ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪৮ বছরে সংবিধান সংশোধন হয়েছে ১৭ বার

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৪ নভেম্বর ২০২০

৪৮ বছরে সংবিধান সংশোধন হয়েছে ১৭ বার

বিকাশ দত্ত ॥ আজ ৪ নবেম্বর। ৪৮তম সংবিধান প্রণয়ন দিবস। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের এই দিনে প্রণীত হয় বাংলাদেশের সংবিধান। গত ৪৮ বছরে সংবিধান সংশোধন হয়েছে ১৭ বার। গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে। এদিকে আইনবিজ্ঞগণ বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর মোশতাক, জিয়া, এরশাদ সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা সংবিধানকে পবিরবর্তনের উসিলায় ক্ষতবিক্ষত করেছে। বঙ্গবন্ধু প্রণীত সংবিধানের মূল চরিত্র ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বর্তমান সংবিধান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালের ৪ নবেম্বর সংবিধান প্রণীত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সামরিক ফরমান জারি করে এ সংবিধানকে কাটছাট করা হয়েছে। যেমন রাষ্ট্রধর্ম বলে কোন জিনিস ছিল না। সুপ্রীমকোর্টের রায় হয়েছে। তা বাতিল হয়েছে। কথা হলো ধর্ম যার যার তার তার। দুঃখের বিষয় এখনও আমরা পুরোপুরি ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে পারিনি। আমি মনে করি ৭২ সাংবিধানে ফিরে যাওয়া উচিত। ‘সংবিধান এখন যেটা আছে তা অনেকাংশেই ঠিক আছে। কিছুটা বৈপরীত্যও রয়েছে। বিশেষ করে একই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সন্নিবেশ যে যৌক্তিক নয়, তা উচ্চ আদালতের রায়েও উঠে এসেছে। কিন্তু এটা এখনও সংবিধানে বহাল রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শ.ম. রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে জিয়াউর রহমানসহ অন্যান্য অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা নিজেদের সুবিধার্থে মুক্তিযুদ্ধেও চেতনাবাহী বাংলাদেশের সংবিধানকে বার বার কাটছাঁট করে সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে ধ্বংস করেছিল। এমনকি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃতি খুনীদের বিচার করা যাবে না, এমন বিধানকেও সংবিধানে সংযুক্ত করেছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমায় আসার পরে শত প্রতিকূলতা স্বর্তেও বাংলাদেশ সংবিধানকে ’৭২ সালের সংবিধানের মূলধারা ফিরিয়ে এনেছেন। সামরিক শাসকরা সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম ও আরও অনেক গুণী গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে যে, অপরাধ করেছিল সর্বোচ্চ আদালত সেই সকল সংশোধনীকে বেআইনী ঘোষণা করে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর, মোস্তাক ও এরশাদদের তস্কর, রাষ্ট্রদ্রোহী ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তাদের অবৈধ সকল কর্মকা-কে বেআইনী ঘোষণা করেছে। বঙ্গবন্ধু প্রণীত সংবিধানের মূল চরিত্র ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বর্তমান সংবিধান ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছায় তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা রচিত জনগণের অধিকারের দলিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। দেশের জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, এই সংবিধান তারই অভিব্যক্তি, তাই সংবিধান প্রজাতন্ত্রেও সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা ও আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে। এই সংবিধান রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি, জনগণের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের কার্যপরিধিসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ামক দলিল। সংবিধান যেহেতু সর্বোচ্চ আইন, সেহেতু সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোন আইন বৈধ নয়। এবং এমন কোন আইন যা ইহার অংশবিশেষ যদি সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে সেই আইন বা আইনের অংশ বিশেষ বাতিল বলে গণ্য হবে। সর্বোপরি সংবিধান দেশের মূল দলিল, তাই ইহার উৎস ও বিধানবলি জনগণকে অবহিত করা রাষ্ট্রের কর্র্তব্য। বাংলাদেশের জনগণ বাঙালী জাতির অস্তিত্ব ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেয় এবং বীরত্বপূর্ণ স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। বিজয় অর্জনের এক বছরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করেন। যা ১৯৭২ সালের ৪ নবেম্বর গণপরিষদে গৃহীত ও পাস হয়। গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে। এবং একইবছরের ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক ও তৎকালীন রাষ্ট্র্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করে কাতিপয় উচ্চাভিলাষী ব্যক্তি সামারিক বাহিনীকে ব্যবহারের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ও সামরিক শাসন জারি করে। সামরিক আইন ফরমান দ্বারা পবিত্র সংবিধানকে পরিবর্তনের উসিলায় ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। এই সকল কর্মকা- সংবিধানের ৭’র অনুচ্ছেদে বণিত সংবিধানের প্রাধান্য এবং জনগণের ক্ষমতার পরিপন্থী হওয়ায় বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টেও আপীল বিভাগ সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) মামলার [খন্দাকার দেলোয়ার হোসেন/মুন্সি আহসান কবির ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিঃ ও অন্যান্য (সিভিলি পিটিশন ফর লিভ টু আপীল নং ১০৪৪-১০৪৫/২০০৯)] রায়ে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ হতে ৯ এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত বিভিন্নœ সময়ে জারিকৃত সামরিক ফরমান দ্বারা সংবিধানের সকল সংশোধন অবৈধ, বাতিল ও অস্তিত্বহীন মর্মে ষোঘণা করে। অনুরূপভাবে সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৮৬ সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ কতৃক প্রদত্ত মামলার [সিদ্দিক আহম্মেদ বনাম বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য (সিভিল আপীল নং ৪৮/২০১১)] রায়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হতে ১৯৮৬ সালের ১১ নবেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক শাসন জারিসহ উক্ত সময়ের সকল কৃতকর্ম এবং জারিকৃত অধ্যাদেশ, সামারিক আইন ফরমান, আদেশ রেগুলেশন ইত্যাদি অবৈধ, এখতিয়ার বহির্ভূত, শুরু হতে বাতিল ও বেআইনী ঘোষিত হয়েছে। গণতন্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য বিধায় সংবিধান অনুযায়ী প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণের বিধান সমুন্নত রাখার জন্য সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬ সুপ্রীমকোর্টেও আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত মামলার [আব্দুল মান্নœান বনাম বাংলাদেশ সরকার (সিভিল আপীল নং ১৩৯/২০০৫)] রায়ে বাতিল ঘোষিত হওয়ায় উক্ত রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে। এইভাবে সংবিধান প্রণীত হবার পর হতে অদ্যাবধি বাংলাদেশে সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক এর বিধানাবলি পরীক্ষিত হয়ে সুপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সময়ের প্রয়োজনে এবং জনগণের চাহিদা মোতাবেক এই সংবিধানের মৌলিক কাঠামো অক্ষুণœœ রেখে সংশোধনের মাধ্যমে একে যুগোপযোগী করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সংবিধানের (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ দ্বারা ১৯৭২ সালের গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত ও পাসকৃত সংবিধানের প্রস্তাবনাসহ মূল চেতনা অর্থাৎ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদ ফিরে এসেছে। সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) আইন, ২০১৮ দ্বারা জনগণের নির্বাচতি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সংসদে সুপ্রীমকোর্টের কোন বিচারককে প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে অভিযোগে অপাসারণের ক্ষমতা পুনর্প্রবর্তন করা হয়েছে। যা ১৯৭২ সালে গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত ও পাসকৃত মূল সংবিধানের সামগ্রিক চেতনা ও কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সংবিধান রচনা কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য বেগম রাজিয়া বানু। সংবিধান রচনা কমিটির একমাত্র বিরোধী দলীয় সদস্য ছিলেন সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। সংবিধান লেখার সময় খসড়া পর্যালোচনার জন্য ড. আনিসুজ্জামানকে আহ্বায়ক, সৈয়দ আলী আহসান এবং মাযহারুল ইসলামকে ভাষায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি কমিটি গঠন করে পর্যালোচনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তৎকালীন গণপরিষদ ভবন যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সেখানে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির বৈঠকে সহযোগিতা করেন ব্রিটিশ আইনসভার খসড়া আইনপ্রণেতা আই গাথরি। এক নজরে সংবিধানের যত সংশোধনীÑ প্রথম সংশোধনী ॥ সংবিধানের প্রথম সংশোধনী আনা হয় ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৭ অনুচ্ছেদে দুটি নতুন উপধারা সংযোজন করা হয়। তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন প্রথম সংশোধনীটি উত্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে এই সংশোধনীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হয়। দ্বিতীয় সংশোধনী : ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আসে দ্বিতীয় সংশোধনী। এতে সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদে (২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২) সংশোধন আনা হয়। অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বা বহিরাক্রমণে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বাধাগ্রস্ত হলে ‘জরুরী অবস্থা’ ঘোষণার বিধান চালু করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। তৃতীয় সংশোধনী : মূলত ভারত ও বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণী একটি চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য ১৯৭৪ সালের ২৮ নবেম্বর এ সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন এবং চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময় বিধান প্রণয়ন করা হয়। চতুর্থ সংশোধনী : ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো হয়। সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন পদ্ধতি চালু এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন এবং বাকশাল গঠনই ছিল এই সংশোধনীর মূল কথা। আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর সংশোধনীর বিষয়টি উত্থাপন করেন। পঞ্চম সংশোধনী : জাতীয় সংসদে এ সংশোধনী আনা হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক সরকারের