ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

এমআরটি-৫ নর্দার্ন লাইনের সঙ্গে যুক্ত হবে আরও তিনটি

ঢাকায় এবার হচ্ছে ইন্টারচেঞ্জ মেট্রোরেল

​​​​​​​ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ০০:০৪, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪

ঢাকায় এবার হচ্ছে  ইন্টারচেঞ্জ  মেট্রোরেল

.

ঢাকায় এবার আসছেইন্টারচেঞ্জ মেট্রোরেল এই ট্রেন ব্যবহার করে পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ মিরপুরে এসে সহজেই উত্তর, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে চলাচল করতে পারবে। উড়াল-পাতাল রেলপথে নির্মিত হচ্ছে দেশের তৃতীয় এই মেট্রোরেল। প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ৩০ হাজার যাত্রী এই ট্রেনে পরিবহন করা যাবে বলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানান। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

প্রকল্প সূত্র জানায়, তৃতীয় মেট্রোরেল ম্যাস ্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন- নর্দার্ন রুটের সঙ্গে এমআরটি লাইন-, এমআরটি লাইন- এমআরটি লাইন- এর সাউদার্ন রুট- এই তিনটি মেট্রোরেলের সংযোগ থাকবে। রাজধানীর সাভারের হেমায়েতপুরে এই মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বছর নভেম্বর এমআরটি- নর্দার্ন রুটের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষ হবে। উড়াল পাতাল পথের সমন্বয়ে এটি হবে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ।

তিন অংশে এই রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে প্রথম অংশ সাভারের হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত পাঁচ দশমিক ছয় কিলোমিটার হবে উড়াল। এই অংশে মেট্রোস্টেশন হবে চারটি। এগুলো হলো- হেমায়েতপুর, বলিয়ারপুর, বিলামালিয়া (মধুমতি) আমিনবাজার। দ্বিতীয় অংশে আমিনবাজারের কিছুদূর পরে গাবতলী থেকে গুলশান নতুনবাজার পর্যন্ত ১৩ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার অংশ হবে পাতাল। এই অংশে স্টেশন হবে নয়টি। এগুলোÑ গাবতলী, দারুস সালাম, মিরপুর-, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান- নতুনবাজার। তৃতীয় অংশে নতুন বাজারের পর থেকে ভাটারা পর্যন্ত আবার উড়ালপথে এই অংশটি নির্মাণ করা হবে। এই অংশে শুধু ভাটারা স্টেশনটি উড়ালপথে নির্মাণ করা হবে।

আন্তঃলাইন সংযোগ মেট্রোরেল এই মেট্রোরেল নির্মাণ শেষ হলে প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। মেট্রোরেল- নর্দার্ন রুটের সঙ্গে অন্যান্য মেট্রোরেলের আন্তঃলাইনের সংযোগ থাকবে। এর মধ্যে গাবতলী স্টেশনে এমআরটি লাইন- সাউদার্ন রুটের সংযোগ থাকবে। তাই রাজধানীর ধানমন্ডি কোনো যাত্রী যদি গুলশান যেতে চায়, তাহলে এমআরটি- এর সাউদার্ন রুটের পাতাল মেট্রোরেল ব্যবহার করে গাবতলী স্টেশন এমআরটি- এর নর্দার্ন রুটে গুলশান যেতে পারবে।

ছাড়া এমআরটি- এর নর্দার্ন পাতাল রুটের সঙ্গে মিরপুর-১০ স্টেশনে এমআরটি- এর উড়াল রুটের সংযোগ থাকবে। ক্ষেত্রে উড়াল মেট্রোস্টেশন মিরপুর-১০ থেকে পাতাল মেট্রোস্টেশন মিরপুর-১০ যাত্রীদের ওঠা-নামার চলন্ত সিঁড়ি লিফটের সুবিধা থাকবে। উড়াল-পাতাল মিরপুর-১০ মেট্রোস্টেশন ব্যবহার করে যে কোনো যাত্রী গাবতলী থেকে মতিঝিল এবং উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে গাবতলী গুলশানে যাতায়াত করতে পারবে। পাশাপাশি এমআরটি- এর নর্দার্ন পাতাল রুটের নতুনবাজার স্টেশনের সঙ্গে এমআরটি- এর পাতাল রুটের সংযোগ থাকবে। তাই নতুনবাজার পাতাল মেট্রোস্টেশন ব্যবহার করে যে কোনো যাত্রী মিরপুর, গাবতলী, ধানমন্ডি  পূর্বাচলে যাতায়াত করতে পারবে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান।

