
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ১৩০টি দেশে কাজ করে ‘আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহলের প্রেসিডেন্ট ড. মো: আনোয়ার হোসেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রমের আদর্শ ও উদ্দেশ্য, মাদককারবারি কর্তৃক অপহরণ এবং মাদক মুক্ত বিশ্ব গড়তে নারীর ক্ষমতায়নে কর্মজীবী নারীকে হয়রানী না করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
সমসাময়িক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকার প্রদান করে তিনি।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের বড় সমস্যা কি বলে মনে করেন?
উত্তরঃ রশি দিয়ে পাগল বাধা হয়। কিন্তু রশি নিজে যদি পাগল হয়ে যায়, এটাই বড় সমস্যা।
প্রশ্নঃ এই সমস্যা সমাধানের জন্য কি করা উচিত?
উত্তরঃ সব কাজের পূর্বশর্ত সচেতন হওয়া বা সচেতন করা।
প্রশ্নঃ তাহলে কি আদালত, জেলখানাসহ অন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তর বন্ধ করে দিতে হবে?
উত্তরঃ আমরা যে সময়কে স্বর্ণ যুগ বলে থাকি, তখন এ ধরনের আদালত ছিল না। যেমন: হযরত ওমর (রা:) এর শাসনকাল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জজরা ওমর (রা:) এর শাসনকালের কথা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রশ্নঃ সচেতন করলেই যে শুনবে বিষয়টা কি এমন?
উত্তরঃ আমি মনে করি সচেতনতার শক্তি পারমানবিক বোমা হতেও বেশি শক্তিশালী। কারণ পারমানবিক বোমা দিয়ে কেবল ধ্বংসই করা যায়। অথচ সচেতন করে সবকিছুই করা যায়।
প্রশ্নঃ অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি সচেতনতা সৃষ্টি করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
উত্তরঃ আপনি ঠিক বলেছেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সহ অনেক উল্লেখযোগ্য নেতা চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু ওনারা হয়তো স্থান, কাল ও অবস্থা ঠিক রাখতে পারেন নাই। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা করতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু সচেতন করেছেন, ৭ই মার্চ সচেতনতার কথা বলেছেন। তাই পেরেছেন।
প্রশ্নঃ মাদক বিরোধী কাজ করতে গিয়ে আপনি অপহরণের শিকার হয়েছেন, তা কিভাবে?
উত্তরঃ ২০১২ সালের ঈদুল ফিতরের পরে আমি দিনাজপুর যাই। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের দাউদপুর ডিগ্রি কলেজের মাদক বিরোধী কর্মসূচী করে থাকি। ওই কর্মসূচীর পূর্বে মাদককারবারীরা আমাকে প্রায়ই হুমকি দিতো। বিষয়টি আমি দাউদপুরের কর্মসূচীর পূর্বেই সংশ্লিষ্ট থানাকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদানের অনুরোধ করি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি আমলে নিয়ে নিজেই কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করেন। এ কর্মসূচীর পর ঢাকা ফেরত আসি। ঈদের পর আমার সহপাঠিরা ছুটি নিয়ে গ্রামে চলে যায়। একদিন পর আমি সিলেট গমন করি। সিলেট উপশহরে হোটেলে রাত যাপন করি। হোটেল থেকে অন্যত্র যাওয়ার পথে আমি অপহরনের শিকার হই।
প্রশ্নঃ এরপর কি হলো?
উত্তরঃ তারা আমার মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ন্ত্রণে নেয়। আমাকে ভারতে নিয়ে যায়। মূলত তথ্য নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। অভিনব কায়দায় টর্চার করত। তাদের কব্জায় প্রায় ৪ মাস ছিলাম।
প্রশ্নঃ আপনি ভারতে কিভাবে সময় কাটাতেন এবং বাংলাদেশে কিভাবে আসলেন?
উত্তরঃ নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত, পড়াশোনা ও টেলিভিশন দেখে সময় কাটত। তাদের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করি, দ্রুত আমাকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি প্রদান করতে। এক পর্যায়ে ক্লিয়ারেন্স ইস্যু করে।
প্রশ্ন :আপনি কি এই মুহূর্তে নিরাপদ বোধ করছেন?
উত্তর: সকল শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুরোধে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
প্রশ্নঃ আপনার পরিকল্পনা কী?
উত্তরঃ-রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। আমি কিছু প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়েছি যাদেরকে সঙ্গে নিয়ে কার্যক্রম করলে সকল নাগরিকদের প্রত্যক্ষ সংযোগ পাওয়া সম্ভব। তাদেরকে সচেতন করলে তারা এবং তাদের মাধ্যমে পুরো জাতিকে সচেতন করা সম্ভব হবে। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্ষতিকর নেশা (মাদকসহ), ইভটিজিং, যৌতুক ও নারী নির্যাতন বিরোধী আলোচনা, র্যালী, কাউন্সিলিং ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন এবং লিফলেট ও স্টিকার বিতরনের কর্মসূচী করে থাকি। আমাদের সংগঠনটি সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাঅধিদপ্তরের সকল অঞ্চল (বিভাগ), বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত। আমাদের সংগঠনটি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রিকমেন্ডেড।
প্রশ্নঃ সাম্প্রতিক ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহলের সেন্ট্রাল ওয়েবসাইট ২ এ একজন সরকারি কর্মজীবী নারীর বিষয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন?
উত্তরঃ ঊর্মি ফেসবুকে কয়েকটা শব্দ পোস্ট করা মাত্রই বিদ্যুৎ গতিতে ওএসডি, সাময়িক সাসপেন্ড, বিভাগীয় মামলা, একাধিক আদালতে মানহানি মামলা করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে, দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞ প্রদান করা হয়েছে। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ বছর অধ্যয়ন করেছেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। যা কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো পৃথিবীর জন্য বিরল দৃষ্টান্ত। এ অবস্থায় একজন শিশু তুল্য কর্মকর্তা হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নে ঊর্মিকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য সরকারকে সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছি।
ইমরান