ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট চূড়ান্ত, আগামীকাল উত্থাপন ॥ ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বিএনপি সদস্যের

ইসি গঠনের বিলে দুই পরিবর্তনের সুপারিশ

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

ইসি গঠনের বিলে দুই পরিবর্তনের সুপারিশ

সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত বিলের দুটি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে সংসদীয় কমিটি। এই পরিবর্তনের ফলে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে সাজাপ্রাপ্ত হলেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) পদে অযোগ্য হবেন। আর সিইসি-ইসির যোগ্যতায় সরকারী, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারী বা বেসরকারী পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ যুক্ত হয়েছে। বিল সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন কমিটির বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, শামসুল হক টুকু, আব্দুল মজিদ খান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, রুমিন ফারহানা ও সেলিম আলতাফ জর্জ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কমিটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন ধারায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংসদে উত্থাপিত বিলের ৫(গ) ধারায় বলা আছে, সিইসি ও ইসি হতে কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারী বা বেসরকারী পদে তাঁর অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় সরকারী, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারী বা বেসরকারী পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সিইসি ও ইসি পদে অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬ (ঘ) ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন সেখানে বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হলে সিইসি ও ইসি হওয়া যাবে না। এখানে দুই বছরের কারাদ- উঠিয়ে দিয়ে শুধু কারাদ-ের সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, নৈতিক স্খলন ফৌজদারি অপরাধে যেকোন মেয়াদের সাজা হলেই এক্ষেত্রে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এ সকল সুপারিশসহ বিলের প্রতিবেদন আগামীকাল বুধবার সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সিইসি ও ইসি হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বিষয়ে দুই বছর শব্দটি বাদ দিয়েছি। আর স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও পেশাজীবী (যারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত) তাদের মধ্য থেকেও সিইসি ও ইসি হতে পারবেন। এটা আমরা যুক্ত করেছি এবং সকলে একমত হয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির সভাপতি বলেন, সংসদে উত্থাপিত বিলটিকে আগের সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনকে ‘বৈধতা’ দেয়া হচ্ছে বলে আলোচনা রয়েছে। অনেকে বলছে ‘ইনডেমনিটি’ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এটা ইনডেমনিটি নয়। বিলের ৯ দফায় কিন্তু আগের দুটো সার্চ কমিটির বৈধতা দেয়া হয়েছে। ওই দুই সার্চ কমিটিকে আইনী বৈধতা দেয়া হয়েছে। একটা লিগ্যাল সাপোর্ট দেয়া। সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতি ঐকমত্যের ভিত্তিতে করেছিল। সেটাকে সাপোর্ট দেয়া হলো। কোন দায়মুক্তি নয়। আর আইনটা কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে। সার্চ কমিটির জন্য আইন নয়। তিনি আরও বলেন, আগের দুটো কমিশনের কার্যক্রমকে হেফাজত দেয়ার বিষয় এখানে আসেনি। শুধু সার্চ কমিটির বৈধতা দেয়া হয়েছে। সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতোপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলী এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলে গণ্য হবে এবং উক্ত বিষয়ে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার পর বিলে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে কি পরিবর্তন হয়েছে, সেটা আমি এখানে বলছি না। কারণ এটা সংসদ আগে জানার অধিকার রাখে। আমি যেদিন বিলটি সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করব, সেদিনই বিলটিতে কি পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলব। এ বিষয়ে কমিটিতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ওই দু’টি ধারায় পরিবর্তন ছাড়া বিলে বড় ধরনের কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। কমিটির সুপারিশসহ সংশোধিত আকারে বিলের প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বুধবার সংসদে প্রতিবেদনটি উত্থাপন হলে পরদিনই বিলটি পাসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান। বিএনপি এমপির নোট অব ডিসেন্ট ॥ প্রস্তাবিত আইনটিতে আইনের শাসনের পরিপন্থী ধারা রয়েছে এমন দাবি করে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনাকালে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন কমিটির বিএনপি দলীয় সদস্য ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা। তিনি সাংবাদিকদের জানান, অংশীজনের মতামত ছাড়া তড়িঘড়ি করে আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী বারবার বলেছেন, স্বল্প সময়ে আইনটি প্রণয়ন সম্ভব নয়। আইনটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ একটি দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে হবে না। তিনি অভিযোগ করেন, আইনটির খসড়া যখন এলো তখন আমরা দেখলাম রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও আইনজীবীরা, এমনকি অতীতে যারা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা সকলেই এই আইনের সমালোচনা করেছেন। তারা সকলেই বলছেন, আইনটা নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন না হয়ে সার্চ কমিটি গঠনের আইন হচ্ছে। কারণ, ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপতি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন, তার সঙ্গে এই আইনের তেমন কোন পার্থক্য নেই। বিগত ৫০ বছরে তারাই প্রথম আইনটি করেছে, শুধুমাত্র এই কৃতিত্ব নেয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে আইনটি করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সার্চ কমিটি সম্পর্কে নিজের দেয়া প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, অনুসন্ধান কমিটিতে সরকারী দল, বিরোধী দল ও সংসদের তৃতীয় বৃহত্তর দলের একজন করে প্রতিনিধি রাখার জন্য বলেছি। অর্থাৎ আগামী সার্চ কমিটিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি’র একজন করে সংসদ সদস্য থাকবেন। সার্চ কমিটি যে নামগুলো দেবে সেই নামগুলো ও তাদের যোগ্যতা হলফনামা আকারে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। যাতে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজসহ অন্যরা তাদের সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির প্রস্তাবনা থেকে নিয়োগ দিলেন কিনা সেটাও জানা দরকার।
×