এমআরটি- এর নর্দার্ন রুটের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (সিভিল, আন্ডারগ্রাউন্ড) . মো. মশিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘উড়াল পাতাল রেলপথের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের তৃতীয় মেট্রোরেল ম্যাস ্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন- নর্দার্ন রুট। এই মেট্রোরেলের সঙ্গে এমআরটি লাইন-, এমআরটি লাইন- এমআরটি লাইন- এর সাউদার্ন রুটÑ এই তিনটি মেট্রোরেলের সংযোগ থাকবে। এই মেট্রোরেলের পাতাল রুটের গাবতলী, মিরপুর-১০ নতুনবাজারÑ এই তিনটি স্টেশন ব্যবহার করে যে কোনো যাত্রী তিনটি মেট্রোরেলে চলাচল করতে পারবে। গাবতলী নতুনবাজার পাতাল মেট্রোরেল স্টেশনের সঙ্গে এমআরটি লাইন- এর সাউদার্ন পাতাল রুট এবং এমআরটি- এর পাতাল রুট যুক্ত থাকবে। ছাড়া এই মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ পাতাল স্টেশনের সঙ্গে এমআরটি- এর উড়াল মিরপুর-১০ স্টেশন যুক্ত করা হবে। ক্ষেত্রে মিরপর-১০ এর উড়াল পাতাল স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য লিফট চলন্ত সিঁড়ির সুবিধা থাকবে বলে জানান তিনি।

ব্যয় হবে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ডিএমটিসিএলের সূত্র জানায়, এই মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে। এই মেট্রোরেল নির্মাণে ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে। ডিটেইল ডিজাইনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ছাড়া প্রকল্পের ১১ দশমিক ১০০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।

এই রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি চার লাখ টাকা। বাকি ১২ হাজার ১২১ কোটি ৫১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। হেমায়েতপুর-ভাটারা মেট্রোরেলের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে জাপানের নিপ্পন কোয়েই কোম্পানি লিমিটেড এবং ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড। এজন্য ব্যয় হচ্ছে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

ভবিষ্যতের এই অংশটি আরও সম্প্রসারিত হয়ে ২২ কিলোমিটার বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। ক্ষেত্রে মেট্রোরেলটি হেমায়েতপুর থেকে আরও ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত এবং ভাটারা থেকে আরও ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত বর্ধিত করার পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

বিষয়ে এমআরটি লাইন- নর্দার্ন রুটের প্রকল্প পরিচালক মো. আফতাব হোসাইন খান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মেট্রোরেল- নর্দার্ন রুটের ডিপো উন্নায়ন কাজের জন্য ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই ডিপো নির্মাণ কাজ শুরু মাধ্যমে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গত বছর নভেম্বর এই মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০টি প্যাকেজে নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রোরেল- নর্দার্ন রুটের বিভিন্ন অংশ। ইতোমধ্যে সিপি- প্যাকেজের আওতায় হেমায়েতপুরে ডিপো নির্মাণের ভূমি উন্নয়ন কাজের জন্য গত বছর ২৩ মে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এজন্য জাপানের টিওএ করপোরেশন এবং বাংলাদেশের স্প্রেক্টা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের (জেবি) সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। ছাড়া অন্যান্য প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সকল প্রক্রিয়া শেষ করে চলতি বছরের শেষ দিকে অন্যান্য কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

দিনে প্রায় ১২ লাখ বেশি যাত্রী পরিবহন করবে প্রকল্প সূত্র জানায়, এই মেট্রোরেল নির্মাণ শেষ হলে প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। হেমায়েতপুর-ভাটারা মেট্রোরেলটি ঢাকা সেনানিবাসের ভেতর দিয়ে যাবে। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাসও প্রদান করে সেনাবাহিনী। এজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঢাকা ম্যাস ্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করা হবে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘তৃতীয় মেট্রোরেল হবে ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত। এই মেট্রোরেলটি হবে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে গাবতলী থেকে গুলশান নতুন বাজার পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে পাতাল পথে (মাটির নিচ দিয়ে) বাকি দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে উড়াল পথে। ইতোমধ্যে এই মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে ভূমি উন্নয়ন কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই মেট্রোরেল আরও সম্প্রসারিত হবে। তখন হেমায়েতপুর থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত এবং ভাটার থেকে জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে।

×