ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

আজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

মানবাধিকারের নামে দ্বিমুখী নীতি বিশ্ব মোড়লদের

আজাদ সুলায়মান

প্রকাশিত: ০০:২৯, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

মানবাধিকারের নামে দ্বিমুখী নীতি বিশ্ব মোড়লদের

আজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

ফিলিস্তিনের গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়ে একসঙ্গে ৫০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শত শত শিশুকে হত্যার পর হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই গণকবর দেওয়া হয়। সেখানকার হাসপাতাল অকেজো করে আইসিইউতে থাকা রোগীদেরও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। তাতে দোষ দেখেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মানবাধিকার সংগঠনগুলো। গাজায় ইসরাইলি সেনাদের বর্বরোচিত হামলায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলেও জাতিসংঘ প্রতিবাদ করেনি।
অন্যদিকে ঢাকায় আগুনসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করা হলে, দলীয় কর্মকা-ের আড়ালে নাশকতার দায়ে আটক করা হলে বিশ্বজুড়ে ওঠে নিন্দার ঝড়, মায়াকান্না আর আসে বিবৃতি। কারাবন্দি অপরাধীদের মুক্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন ঢাকার বিদেশী দূতাবাসগুলোর প্রতিনিধিরা। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এ দিনে ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি চায়। যদিও দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ অনুমতির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার হওয়ায় পুলিশের পক্ষে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

বিএনপি এটাকেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধুয়া তুলে বহির্বিশ্বের সহানুভূতি আদায়ের অপচেষ্টা চালায়। এ অবস্থায় সমাবেশের ইস্যু ছেড়ে আজ তারা দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার ফন্দি আঁটছে। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের নামে এমন বৈপরীত্য পরিস্থিতি ও মার্কিনী নিষেধাজ্ঞা জারির আতংকময় পরিস্থিতিতে দেশে আজ ১০ ডিসেম্বর পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। এ বছর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ‘৭৫ বছর পূর্তি’ পালিত হচ্ছে। এ  ঘোষণার মাধ্যমে স্বীকৃত হয় মানবাধিকার সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। জন্মস্থান, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস, অর্থনৈতিক অবস্থা কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে মানবাধিকার সর্বজনীন ও সবার জন্য সমান। প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবেই এসব অধিকার লাভ করে। ঘোষণাপত্রের ৩০টি অনুচ্ছেদে প্রতিটি ব্যক্তির অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্বের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘোষণাপত্র গ্রহণের দিনটি প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ‘মানবাধিকার দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মানববন্ধন, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকা এবং সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। অন্যদিকে, সমাবেশ করার অনুমতি না পাওয়ায় আজ ঘরোয়াভাবে আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ। শিল্প একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটরিয়ামে দিবসটি উপলক্ষে ‘মায়ের কান্না’ ও অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ’ এর যৌথ উদ্যোগে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও এর বিচারের দাবিতে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
এবারের মানববন্ধন কর্মসূচিকে বিএনপি একটু ভিন্নভাবে দেখছে বর্তমান পরিস্থিতিসহ নানা বিবেচনায়। আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন হবে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ প- হওয়ার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের রাজপথে জড়ো করার লক্ষ্যে দলটির ঘোষিত প্রথম কর্মসূচি এটি। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

মানবাধিকার দিবসে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘিরে ৪৩ দিন পর আবার নেতাকর্মীদের মাঠের জমায়েতে ফিরিয়ে আনাই বিএনপির লক্ষ্য। এর মাধ্যমে সরকার ও পুলিশের আচরণ কী হয়, সেটিও দেখা। এর ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে দলটি। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতাদের অনেকে মনে করছেন, যে নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রধান দলগুলো অংশ নিচ্ছে না, সে ধরনের একতরফা নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। 
এসব রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে এবারের মানবাধিকার দিবসের মানববন্ধন কর্মসূচিটি বিএনপিসহ বিরোধীদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারাবন্দি নেতাকর্মীদের স্বজনদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। 
সব বাধাবিপত্তি প্রতিহত করে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে এই মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে নির্যাতনের শিকার, গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধনে উপস্থিত থাকবেন। শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরা নন, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং প্রতিবাদমুখর লোকজনও সরকারের নির্যাতন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন।
এ ছাড়া মানবাধিকার দিবসে বেলা সাড়ে ১১টায় কাওরান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। মানববন্ধন ও আলোচনা সভা করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীও। তবে দলটি কোথায় এ কর্মসূচি করবে, তা গণমাধ্যমকে জানায়নি।
এ ছাড়াও আজ ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠন তাদের স্বজনদের গুম ও নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজধানীতে মানববন্ধনসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে। অন্যদিকে মানবাধিকারের নামে সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতার প্রতিবাদে আলোচনা ও সেমিনার করবে কয়েকটি সংগঠন।

×