ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

দুবাইয়ে কপ-২৮

নবায়নযোগ্য জ্বালানি তিন গুণ করতে চায় ১১০ দেশ

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:০০, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

নবায়নযোগ্য জ্বালানি তিন গুণ করতে চায় ১১০ দেশ

বিশ্বের ১১০টিরও বেশি দেশ চাচ্ছে কপ-২৮ শীর্ষ সম্মেলনে

বিশ্বের ১১০টিরও বেশি দেশ চাচ্ছে কপ-২৮ শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি তিন গুণ এবং জ্বালানি দক্ষতা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য ঠিক করতে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভর দার লিয়েন শুক্রবার এ কথা বলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথম এ বছরের শুরুতে লক্ষ্য ঠিক করার কথা বলেছিল। এরপর কপ-২৮ এর আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, পরে জি-৭ এবং তারপর জি-২০ গ্রুপ এ দাবি করে। খবর বিবিসি ও এএফপির। বিশে^র কার্বন নিঃসরণের ৮০ শতাংশের জন্যে দায়ী জি-২০ ভুক্ত দেশগুলো। দুবাইয়ে জলবায়ু সম্মেলনে ভন দার লিয়েন বলেন, এটি খুবই চমৎকার যে ১১ৃ০টিরও বেশি দেশ এই লক্ষ্য গ্রহণ করেছে।

তিনি আরও বলেছেন, আমি এখন আমাদের সকলকে এই লক্ষ্যগুলোকে চূড়ান্ত কপ-ভুক্ত করার আহ্বান জানাই। কারণ এটি বিনিয়োগকারী ও ভোক্তাদের কাছে একটি কঠোর বার্তা পাঠাবে। ২০১৫ সালে গুরুত্বপূর্ণ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিল্পবিপ্লব কালের আগের পৃথিবীর নিরিখে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে এতে অনেক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর নবায়নযোগ্য জ্বালানি গড়ে ১১ শতাংশ করে বেড়েছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও জ্বালানির অনিশ্চয়তা ২০২৩ সালে এ বাড়ার হার ৩০ শতাংশ হবে বলে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা এক ঘোষণায় বলেছে।

বিশ্ব নেতারা শুক্রবার দুবাইতে জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন সীমিত করার প্রচেষ্টা বাড়ানোর পাশাপাশি আলোচনায় ইসরাইল-হামাস দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রাধান্য দিচ্ছেন। দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি ‘ক্ষয়-ক্ষতির’ তহবিল চালু করতে সম্মত হয়েছেন। এটাই কপ-২৮ সম্মেলনের প্রাথমিক বিজয়। শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা জীবাশ্ম জ্বালানির ভবিষ্যৎ থেকে শুরু করে দীর্ঘ জলবায়ু আলোচনার বিষয়গুলোর ওপর ১২ দিনের জটিল আলোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন। ২০২৩ সাল রেকর্ড উষ্ণতম বছর হওয়ায় বিশ্বের উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কপ-২৮’র সভাপতি তেলসমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সুলতান আল জাবের বলেন, ‘এখন আসল কাজ শুরু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই আমার হাতা গুটিয়ে নেব। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জড়িত থেকে সাহায্য করব এবং বাস্তব কার্যকরী ফল প্রদান করব।’ ক্ষয়-ক্ষতির ঘোষণার পরে এক ‘ইতিবাচক’ ও ‘আশাবাদী’ ভাব সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় তেল সংস্থা এডিএনওসি-এর প্রধান জাবের বলেন, জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনায় ‘জীবাশ্ম জ্বালানির ভূমিকা’ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। মানবাধিকার কর্মীরা জলবায়ুর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে এবং জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের তিন চতুর্থাংশের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে একটি ধাপ বের করে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। বিস্তৃত এক্সপো সিটি দুবাই কমপ্লেক্সে শুক্র ও শনিবার ১৪০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান ও প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন।

ব্রিটেনের রাজা চার্লস তৃতীয় শুরুতে ভাষণ দেন। পরে ব্রাজিল, কেনিয়া, টোঙ্গা ও ইউক্রেনের মতো দেশগুলোর নেতারা আসবেন। আলোচনায় গাজা সংঘাতও স্থান পাচ্ছে। ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শুক্রবার কপ-২৮ সম্মেলনে তিনিও আলোচনায় অংশ নেবেন। ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসেরও বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। তবে তার কার্যালয় বলেছে, তার পরিবর্তে ফিলিস্তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুবাই যাবেন।
এদিকে ২০২৮ সালে ভারতে কপ-৩৩ সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব দেন। খাদ্য উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশই জলবায়ু সংকটে ঝুঁকির মুখে আছে বলে গবেষণায় দেখা গেলেও একই সময়ে খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। তাই এবারের কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনে ১৩৪টি দেশের নেতারা প্রথম এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ঘোষণাপত্রে সই করেছেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ব্রাজিলসহ অন্য যেসব দেশ বিশ্বে খাবারের ৭০ শতাংশ উৎপাদন করে তারা প্রত্যেকেই জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে নিজেদের জাতীয় পরিকল্পনায় খাদ্য ও কৃষি খাতকে বিবেচনায় নেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বন উজাড় হওয়া, নগরায়ণ, জমিতে সারের ব্যবহারের মতো কর্মকাণ্ড থেকে বিশ্বে এক পঞ্চমাংশেরও বেশি কার্বন নিঃসরণ ঘটে। ২০১৫ সালে এক হিসাবে দেখা গিয়েছিল, খাদ্য ব্যবস্থা বিশ্বে প্রায় এক তৃতীয়াংশ উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। খাদ্য ও কৃষি খাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হয় ১৮শ’ কোটি টন। কৃষি সংগঠনগুলো কপ২৮ সম্মেলনের ওই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে দেশগুলোকে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে বলেও সতর্ক করেছে।

×