ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু পরিবর্তনে ঠিক থাকছে না শরতের আবহাওয়া

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

জলবায়ু পরিবর্তনে ঠিক থাকছে না শরতের আবহাওয়া

শাহীন রহমান ॥ বর্ষা শেষে প্রকৃতি অপূর্ব শোভা বর্ধন করে শরতকালেই। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শরতের আবহাওয়া যেন ঠিক থাকছে না। জলাবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এই ঋতুর ওপর পড়েছে। ফলে শরতেও সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোন কোন বছরে শরতকালে অকাল বন্যাও দেখা দিচ্ছে। শরতের নরম আবহাওয়াও যেন মাঝে মাঝে রুক্ষ হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রভাব শুরু হয়েছে সব ঋতুর ওপর। শরতও এর ব্যতিক্রম নয়। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী, গত বছর শরতে বিশেষ করে বাংলা আশ্বিন মাসেই ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এমনকি শরতের বিদায় বেলায়ও দেখা দেয় অকাল বন্যা। যার ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এ বছর বর্ষার আগ থেকে বৃষ্টিপাতের আধিক্য অনেক বেশি। এই শরতেও বৃষ্টির মাত্রা এতটুকু কমেনি। আবার মাঝে মাঝে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহও। প্রচ- গরমে অস্বস্তিও বাড়াচ্ছে এই শরতের আবহাওয়াতে। আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, মৌসুমি বায়ু সাধারণত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সারাদেশের ওপর বিরাজ করে। কোন কোন বছরে মধ্য অক্টাবরের পরে এই মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়। যতক্ষণ মৌসুমি বায়ু দেশে অবস্থান করে, ততক্ষণ এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হবে এটাই স্বাভাবিক। এর প্রভাবে বর্ষার বিদায় বেলায় অধিক বৃষ্টিপাত এমনকি বন্যার আশঙ্কা থেকে যায় মৌসুমি বায়ু বিদায় না নেয়া পর্যন্ত। গত বছর ২২ অক্টাবর দেশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়। এ বছর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এটি বিদায় নিতে পারে। বিদায় নেয়ার আগ পর্যন্ত এবারও বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিপাতের যে মাত্রা ছিল, বর্তমানে তা অনেকটাই কমেছে। শরতের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে এর ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। ঋতু বৈচিত্র্যের ধরণ অনুযায়ী, বর্ষার অবসানের পর প্রকৃতি এক অপূর্ব শোভা বর্ধন করতে থাকে শরতকালে। এই সময় নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায়। তবে এই ঋতুর প্রথম মাস ভাদ্রে কিছুটা তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আর্দ্রতাও সর্বোচ্চ পৌঁছে। শরতে ভোরবেলায় ঘাসের ডগায় শিশির জমে। শরতের শেষে রোদের তেজ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। শুরু হয় শীতের আগমনী হাওয়া। প্রকৃতির এই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, প্রকৃতি থেকে শরতের বিদায় গানও শুরু হয়েছে। এরপরেই শুরু হবে শীতের আগমনী বার্তা। কিন্তু শরতের এই বিদায় বেলায় মাঝে মধ্যে প্রচ- গরম এবং ভারি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দপতন ঘটছে অনেকটাই। ইতোমধ্যে শরতের এই বিদায় বেলায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহও বয়ে গেছে। আবার দুই দফায় লঘুচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাতের দেখা মিলছে। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সাগরের লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোসহ প্রায় সারাদেশের ওপর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে গত দুদিন ধরে। ফলে কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টিপাতের দেখা মিলছে। বৃষ্টির কারণে গরমের তীব্রতা কমে স্বস্তি ফিরেছে। তবে কোথাও কোথাও অধিক বৃষ্টির কারণে ফসল ও জীবনযাত্রার ওপর বেশ প্রভাব পড়ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, দুএকদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে এসে আবার তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। বাড়বে গরমের মাত্রাও। প্রকৃতিতে এখন চলছে শরতের বিদায় বেলার বাংলা আশ্বিন মাস। এই মাসের বৈশিষ্ট্য হলো দিনে নরম হাওয়া, আর রাতের বেলায় শিশির ঝরা। তাই কবি নজরুল লিখেছেন ‘আসবে আবার আশ্বিন হাওয়া, শিশির ছেঁচা রাত্রি।’ অর্থাৎ এই শরতে শিশির পড়া শুরু হয়। ফলে এর মাধ্যমে শীতে আগমনী ভাব ফুটে ওঠে। কিন্তু গত কয়েক বছরের আশ্বিনের এই চরিত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ক্রমেই শরতের প্রকৃতি রুক্ষতায় রূপ নিচ্ছে। আবার কখনও ঝরাচ্ছে অধিক বৃষ্টিপাত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্ততের ফলে সৃষ্ট উষ্ণতার প্রভাব এই শরতের স্পষ্ট অনুভব করা যাচ্ছে। সম্প্রতি শরতকালে প্রকৃতি বৃষ্টি আর গরমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। কোন কোন বছর এই সময়ে এসে অকাল বন্যার কবলে পড়তে হচ্ছে। এই বছর আশ্বিনের শুরুতে একটানা বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিন জেলায় বন্যার প্রকোপে পড়ে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। ফসলে ক্ষতি হয় ব্যাপক। গত বছরও এই শরতের বিদায় বেলায়ও অকাল বন্যার কবলে পড়ে। বিশেষ করে অক্টোবরের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর এবং মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরতের আবহাওয়ায় বন্যা কমই দেখা মেলে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরের তার দেখা মিলছে না, যা ঋতুর আসল বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মেলে না।
×