ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনার গুলির নির্দেশের ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং যেভাবে যাচাই করেছে বিবিসি

প্রকাশিত: ২০:৪১, ৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:৪১, ৯ জুলাই ২০২৫

বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনার গুলির নির্দেশের ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং যেভাবে যাচাই করেছে বিবিসি

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি কথোপকথনের অডিও সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে, যেখানে ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া গত বছরের আন্দোলন দমনে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ অনুমোদন দিতে শোনা যাচ্ছে তাকে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি অডিওটি যাচাই করে জানিয়েছে, এতে শেখ হাসিনাকে নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্দেশে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে শোনা যায়।

গত মার্চ মাসে অনলাইনে প্রকাশিত অডিওটি অনুসারে, আন্দোলনকারীদের “যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে” এমন ভাষায় নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। অডিওতে তাকে কথোপকথন করতে শোনা যায় এক অজ্ঞাত সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ওই আন্দোলন ও সহিংসতায় অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হয়েছিলেন। এখন এই অডিও রেকর্ডিংটিই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন দল।

আওয়ামী লীগের প্রত্যাখ্যান
অবশ্য ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ এ ধরনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

দলের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, “টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কি-না, তা আমরা নিশ্চিত নই।” তিনি আরও দাবি করেন, অডিওটি ‘শেখ হাসিনার বেআইনি কোনও অভিপ্রায় প্রতিফলিত করে না’।

কীভাবে যাচাই করল বিবিসি?
বিবিসি জানায়, ফাঁস হওয়া অডিওটি ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে করা একটি ফোনালাপ। যদিও কে এই রেকর্ডিং ফাঁস করেছে, তা নিশ্চিত নয়। আন্দোলনের পর থেকে শেখ হাসিনার কথিত ফোনালাপের অনেক ক্লিপ প্রকাশ হয়েছে অনলাইনে, তবে তার বেশিরভাগই যাচাই হয়নি।

বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠস্বর শেখ হাসিনার কণ্ঠের সঙ্গে মিল পেয়েছে বলে জানায়।

বিবিসি আরও একটি স্বাধীন অডিও ফরেনসিক সংস্থা ‘ইয়ারশট’-এর সহায়তায় রেকর্ডিংটি বিশ্লেষণ করে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এতে কোনো ধরনের এডিটিং বা পরিবর্তনের প্রমাণ মেলেনি। এমনকি এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি এই সম্ভাবনাও অস্বাভাবিকভাবে কম।

ইয়ারশট জানায়, রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে করা, যেখানে ফোন কলটি স্পিকারে চালানো হচ্ছিল। কারণ রেকর্ডিংয়ে স্পষ্ট টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি ও ব্যাকগ্রাউন্ডে স্বাভাবিক শব্দ শোনা গেছে।

এই অডিওর সত্যতা ঘিরে বিতর্ক চললেও, এটি আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার সরাসরি ভূমিকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় অডিওটি কীভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর ভিত্তিতে কী ফলাফল আসে, তা এখন দেখার বিষয়।


সূত্র:বিবিসি

আফরোজা

×