ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

উপকূলে তান্ডব, শতাধিক গ্রাম লন্ডভন্ড, বহু মানুষ পানিবন্দি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২৬ মে ২০২৪; আপডেট: ০১:২২, ২৭ মে ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত

রেমালের প্রভাবে বাগেরহাটে ফেরিঘাট তলিয়ে গেছে, আমতলীতে ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, মোরেলগঞ্জে তলিয়ে গেছে বাজার, চরফ্যাশনে কুকরিমুকরি ইউনিয়নের চরপাত

আঘাত হেনেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। রবিবার রাতে উপকূলীয় এলাকায় অতিক্রমের সময় তান্ডব চালায় ঝড়টি। সঙ্গে কয়েকফুটের জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় উপকূলীয় এলাকা। শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লন্ডভন্ড হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে মাঠের ফসল। প্রবল এই ঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির ব্যপক আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ডুবে গেছে গোটা সুন্দরবন। তবে সরকারিভাবে ব্যাপক পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ। তবে উপকূলীয় এলাকায় রাত সাড়ে আটটা থেকে নদীতে জোয়ার সৃষ্টি হওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতি কয়েকগুণ বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে এখন পর্যন্ত দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রবিবার দুপুর থেকেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় রোমলের অগ্রভাগ উপকূল স্পর্শ করে। এসব এলাকায় ঝড়ের কেন্দ্রের আঘাত চলে ৩-৪ ঘণ্টা ধরে। পেছনের যে অংশ আছে সেটির আঘাত  সোমবার দিবাগত মধ্যরাতের দিকে ঘটবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসের জনকণ্ঠকে বলেন, একেক ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবের বৈশিষ্ট একেক রকম। কোন ঝড়ের আগ্রভাগই তা-ব চালায়। আবার কোনো ঝড়ের কেন্দ্র যখন ভূমি অতিক্রম করে তখন অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। আমাদের ধারণা এই ঝড়ের লেজের অংশ বেশি তা-ব চালাতে পারে। কারণ ঝড়ের পেছনের অংশে বড় মেঘ রয়েছে। এসময় বজ্রপাত ও ভারি বৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সুন্দরবন ঝড়ের অগ্নিমূর্তি কিছুটা হলেও রুখে দেবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শামীম আহসান জানান, রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আরও উত্তর দিকে সরে এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। ঘূর্ণিঝড়টির আকার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর অগ্রভাগ আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকেই খুলনা উপকূলের কাছে সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করে। এর প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঝড়টির উপকূল অতিক্রম করতে ৬-৭ ঘণ্টা লেগে যাবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আগমনের আগে থেকেই দেশের সাগর ছিল উত্তাল। নদীগুলোর পানিও বেড়েছে। সে কারণে আঘাতের আগেভাগেই দেশের সব নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এরপরও মোংলায় ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের মধ্যেই চারগুণ যাত্রী নিয়ে চলা ট্রলার ডুবে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঝড়ের আঘাতের আগেই উপকূলের বহুগ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও আকাশপথে বন্ধ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল। এতে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় আটকা পড়েছে কয়েকশত মানুষ। ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ সারাদেশের সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া রিমাল আঘাত আনতে পারে এমন এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করে রাখা হয়েছে। তাই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে, তবে ক্লাস হবে না।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জনকণ্ঠকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল এখনো প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই রয়েছে। এটির ব্যস অনেক বড়। যে কারণে এটি ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। সর্বশেষ এটি ১৫-১৮ কিমি বেগে এগিয়ে চলেছে। সামনে সুন্দরবন হওয়ার কারণে তান্ডবের মাত্রা কম থাকবে। সোমবার দিবাগত ভোর থেকে ঢাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ বুলেটিনে জানায়, উপকূলীয় এলাকায় সাত ঘণ্টা ধরে এর তা-ব চলতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুধু করে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ১-২ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করে সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ৫-৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/ ২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারি (২৮৯ মিলিমিটিার/ ২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হয়েছে। অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হওয়ার সম্ভাবনাও জানিয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হলো।
এদিকে ঝড়ের আগেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্রে ‘চোখ’ অবয়ব দেখা যায়। ফলে এটি ব্যাপক শক্তি নিয়ে উপকূলে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের চোখ কী জানতে চাইলে বিডব্লিউওটির প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেন বলেন, একটি সাইক্লোন যখন সংঘটিত হয় তখন আশপাশের মেঘগুলো ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় থাকে। মেঘগুলো যখন ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসে তখন এর প্রধান কেন্দ্র প্রচন্ড গরম থাকে। গরমের ফলে ওই জায়গায় প্রচন্ড শক্তি তৈরি হয়। এর ফলে নিচ থেকে জলীয় বাষ্পগুলো ওপরের দিকে উঠে আসে। তখন ওপরের জায়গা পরিষ্কার হয়ে যায়। এই অবস্থাকেই ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ তৈরি হয়েছে বলা হয়। এমন অবস্থা তৈরি হলে চারপাশের মেঘগুলো ঘুরে ঘুরে মাঝখানে একটা চোখের মতো অবয়ব তৈরি করে। এটি মূলত একটি শক্তিশালী সাইক্লোনের লক্ষণ।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সেন্ট্রাল পয়েন্টকে কেন্দ্র করে যখন মেঘগুলো আবর্তিত হতে থাকে তখন মাঝখানে একটি চোখের মতো অবয়ব তৈরি হয়। এটিকেই ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ বলা হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষেত্রেও এমন অবয়ব তৈরি হয়েছে। সাধারণত যেসব ঘূর্ণিঝড়ে এমন ‘চোখে’র দেখা পাওয়া যায় সেগুলো শক্তিশালী হয়। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ সমুদ্র উপকূলে আঘাত হেনেছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে মূল কেন্দ্র আঘাত হানে। তবে এরপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমে যাবে তেমনটি নয়। কেন্দ্র অতিক্রম করা শেষ হওয়ার পর এর শেষ অংশও উপকূলসহ তীরবর্তী অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে।
