগৃহীত

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরই তারা নির্বাচনসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালনে মনোযোগ দেবে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, "জনবলের সংকট একটি আপেক্ষিক বিষয়। আমাদের বর্তমানে প্রায় ৫৭ হাজার জনবল রয়েছে। বাংলাদেশের ৪,৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যার ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এবং প্রতিকূল পরিবেশ রয়েছে। সেই তুলনায় বিজিবির জনবল বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কিছুদিন আগেই উখিয়ায় একটি নতুন ব্যাটালিয়ন রেজ হয়েছে। আরও কিছু জায়গায় ব্যাটালিয়ন রেজ করার প্রক্রিয়া চলছে এবং নতুন নতুন বিওপি (বর্ডার আউটপোস্ট) স্থাপন করা হচ্ছে।"

তিনি জানান, অচিরেই প্রায় ৫,০০০ জনবল বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি বর্তমান সরকার দিয়েছে, যার রিক্রুটমেন্ট ও প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে। এই বাড়তি জনবল ভবিষ্যতে সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের সময়ও ব্যবহৃত হবে।

বিজিবি জিডি আরও জানান, "গতকাল এ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শুধু বিজিবি নয়, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জনবল সংকট কাটানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে জনবল বৃদ্ধি একটি সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।"

পুশব্যাক ও পুশইন পরিস্থিতি

সীমান্তে পুশব্যাক ও পুশইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এটি প্রতিনিয়তই ঘটছে। মাঝে মাঝে দুই একদিন বন্ধ থাকলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আমরা এ বিষয়ে বিএসএফের কাছে নিয়মিত প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। আমাদের পক্ষ থেকে বৈঠকের মাধ্যমে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিএসএফকে বুঝিয়ে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তবে সব ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না। কিছু কিছু জায়গায় এখনো পুশব্যাক চলছে।"

তিনি আরও জানান, বিষয়টি প্রতিরোধে শুধু বিএসএফ নয়, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও একাধিকবার ভারতের হাইকমিশনের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস এবং দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

বিজিবি কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, "বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা পুশব্যাক হয়ে আসছে তারা বাংলাদেশি, যারা কোনো এক সময় ভারতে গিয়েছিল। তবে কিছু ভারতীয় নাগরিক এবং রোহিঙ্গাও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল, এবং অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই বিষয়টি উঠে এসেছে।"

নির্বাচন প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ

নির্বাচনকালীন প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বিজিবি জিডি বলেন, "সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর আমরা সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকার ৮ কিলোমিটারের মধ্যে যেসব ভোটকেন্দ্র রয়েছে সেখানে বিজিবি স্ট্রাইক ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। তবে এটি নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশন বা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।"

তিনি আরও জানান, "যেকোনো বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ, আনসার, কোস্টগার্ডসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই বিষয় নিয়েই গতকাল একটি বৈঠক হয়েছে, যার সভাপতিত্ব করেছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা।"

কাঁটাতারের বেড়া ও সীমান্ত সড়ক নির্মাণ

বিজিবি জিডি জানান, "বাংলাদেশ সীমান্তে আমরা বড় আকারে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করছি না। সীমান্তের কিছু জায়গায় যেখানে গবাদি পশু পাচার হয় সেখানে ‘ক্যাটল ফেন্স’ ব্যবহার করা হয়। আর সীমান্ত সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের ওপর, যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। বিজিবি সেখানে নিরাপত্তা দিয়ে সহায়তা করছে। সীমান্ত সড়কের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্বের কাজ এখন চলমান।"

বিজিবি স্পষ্ট করেছে, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের প্রথম অগ্রাধিকার, এরপরই তারা নির্বাচনসহ অন্যান্য দায়িত্বে অংশ নেবে। জনবল বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বাহিনীটি।

তথ্যসূত্রঃ https://www.facebook.com/100069716172560/posts/pfbid0cunzumDYJxyVGSFCzXD6cR7BBM5XWiGEPAkmp9SSVG8mHmLkM6T1NmLPLJLcF6jnl/?mibextid=Nif5oz

 
 

মারিয়া

×