ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

দেশব্যাপী সকাল সন্ধ্যা  ‘বাংলা ব্লকেড’ 

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ৯ জুলাই ২০২৫

দেশব্যাপী সকাল সন্ধ্যা  ‘বাংলা ব্লকেড’ 

.

সরকারি চাকরিতে যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের ১০ জুলাই সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘বাংলা ব্লকেড’-এর অংশ হিসেবে সারাদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। ঢাকার শাহবাগ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, চাঁনখারপুল, সায়েন্সল্যাব মোড়, আগারগাঁও এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া, গাজীপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম, পাবনা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সর্বোচ্চ আদালত কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনে স্থিতাবস্থা দিলেও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন সকালে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকার সড়ক অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ ও এর আশপাশের প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। তারা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘মেধাভিত্তিক নিয়োগ চাই, প্রতিবন্ধী ছাড়া কোটা নাই’, ‘শিক্ষার্থীদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, মেধাবীদের কান্না, আর না’ সহ নানান স্লোগান দেন। এরপর আগারগাঁও মোড় অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরিগেট এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষার্থীরা বিভক্ত হয়ে মহাসড়কের প্রান্তিক গেট ও এমএইচ হল সংলগ্ন গেট অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে কোটাবিরোধী স্লোগান দিয়ে তারা রাজপথে অবস্থান নেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টা থেকে অবরোধ করে রাখায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একই দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ি ক্রসিং এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। 
আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে রেল থামিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। ক্যাম্পাসের ভেতরে জব্বারের মোড় এলাকায় তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে খুলনা নগরীর খালিশপুর নতুনরাস্তা মোড়ে রেল থামিয়ে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট এলাকায় রেললাইন অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে অবরোধ করেছেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
এদিন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এরপর বেলা বারটায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করে তারা। এখানে জড়ো হয়ে বসে যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কারের দাবিতে স্লোাগান দেয় ছাত্র-ছাত্রীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা গান, কবিতা-আবৃত্তি, নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে চালিয়ে যান।
এ সময় মাইকে বলা হয় আন্দোলনে এক অভিভাবকের সম্মতি দিয়েছেন যা আমদের শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। তার মা নিজে নিয়ে এসে সন্তানকে নিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন। একইসঙ্গে ওই ছাত্রীর মা তাদের খাওয়ার জন্য পাঁচশ’ টাকা দিয়েছেন বলে জানানো হয়। এরই মধ্যে বেলা পৌনে একটা নাগাদ হাইকোর্টের রায়ে আপিল বিভাগ এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছে এ খবর পাওয়া যায়।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে স্থিতাবস্থা দেন। চার সপ্তাহ পর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে। এ সময়কালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকারের দেওয়া পরিপত্র বহাল থাকবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।
তবে শিক্ষার্থীরা জানান, আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা থাকলেও নির্বাহী বিভাগের কাছে এক দফা দাবি। ফলে তাদেরই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বারবার বিভিন্ন পক্ষ আদালতে গেলে সেটা বাতিল বা স্থগিত করা হচ্ছে। পরে আবার হবে না তার নিশ্চয়তা নেই। আমরা কি একমাস পরপর তাহলে রাস্তায় নামব? তাই একবারেই এই সমস্যার সমাধান চাই’। ‘এখন যেহেতু রাস্তায় নেমেছি তাই এটার একটা স্থায়ী যৌক্তিক সমাধান হোক চাই। সেটা নির্বাহী বিভাগের পক্ষেই সম্ভব। জাতীয় সংসদে আইন পাস করে নতুন পরিপত্র করে এটা করতে পারে’ বলেন তিনি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, শুধু দুইটি গ্রেডে নয় বরং সকল গ্রেডে যৌক্তিকভাবে ন্যূনতম কোটা রেখে সংস্কার করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের লেখা সংবলিত ব্যানার নিয়ে এ সময় সমাবেশ করে ছাত্র - ছাত্রীরা। ‘সকল বৈষম্যমূলক কোটা নিরসন করে পাঁচ শতাংশ কোটা বহাল রাখুক। এটা আমাদের এক দফা এক দাবি’। শিক্ষার্থীরা জানান, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর, উপজাতি, প্রতিবন্ধীসহ নানা ধরনের গোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম হারে কোটা রাখতে হবে। অর্থাৎ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এর সর্বজনসম্মত সমাধান দাবি করেন তারা।
 

প্যানেল মজি

×