ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যারা উন্নয়ন দেখে না, তাদের চোখ নষ্ট: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৩:০০, ২৬ নভেম্বর ২০২২

যারা উন্নয়ন দেখে না, তাদের চোখ নষ্ট: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যারা উন্নয়ন দেখে না, তাদের চোখের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চোখে দেখে না, হয় তাদের চোখ নষ্ট, তারা চাইলে ডাক্তার দেখাতে পারে। আমরা একটা আধুনিক চক্ষু ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। আর চোখ থেকেও অন্ধ হলে তো কিছু করার নেই।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের ১ম টিউবের পূর্তকাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মনটাই পড়ে আছে চট্টগ্রামে। যদি নিজে গিয়ে টানেলের টিউবটা দেখে আসতে পারতাম, খুশি হতাম। তবে আল্লাহ সুস্থ রাখলে আসবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা কেন বাংলাদেশের উন্নতি করতে পারেনি? এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তারা মানুষের ভাগ্য বদলাতে চায়নি। নিজেরা ভোগ বিলাসে ব্যস্ত ছিল। 

তিনি বলেন, আজকে চট্টগ্রামের সঙ্গে কথা বলছি, অনেক নেতা আমাদের মাঝে নাই। আমাদের প্রয়াত নেতারা মুক্তিযুদ্ধে বিরাট অবদার রেখেছেন। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, এক টাকাও রির্জাভ ছিল না। খাদ্য ছিল না। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তিন বার ভোট দিয়ে আমাদের ক্ষমতা এনেছিল বলে আমরা সার্বিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। 

সরকারপ্রধান বলেন, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলকে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন জাতির পিতা। সেই সময় জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা সে সময় পরিচয় দিতেই ভয় পেতেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটা টানেল হয়েছে দেখে এখনই উদ্বোধন করছি না। আমার ইচ্ছা ছিল দেখার যে, কেমন হলো। মনটা পড়ে রয়েছে চট্টগ্রামে। দ্বিতীয় টিউবের কাজও শেষ; সামান্য কাজ বাকি। বিরাট কাজ বলে মনে করি। টানেল নির্মাণে যারা জড়িত, সবাইকে ধন্যবাদ।

তিনি বলেন, বিরোধীরা সরকারের উন্নয়ন দেখতে পায় না, তাই তাদের চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে। আমরা অনেক ভালো আই ইন্সটিটিউট করে দিয়েছি। আমি বলব তাদের সেখানে চোখের ডাক্তার দেখাতে। তারা উন্নয়ন দেখতে পায় না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, আমাদের অপজিশন বোধহয় চোখ থাকতে অন্ধ। তারা দেখেও না দেখার ভান করে। নিজেরা কিছু করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কিছু করতে পারবে না। দেশকে কিছু দিতেও পারবে না। হ্যাঁ, ক্ষমতায় বসে নিজেরা খেতে পারবে। অর্থ চোরাচালান করতে পারবে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানি করতে পারবে। অর্থ-অস্ত্র চোরাচালানি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ; এগুলো পারবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। এটা হলো বাস্তবতা।

উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। কৃষি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, নতুন নতুন বীজ উদ্ভাবন করা হচ্ছে, উৎপাদন বাড়ছে। আমাদের যার যতটুকু জমি আছে কিছু না কিছু উৎপাদন করতে হবে। তাহলে আমরা অর্থনৈতিক মন্দার আঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারব। 

তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী একটি জাতি। আমরা বিশ্বের কাছে হাত পেতে, ভিক্ষা চেয়ে চলব কেন? বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব।

চট্টগ্রামে স্থাপিত টানেলের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর তলদেশ থেকে টানেল বিদেশে দেখেছি। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই প্রথম। চট্টগ্রাম এক সময় অবহেলিত ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ব্যাপক কাজ করেছি। টানেল স্থাপনের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আব্বা (বঙ্গবন্ধু) জীবিত থাকতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার নিয়ে যেতেন। জীবনে অনেকবার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে গিয়েছি। যার কারণে চট্টগ্রামের প্রতি আলাদা একটা টান আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে গ্রহণ করে। অথচ আমাদের আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এ দেশের উন্নয়ন চায়নি। যার ফলে দেশটা এগোতে পারেনি। গত ১৪ বছরে এ দেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিই করেছি।

তিনি বলেন, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি করেছি। এতে অনেক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করেছি। কিছুদিন আগে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছি, নিজস্ব অর্থায়নে আমরা যে পারি তা দেখিয়ে দিয়েছি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করেছি। এটা চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন সাহেবেরও দাবি ছিল।

টানেল নির্মাণের ঋণ প্রস্তাব প্রথমদিকে চীন নিতে চায়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন সফরে আমি খেতে খেতে চীনের প্রধানমন্ত্রীকে এই প্রস্তাবটা ফের দেই। তিনি খাওয়ার টেবিলেই রাজি হয়ে যান। আমাদের টিমের সদস্যরা খাবার না খেয়েই বের হয়ে গিয়ে (প্রস্তাব) রেডি করে। পরে এটির চুক্তি স্বাক্ষর হয়। আমি তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ।

এসআর

×