ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বিশ্ব বসতি দিবস আজ

অপরিকল্পিত নগরায়ণে ঝুঁকির মধ্যে মেগাসিটি ঢাকা

​​​​​​​ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ০০:৫১, ২ অক্টোবর ২০২৩

অপরিকল্পিত নগরায়ণে  ঝুঁকির মধ্যে  মেগাসিটি ঢাকা

.

বিশ্ব বসতি দিবস আজ সোমবার। বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্যস্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৮৫ সালে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে দিবসটি পালন করছে সারাবিশ্ব

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্ব বসতি দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে গৃহায়ণ গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে আজ সকাল ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন গৃহায়ন গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

সূত্র জানায়, অপরিকল্পিত নগরায়ণ বসতি নির্মাণের কারণে ঝুঁকির মধ্যে আছে মেগা সিটি ঢাকা। বাসযোগ্যতার বিবেচনায় তলানিতে অবস্থান করছে জনবহুল এই শহরটি। কারণ নগর পরিকল্পনার মানদ- অনুযায়ী নেই প্রয়োজনীয় সড়ক অবকাঠামো, সবুজ এলাকা, খেলার মাঠ জলাশয়। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকায় বসবাস করেন। জনশুমারি গৃহগণনা ২০২২-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি এখন ঢাকা বিভাগে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ঢাকায় দুই হাজার ১৫৬ জন মানুষ বসবাস করেন।

তাই জনসংখ্যা বিবেচনায় ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হলে আবাসিক ভবনে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সবুজায়নের মাধ্যমে পরিকল্পিত নগরায়ণের পরামর্শ নগর পরিকল্পনাবিদদের। ঢাকা মহানগরীতে মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আয়ের লোকদের আবাসন চাহিদার প্রকৃত বিশ্লেষণের পাশাপাশি আবাসনের অনুষঙ্গ হিসেবে বিদ্যালয়-হাসপাতাল-কমিউনিটি সেন্টারসহ প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধাদি, সড়ক অবকাঠামো, খেলার মাঠ, পার্কসহ বিনোদন সুবিধা, মৌলিক পরিষেবা প্রভৃতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে আবাসনের চাহিদার ভিন্নতাকে মাথায় নিয়ে বিবিধ ধরনের বিভিন্ন আকারের আবাসিক ইউনিট তৈরি করা দরকার। ঢাকা মহানগরীর আবাসনের সংকট মূলত নিম্ন  নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য অত্যন্ত তীব্র হওয়াতে আবাসন পরিকল্পনায় স্বল্প আয়ের আবাসনকে বিশেষ প্রণোদনা প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করে তারা।

বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক . আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘মানসম্মত আবাসন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকার হলেও আবাসনের ক্ষেত্রে বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগর এলাকার নি¤œ মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তদের আবাসন সুবিধা বসত এলাকার সংকটে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ অল্প। শুধুমাত্র বেসরকারি খাতের মুনাফাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কৌশলের ওপর আবাসন খাতকে ছেড়ে দিয়ে টেকসই নগর জনবসতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বিগত সময়ে আমাদের অবকাঠামোগত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, এখন আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নে সরকারের আবাসন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক আবাসন নিশ্চিত করতে সঠিক নীতি, কৌশল কর্মপরিকল্পনা দরকার।

রাজউকের প্রধান নগরপরিকল্পনাবিদ ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আশরাফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘পরিকল্পিত আবাসন নির্মাণের জন্য ড্যাপের বিকল্প নেই। ঢাকাকে কার্যকরী বাসযোগ্য মহানগরী হিসাবে গড়ে তুলতে প্রণয়ন করা হয়েছে ড্যাপ বা ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা। ড্যাপের মহাপরিকল্পনায় নিম্ন  নিম্ন মধ্যবিত্তের সাশ্রয়ী আবাসন ব্যবস্থার লক্ষ্যে পরিকল্পনায় মোট ৫৮টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় সাশ্রয়ী আবাসন পদ্ধতিতে স্বল্প আয়ের মানুষ সাধ্যের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি কিস্তির মাধ্যমে নিজস্ব আবাসের মালিক হওয়ার সুযোগ পাবেন।

