ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল

এ দেশের এমপিরাও বন্ধু রাষ্ট্রের কাছে নিরাপদ নন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২২ মে ২০২৪

এ দেশের এমপিরাও বন্ধু রাষ্ট্রের কাছে নিরাপদ নন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে এমপিরাও নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।  
ভারতে এমপি হত্যার পেছনে দুর্নীতি বা অন্য কোনো ঘটনা থাকতে পারে বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ও নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সক্ষমতা নেই। একজন এমপি দেশের সাধারণ নাগরিক নয়, তাদের একজন এমপি বিদেশী গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলেন। তা হলে আমরা কি মনে করব? টাকার পাহাড় তৈরি করার কারণে বিদেশের মাটিতে এমন কোনো ঘটনা কি না তা আমরা জানি না।
ফখরুল বলেন, সাবেক সেনা প্রধানকে আমেরিকা থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক, শেইম। দায়ী কে? দায়ী তো বর্তমান সরকারই। তারা সেনাবাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করার জন্য এই ঘটনাটা ঘটেছে। আমরা আগেই বলেছি, এর জন্য দায়ী এই সরকার। সরকারই সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন,
বর্তমান সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো বিকল্প নেইÑ এটাই একমাত্র পথ। 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজিজ আহমেদ সম্পর্কে অনেকবার বলা হয়েছে বিভিন্ন জায়গা থেকে, মিডিয়াগুলো থেকে বিশেষ করে বাইরের মিডিয়া থেকে।   কিন্তু সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শুধু তাই নয়, এখনো যেটা বলা হচ্ছে যে, এটা নাকি রাজনৈতিক কথাবার্তা। এভাবে দেশকে একটা জাতিকে তার মর্যাদা থেকে ধ্বংস করে দেওয়া, তার সম্মান কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।
ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনী হচ্ছে আমাদের  একটা সবচেয়ে ভরসার স্থল, একটা প্রতিষ্ঠান। সেই সেনাবাহিনীকে সরকারের কারণে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়, সেটা কখনোই এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। র‌্যাবের ওপর অতীতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা দেখলাম র‌্যাবের যেসব কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসলো তা থেকে তো সরকার কোনো শিক্ষা নিল না। তাদের মধ্য থেকে একজন পুলিশ বাহিনীর আইজি হলেন যিনি এখনো আইজি আছেন। 
ফখরুল বলেন, যে সরকার গায়ের জোরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে তারা রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা চরম দুর্ভাগ্য শুধু নয়, এটা লজ্জার কথা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, আজকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সূচক যে অবস্থানে গিয়ে পৌঁছেছে, দুর্নীতির ব্যাপারে যে অবস্থানে পৌঁছেছে সেটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, দুঃখজনক। এতে দেশের মাথা নিচু হয়ে আসে।

উপজেলা ভোটে জনগণের কোনো আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে আমি তো জনগণের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখি না। কেউ লক্ষ্যও করছে না কোথায় নির্বাচন হচ্ছে। মিডিয়ায়  দেখছি প্রতিদিন উপজেলা নির্বাচনকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া জনগণের কোথাও এটা নিয়ে কথাবার্তা নেই, কোনো আলোচনা নেই। কারণ, নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপরই মানুষের আস্থা চলে গেছে, এই সরকার সেটা করেছে।  
ফখরুল বলেন, আমাদের খুব কষ্ট হয় যখন দেখি, কিছু কিছু মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করেন না। হয়তো ভয়ে করেন না অথবা বিভিন্ন কারণে করেন না। কিন্তু তারা বিএনপির সমালোচনা করতে একেবারে সিদ্ধহস্ত। খুঁজে খুঁজে বের করছেন কোথায় কি আছে না আছে। তবে জাতির সামনে সেটা কোনো সমস্যা না, জাতির সামনে সমস্য এই সরকার। গোটা জাতি আজকে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

দেশ পরনির্ভরশীল ও নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। আজকে উন্নয়নের নামে গোটা জাতির ওপর সরকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। সরকারের ব্যর্থতার কারণে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে মানুষ যাবে কোথায়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনিকে তার জীবননাশের উদ্দেশ্যে তার গাড়িতে হামলা এবং সেগুনবাগিচায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনুকুল ইসলাম শ্রাবণের ওপরে ছাত্রলীগ হামলা করেছে উল্লেখ করে এ হামলার ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি হামলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলন ও যৌথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, দলের নেতা মীর সরাফত আলী সপু, মনির হোসেন, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের নেতা মামুন হাসান, এম মোনায়েম মুন্না, মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের নেতা আনোয়ার হোসাইন, মহিলা দলের নেতা হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের নেতা হাসান জাফির তুহিন, তাঁতী দলের নেতা আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের নেতা আবদুর রহিম, ওলামা দলের মাওলানা সেলিম রেজা, জাসাসের লিয়াকত আলী, ছাত্রদলের নেতা রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ। 
মানুষের ভোট কেড়ে নিয়েছে সরকার-রিজভী ॥ সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিশ্বমৈত্রী কামনায় জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরাম আয়োজিত শান্তি শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, আগে যাদের ঘরে খাবার ছিল না তারাও এখন কোটি টাকার মালিক। ছাত্রলীগ-যুবলীগ করলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা যায়। 
শোভাযাত্রায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু, জন গোমেজ, দীপেন দেওয়ান, নির্বাহী কমিটির সদস্য  অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, হাবিবুর রশিদ হাবিব প্রমুখ।

সব দলকে আন্দোলন করতে হবে- দুদু ॥  দেশ বাঁচাতে ছোট-বড় সব দলকে আন্দোলন করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, গণবিরোধী শক্তিকে পরাজিত করতে হলে আমাদের নিজেদেরই আন্দোলন করতে হবে। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে  বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। 
আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান মো. ফারুক রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের মহাসচিব অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।

×