ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব শুরু আজ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব শুরু আজ

উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব

প্রতিমা তৈরি শেষ। বাহারি রং চড়েছে প্রতিমার গায়। নিপুণ শিল্পী তার তুলির আলতো ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলেছেন ত্রি-নয়নী মা দুর্গাকে। জেগে উঠবেন সরস্বতী। গণেশের গায় উঠেছে নক্সিদার কুচির দুধসাদা ধুতি। মা লক্ষ্মীর হাসি ঝরে পড়ছে ম-পগুলোতে। আজ শনিবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে খুলে যাবে মা দুর্গার সিগ্ধ শান্ত চোখ। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পূজারীকে। আগামীকাল রবিবার মহাসপ্তমী থেকে পূজাম-পে দর্শনার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা দেবেন মা দুর্গার পাদপদ্মে।
রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় স্বায়ংকালে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠীপূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চ-ীপাঠে মুখরিত থাকবে সকল ম-প এলাকা। পাঁচদিনের এ উৎসব শেষ হবে আগামী ৫ অক্টোবর বুধবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। তবে গত বছরের সহিংসতার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারের দুর্গাপূজাকে ঘিরে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুধবার বিসর্জন পর্যন্ত এই পাঁচদিন দেশজুড়ে থাকবে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
করোনা মহামারীর কারণে গত দুই বছর স্বাত্ত্বিক পূজা-অর্চনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল দুর্গাপূজা। তবে এবার সেই সীমাবদ্ধতা কেটেছে। ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি পূজাম-পে এবার উদযাপিত হবে শারদীয়া দুর্গোৎসব। গত বছরের চেয়ে এবার ৫০টি বেশি ম-পে পূজা হবে। সব ম-পেই নিরাপত্তা নিয়ে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। থাকছে কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।
ঢাকা পূজাম-পগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ কারিগর রঙের পর অলঙ্কার এবং সাজসজ্জায় দেবীর পরিপূর্ণ অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছেন। কিছু ম-পে রং আর সাজসজ্জার কাজটিই কেবল বাকি আছে। তবে শুক্রবার রাতের মধ্যেই দেবী দুর্গা তার পরিপূর্ণ সাজে হাজির হবেন ম-পে। আজ শনিবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনি, আর ভক্তকূলের আবাহনের মন্ত্রোচ্চারণে দেবী দুর্গার স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আগমন ঘটেছে। পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, মন্দিরে মন্দিরে ধূপ-ধুনোয় ভক্তদের নৃত্য আরতি, আর ঢাক-ঢোল, কাঁসর-মন্দিরার পাশাপাশি মাইকের আওয়াজ আর বর্ণাঢ্য আলোকচ্ছটায় সারাদেশের পূজাম-পগুলো উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।

দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে দুর্গতিনাশিনীর আগমন আনন্দে বিহ্বল বিশ্বের কোটি হিন্দু সম্প্রদায়। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা পৃথক বাণীতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শনিবার সারাদেশের পূজাম-পগুলোতে দুর্গা দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিন্দ্রা ভাঙ্গানোর জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। ম-পে-মন্দিরে পঞ্চমীতে স্বায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাকা-ঢোল, কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ম-প।
পুরাণমতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লঙ্কা যাত্রার আগে শ্রী রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরতকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরতকালের পূজাকে এজন্যই হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়।
সনাতন পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতি) চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসবেন। যার ফল হচ্ছে শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা। যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন নৌকায় করে। ফল শস্যবৃদ্ধি।
এ বছরের দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী আজ ১ অক্টোবর শনিবার ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

আগামীকাল ২ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ৩ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা এবং ৪ অক্টোবর মহানবমী শেষে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের শারদীয়া দুর্গোৎসব।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজাম-পের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ম-পে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ম-পে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজাম-প, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের দুর্গাম-প, সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ী, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন ম-প, রাজারবাগের বরোদেশ^রী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান পূজাম-প, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির, পুরান ঢাকার অভয়নগর দাস লেনের ভোলানন্দগিরি আশ্রম, রাধিকা বসাক লেন, নবেন্দ্র বসাক লেন, ঢাকেশ^রীবাড়ী, শাঁখারীবাজারের পান্নিটোলা, টিকাটুলীর প্রণব মঠ, ঠাঁটারিবাজার পঞ্চানন শিব মন্দির, সূত্রাপুরের ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, বনগ্রাম তরুণ সংসদ, ওয়ারী সার্বজনীন পূজা কমিটির ম-প, ফরাশগঞ্জ জমিদার বাড়ী, বিহারীলাল জিও মন্দির, মতিঝিলের অরুণিমা সংসদ পূজা কমিটির ম-পসহ বিভিন্ন মন্দির ও ম-পে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

×