বাগেরহাট ॥ স্টাফ রিপোর্টার,বাগেরহাট জানান, বাগেরহাটে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের মধ্যে মোংলায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা ডুবে গেছে। রবিবার সকালে প্রবল বাতাসে পশুর নদীর মোংলা ঘাটে নৌকাটি ডুবে যায়। এতে এ শিশুসহ ২ জন নিখোঁজ হবার খবরে সেখানে নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের ডুবুরিদল নদীতে তল্লাশি করছে বলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন। মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, পশুর নদীর ঘাটে যাত্রী বোঝাই একটি নৌকা ডুবে গেছে। এটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিলেন বলে শুনেছি। দুর্ঘটনার পর থেকেই খোঁজখবর রাখছি। কেউ নিখোঁজ হয়েছেন কি না জানতে পৌরসভার সিসি ক্যামেরায় দেখা হচ্ছে। সেখানে তল্লাশি চলছে। তবে দুপুর পর্যন্ত কোনো হতাহতের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতের আগেই রবিবার সকাল থেকেই সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় বাগেরহাটে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। জেলার সকল নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের ৪ থেকে ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার কমপক্ষে ৬টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করছে। সুন্দরবনসহ বাগেরহাট, মোংলা ও মোড়েলগঞ্জ পৌরসভাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফেরি ঘাটসহ অনেক স্থানে রাস্তা-ঘাট, ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। এতে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। সকাল থেকে জেলার অভ্যন্তরীণ সকল রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়।  
এদিকে সাগর ফুঁসে উঠেছে। বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় বাগেরহাটবাসী চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী বলেন, জেলায় ৩৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫/১ পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। শনিবার রাত থেকে মোংলা বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে বলে বন্দরের সহকারী গণসংযোগ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম মনির জানিয়েছেন। বন্দরের হারবার বিভাগে খোলা কন্ট্রোল রুম থেকে দুর্যোগ মোকাবিলা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্দরের নিজস্ব নৌযানগুলোকেও নিরাপদে নেওয়া হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব উদ্ধারকারী নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নূরুল করিম বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় সকল বনজীবীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়িগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। অস্বাভাবিক জোয়ারে বনের নি¤œ এলাকা তলিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পটুয়াখালী ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে’র প্রভাবে পটুয়াখালী জেলা শহরসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দুপুরে নদীতে জোয়ারের সময় বাতাসের কারণে পানির উচ্চতা বেড়ে এ সব নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে সাধারণ মানুষ পড়ে ভোগান্তিতে। জেলার কোনো সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে কোনো মানুষ আশ্রয় নেয়নি। অবশ্য স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পটুয়াখালী থেকে অভ্যান্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল যাত্রীবাহী লঞ্চ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ মিটার উচ্চতায় নদনদীতে পানি প্রবাহিত হয়। বাতাসের এমন গতি থাকলে রাতের জোয়ারে পানির উচ্চতা আরও বাড়বে।  এ দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জেলায় মোট ৭৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। মজুত রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন, ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। জেলায় ১৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দুর্যোগের সময় কোথাও ভাঙন দেখা দিলে তা মেরামতের জন্য ১৬ হাজার জিও ব্যাগ রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে মুগ ডাল রয়েছে এবং ২০ হাজার হেক্টর জমিতে রয়েছে বোরো ধান।
কলাপাড়া ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের তা-বে ভেসে গিয়ে রবিবার দুপুরে কাউয়ার চর এলাকার জেলে মো. শরীফ হাওলাদার (২৭) মারা গেছে। তার বাবার নাম আব্দুর রহিম। বাড়িতে অবস্থান কালে তীব্র জলোচ্ছ্বাস তার বাড়িতে হামলে পড়ে।  এক সহযোগীসহ  সে সাঁতরাতে গিয়ে ভেসে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পরে তার মৃতদেহ কাউয়ার চর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ধুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা হাফেজ আবদুর রহমান এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব দেখে কক্সবাজার ছাড়ছেন পর্যটকরা। এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দরে বিমান উঠানামা বন্ধ ঘোষণা করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে দেখা দিয়েছে টিকিট সংকট। কক্সবাজারের কোথাও (কাউন্টার) পাওয়া যাচ্ছে না বাসের টিকিট। জোয়ারের পানিতে জেলার বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। 
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রের পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনার ডেইল, নাজিরারটেক এলাকার কয়েকটি বাড়িতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কক্সবাজারে ৯নং বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে রবিবার  বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার বিমান উঠানামা বন্ধ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে কক্সবাজারে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে বয়ে যায় দমকা হাওয়া। সাগরে পানির উচ্চতা বেড়েছে ৪ থেকে ৫ ফুট। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতপাড়ে। প্লাবিত এলাকার লোকজন ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে।  সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে কাজ করছে সিপিপি, রেড ক্রিসেন্ট ও কক্সবাজার পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবকরা।

×