
ছবি: সংগৃহীত
গত বছরের জুলাই–আগস্টে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন—এমন দাবি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংয়ের ভিত্তিতে।
বিবিসি জানিয়েছে, ওই অডিওতে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা যেখানেই আন্দোলনকারীদের দেখবে, সেখানেই গুলি করবে।” রেকর্ডে হিসাব করা হয়েছে, তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছেন।
অডিও রেকর্ডিংটি একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে তার কথোপকথন বলে বিবিসির সূত্রে জানা গেছে। এই রেকর্ডিং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ, যা নির্দেশ করে যে, তাঁর নির্দেশ ছিল সরাসরি সরকারবিরোধীদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর।
ফাঁস হওয়া ওই রেকর্ডিংটির তথ্য অনুযায়ী, ১৮ জুলাই গণভবন থেকে একটি ফোনকলের সময় এটি রেকর্ড করা হয়েছিল। বাংলাদেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ অডিওর কণ্ঠ শেখ হাসিনার কণ্ঠের সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত করেছে।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, তারা আলাদাভাবে ইয়ারশটের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়ে রেকর্ডিংটি যাচাই করিয়েছে। ফরেনসিক বিশ্লেষণে না-এডিট বা পরিবর্তন হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বরং তারা বলেছে এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি হয়নি।
‘ইয়ারশট’ নামক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যারা মানবাধিকার ও পরিবেশ বিষয়ক অডিও তদন্ত করেন, জানাচ্ছেন—রেকর্ডিংটি হয়তো এমন একটি ঘরে তৈরি হয়েছে, যেখানে ফোনটি স্পিকারে প্লে করা হচ্ছিল। কারণ ব্যাকগ্রাউন্ডে পাওয়া গেছে স্বতন্ত্র টেলিফোন ফ্রিকোয়েন্সি এবং অন্যান্য শব্দ।
ফরেনসিক বিশ্লেষণে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি (ইএনএফ) শনাক্ত হয়েছে। এটি অন্য একটি ডিভাইস দ্বারা রেকর্ডিংয়ে সাধারণত উপস্থিত থাকে এবং ইডিট না-হওয়ার স্বতর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার কণ্ঠে স্বরের ছন্দ, শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বর, পাশাপাশি নয়েজের ধারাবাহিক পরিবেশ—সবই মিলে যে অডিওতে কারো দ্বারা কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা হয়নি তার প্রমাণ দেয়।
ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, “এই রেকর্ডিংগুলো শেখ হাসিনার ভূমিকা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, এদের সত্যতা সুসংহত ও অন্যান্য প্রমাণের দ্বারা সমর্থিত।”
উল্লেখ্য, টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)‑এর পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যেখানে শেখ হাসিনাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান।
শিহাব