যাবতীয় কর্মকা-কে বৈধতা দানসহ সংবিধানে এর মাধ্যমে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করা হয়। পরে এ সংশোধনীটি অবশ্য উচ্চ আদালতের রায়ে অবৈধ ঘোষিত হয়ে যায়। ষষ্ঠ সংশোধনী : ১৯৮১ সালের ১০ জুলাই এ সংশোধনী আনা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর উপ-রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময়ে বিএনপি রাষ্ট্রপতি পদে তাদের প্রার্থী হিসেবে আব্দুস সাত্তারকে মনোনয়ন দেয়। ষষ্ঠ সংশোধনীতে সেই পথটাই নিশ্চিত করা হয়। উপ-রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিত করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। সপ্তম সংশোধনী : ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নবেম্বর পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন বহাল ছিল। ১৯৮৬ সালের ১১ নবেম্বর জাতীয় সংসদে সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে এরশাদের ওই সামরিক শাসনে বৈধতা দেয়া হয়। ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ নবেম্বর পর্যন্ত সামরিক আইন বলবৎ থাকাকালীন সময়ে প্রণীত সকল ফরমান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, নির্দেশ ও অধ্যাদেশসহ অন্যান্য সকল আইন অনুমোদন দেয়া হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট এ সংশোধনীকে আদালত অবৈধ ঘোষণা করে। অষ্টম সংশোধনী : ১৯৮৮ সালের ৯ জুন সংবিধানে অষ্টম সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদে (২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০) পরিবর্তন আনা হয়। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতিদান করা ও ঢাকার বাইরে ৬টি জেলায় হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করার বিধান চালু করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠনের বিষয়টি বাতিল করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। নবম সংশোধনী : নবম সংশোধনী আনা হয় ১৯৮৯ সালের ১১ জুলাই। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কিছু বিধান সংযোজন করা হয়। এ সংশোধনীর আগে রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি যতবার ইচ্ছা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্বাচন করতে পারতেন। এ সংশোধনীর পর অবস্থার পরিবর্তন হয়। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের সঙ্গে একই সময়ে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, রাষ্ট্রপতি পদে কোন ব্যক্তির পর পর দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন সীমাবদ্ধ রাখা হয়। দশম সংশোধনী : এই বিলটি পাস হয় ১৯৯০ সালের ১২ জুন। রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ১৮০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানের ১২৩(২) অনুচ্ছেদের বাংলা ভাষ্য সংশোধন ও সংসদে মহিলাদের ৩০টি আসন আরও ১০ বছরকালের জন্য সংরক্ষণ করার বিধান করা হয়। একাদশ সংশোধনী : গণঅভ্যুত্থানে এইচ এম এরশাদের পতনের পর বিচারপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে ১৯৯১ সালে এ সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগদান বৈধ ঘোষণা করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে যাবার বিধান পাস করানো হয় এই সংশোধনীতে। দ্বাদশ সংশোধনী : ১৯৯১ সালের ৬ আগস্টের এ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৭ বছর পর দেশে পুনরায় সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উপ-রাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত করা হয়। সংশোধনীটি উত্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ত্রয়োদশ সংশোধনী : ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ-নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী জমির উদ্দিন সরকার এই সংশোধনীটি উত্থাপন করেন। চতুর্দশ সংশোধনী : ২০০৪ সালের ১৬ মে এ সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩০ থেকে ৪৫টি করা হয়। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৭ বছর করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং সরকারী ও আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি বা ছবি প্রদর্শনের বিধান করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী : ২০১১ সালের ৩০ জুন এ সংশোধনী আনা হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনা সংশোধন, ১৯৭২-এর মূলনীতি পুনর্বহাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তকরণ, নারীদের জন্য সংসদে ৫০টি সংসদীয় আসন সংরক্ষণ, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি সংশোধনী আনা হয়। ষোড়শ সংশোধনী : ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই সংশোধনী আনা হয়। ৭২ এর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্স্থাপনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দেয়ার বিধান পাস করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। পরে হাইকোর্ট একে অবৈধ ঘোষণা করলে আপীল বিভাগ ওই রায় বহাল রাখে।পরবর্তীতে ও রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করেছে। সপ্তদশ সংশোধনী : সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৮ জুলাই সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিধি আরও ২৫ বছর বহাল রাখার প্রস্তাব সম্বলিত সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী বিল পাস হয়েছে।
×