আবাসন শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন অপরিকল্পিত নগরী ঢাকাকে বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঢাকায় বিদ্যমান ছোট-বড় ২৬টি সংস্থার সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক যথাযথ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যথায় বর্তমান ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সংস্থার অসমন্বিত কার্যক্রম চলমান থাকলে দিনের পর দিন ঢাকা নগরীতে জনদুর্ভোগ আরো বিপজ্জনক আকার ধারণ করবে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, একটি বাসযোগ্য নগরীতে ২০ শতাংশ রাস্তা, ১৫ শতাংশ উন্মুক্ত স্থান, ২৫ শতাংশ জলাশয় এবং ৪০ শতাংশ স্থাপনা থাকা প্রয়োজন। সে বিবেচনায় ঢাকার অবস্থান খুবই অপ্রতুল। এই লক্ষ্যে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণপূর্বক তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি।

তাই ঢাকাকে এভাবে একতরফাভাবে বাড়তে দেওয়া ঠিক নয় বলে মনে করছেন পরিকল্পনাবিরা। তাদের মতে, নগরায়ণ অর্থনৈতিক বিনিয়োগের বিকেন্দ্রীকরণ করে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহর জেলা শহরগুলোকে সুযোগ দেওয়া উচিত। জেলা শহরগুলোকে আরও শক্তিশালী করা দরকার। প্রতি জেলায় শিল্পায়ন কতটা সম্ভব তা বলা মুশকিল। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে আবাসন শিল্পের বিকেন্দ্রীকরনের পরামর্শ পরিকল্পনাবিদদের।

সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ঢাকায় বিদ্যমান সিরিয়াস বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে অত্যধিক জনসংখ্যা, যানজট, জলাবদ্ধতা, গ্যাস, পানি ইত্যাদি অন্যতম। এই সিরিয়াস সমস্যাগুলো উত্তরণের লক্ষ্যে গভীর গবেষণার মাধ্যমে সমস্যার কারণসমূহ চিহ্নিতপূর্বক বিভিন্ন সংস্থাকে একত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। যানজট সমস্যার সঠিক কারণসমূহ চিহ্নিতপূর্বক ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, সড়ক বিভাগ বাংলাদেশ পুলিশকে পরস্পর সমন্বিতভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ঠিক একইভাবে অন্য সমস্যাবলি সমাধানের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাকে যৌথভাবে কাজ করা জরুরি।

বিদ্যমান সমস্যাবলি সমাধানের নিমিত্তে এবং বাসযোগ্য নগরী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাস্তা, ফুটপাত, ড্রেন, খাল নদী পুরোপুরি দখলমুক্ত করে বহুমুখী ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসা এবং পুনরায় যেন দখল না হয় সে লক্ষ্যে যথাযথ তদারকির বিষয়টি ধারণ নিশ্চিত করা। এই সামগ্রিক কাজটি বাস্তবায়নের জন্য সবে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক যায়, কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পার্ক, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থানসহ অন্যান্য পর্যাপ্ত সে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকল্পে বাস্তবমুখী বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে

নগরীয় এলাকার ভেতরে যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রম ভিন্ন (ব্যক্তিগত/সরকারি) পরিকল্পিতভাবে গ্রহণ করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ পরতে হবে। উত্তরণের লক্ষ্যে নিবিড় গবেষণাপূর্বক সমস্যার সঠিক কারণ চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে জরুরি ভিত্তিতে একত্রে বাস্তবমুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাস্তায় জনদুর্ভোগ কমানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থাকে সমন্বিতভাবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করার পরামর্শ নগর পরিকল্পনাবিদদের।

×