ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২৫ মার্চ ২০২৩

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

মাহে রমজানুল মোবারকের আজ তৃতীয় দিবস

মাহে রমজানুল মোবারকের আজ তৃতীয় দিবস। সারাটা দিনরাতই নির্দিষ্ট ইবাদত ও নিয়মে রোজাদারকে অতিবাহিত করতে হয়। তাই আমাদের কতিপয় বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। ইসলামি শরীয়ত মতে, সিয়াম সাধনা বা রোজার রয়েছে তিনটি রোকন বা ফরজ। যেগুলোর প্রত্যেকটি রোজা সহীহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য অপরিহার্য শর্ত। সে ফরজ তিনটি হলো যথাক্রমে- বিরত থাকা, নিয়ত করা এবং নির্দিষ্ট সময়ে রোজা রাখা। এ বিষয়গুলোতে রোজাদারের কোনোমতেই শৈথিল্য প্রদর্শন চলবে না। কারণ এই তিনটি বিষয়ে শৈথিল্য মানেই নিজের উপবাসব্রতকে নিরর্থক করে দেওয়া। 
প্রথমত, বিরত থাকা অর্থাৎ পানাহার, জৈবিক চাহিদা মেটানো ও অন্যান্য রোজা ভঙ্গকারী বিষয়াদি থেকে নিজেকে বিরত রাখা। 
দ্বিতীয়ত, নিয়ত করা। এখানে নিয়ত করা অর্থ হলো আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন বা তাঁর নির্দেশ পালনার্থে রোজা রাখার আন্তরিক সংকল্প পোষণ করা। হজরত রাসুলে খোদা (স.) বলেন: যাবতীয় কার্যাবলী নিয়তের দ্বারাই মূল্যায়ন করা হয়। - (বুখারী ও মুসলিম)। যদি ফরজ রোজা হয় তাহলে রাতে ফজরের পূর্বে নিয়ত করতে হবে। নবীজী (স.) বলেছেন : যে ব্যক্তি রাত থেকে রোজার নিয়ত না করবে, তার রোজা হবে না। - (আবু দাউদ, তিরমিজী ও অন্যান্য)।

আর যদি রোজা নফল হয়, তাহলে ভোর হওয়ার পর এমনকি সূর্য উপরে ওঠার পরও নিয়ত করলে চলবে, যদি সে পর্যন্ত কিছু না খেয়ে থাকে। উম্মুল মুমেনীন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন: একবার সকালে রাসূল (স.) এসে বলেন, তোমাদের মাঝে খাওয়ার কিছু আছে? আমরা বললাম ‘না’। তিনি বললেন, তাহলে আমি রোজা রাখলাম।’ - মুসলিম। অবশ্য ফিকাহবিদগণ যেসব ব্যক্তি রমজানে সেহরির পর নিয়ত করতে ভুলে যান তাদের জন্য সকালবেলায়ও নিয়ত করার সুযোগ রেখেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, শেষ রাতে ওঠা, সেহরি খাওয়াও এক ধরনের রোজার নিয়ত ও সংকল্প। 
তৃতীয়ত, সময়। আর নির্দিষ্ট সময় বলতে রমজান মাসের দিন ভোর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আল্লাহপাক বলেন: তোমরা পানাহার কর, যতক্ষণ না অন্ধকার থেকে সাদা আলোকচ্ছটা দেখা যায়। অতঃপর রাত্রি পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর।’ (সূরা বাকারা - ১৮৭)। বরকতের জন্য রোজার সূচনা সময়ে রয়েছে সেহরি এবং সমাপনীতে রয়েছে ইফতার গ্রহণের নিয়ম ও আনুষ্ঠানিকতা। রোজার সঙ্গে সময় ও চাঁদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। নবীজী বলেছেন: ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখা শুরু কর এবং চাঁদ দেখেই ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি নাও। আর যদি চাঁদ না দেখ, তাহলে ৩০ দিন পূর্ণ কর।’ (তিরমিযী)।

একই সঙ্গে হাদীস শরীফে আঞ্চলিক পর্যায়ে চাঁদ দেখার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ, চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ওপর যদি নির্ভর করা হয়, তা যে কোনকালে নিরবচ্ছিন্ন ইবাদত বন্দেগীর পরিবেশ বিঘিœত করে বিপর্যয়, বিশৃঙ্খলা ও হাঙ্গামা নিয়ে আসতে পারে। আল্লাহ তায়ালা স্বাভাবিকতা ও সাধ্যের বাইরে কাউকেই কষ্ট দেন না। এজন্য রোজা আদায় ওয়াজিব হওয়ার দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এক- সুস্থ থাকা, দুই- মুকিম হওয়া। মুসাফির বা ভ্রমণকালীন অবস্থায় না থেকে নিজ এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপনকারী হওয়া। 
আল্লাহপাক আমাদেরকে কঠিন উপবাসব্রত পালনকে তার রেজামন্দি হাসিলের এবং আমাদের দুনিয়া আখিরাতে কল্যাণের জন্য কবুল করে নিন আর এ মাসে দিনভর সিয়াম ও রাতভর ইবাদত রিয়াজতের বিনিময়ে বিশ্ব সমাজে শান্তি দান করুন।

×