ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করা হবে

সবজিমেলা আগামীতে পাঁচদিন করার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

সবজিমেলা আগামীতে পাঁচদিন করার পরিকল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নয়াপল্টনের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান। পেশায় একজন বেসরকারী চাকরিজীবী। বন্ধুকে নিয়ে প্রথমবারের মতো ঘুরতে এসেছিলেন রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে জাতীয় সবজিমেলায়। মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, সবজিমেলায় ঘুরতে এসে আমি অবাক হয়ে গেছি। এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য বিভিন্ন সবজির সঙ্গে পরিচিত হওয়া কিন্তু আমার আশার চেয়ে প্রাপ্তিটা অনেক বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, হরেক রকমের নিরাপদ সবজি ছাড়াও মাশরুমের সঙ্গে আমি পরিচিত হতে পেরেছি। নতুনত্ব মাশরুম আর খাঁটি মধুর লোভ সামলাতে না পেরে মাশরুম আর মধু ক্রয় করেছি। এছাড়া বিভিন্ন রকমের নিরাপদ ও পুষ্টিকর সবজিও ক্রয় করেছি। মান্নান বলেন, আমি আমার বাসার বারান্দায় আগে থেকেই ছোট পরিসরে সবজি চাষ করি। মেলায় আসার পর বিভিন্ন স্টল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাসার ছাদে কিংবা বারান্দায় কিভাবে স্বল্প পরিসরে সবজি চাষ করে ফলন বেশি পাওয়া যায় তার ধারণাও পেয়েছি। এ রকম মেলা রাজধানীসহ বাংলাদেশে বেশি বেশি হওয়া উচিত। এতে মানুষ যেমন নিরাপদ সবজি ক্রয় করতে পারবে তেমনি সবজি চাষ সম্পর্কে জানতে পারবে। বিভিন্ন রকম সবজি সম্পর্কে জানাতে এই মেলার গুরুত্ব অনেক বলে জানিয়েছেন আব্দুল মান্নান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইংয়ের উপ-পরিচালক মোঃ আখতারুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা নিরাপদ সবজি মানুষকে দিতে চাই। নিরাপদ সবজি, পাহাড়ি সবজি ও সমতলের সবজির সঙ্গে মানুষকে পরিচিত করতেই এই মেলার আয়োজন। তিনি বলেন, এই মেলার মাধ্যমে কৃষিতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। এখন অনেক শিক্ষিত তরুণ কৃষি কাজের মাধ্যমে তাদের স্বাধীন কর্মসংস্থান খুঁজে নিচ্ছে। তাই মেলাকে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির কারিগরও বলা চলে। মেলায় সরাসরি কৃষকরা অংশগ্রহণ করেছিল। কৃষককে উৎসাহিত করতে পেরে আমরা আনন্দিত। দর্শনার্থীদের মেলায় অংশগ্রহণে জাতীয় সবজিমেলা সফল হয়েছে। মেলা তিন দিনব্যাপী হওয়া অনেক কম সময়। তাই আগামীতে এটা পাঁচ দিনব্যাপী করার পরিকল্পনা আছে। এছাড়া সবজিমেলা ভবিষ্যতে শুধু রাজধানীর মধ্য সীমাবদ্ধ থাকবে না। পর্যায়ক্রমে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে এর কার্যক্রম বিস্তৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন আখতারুজ্জামান। মেলায় কৃষক বাংলা এ্যাগ্রো প্রোডাক্টসের দায়িত্বরত ব্যক্তি জসিম বাপ্পী জনকণ্ঠকে বলেন, মেলায় আসার প্রধান কারণ মানুষকে নিরাপদ সবজি উপহার দেয়া। আমরা চাইনিজ যাবতীয় সবজি প্রদর্শন এবং বিক্রি করেছি। কোন প্রকার আর্থিক লাভ ছাড়াই আমরা সবজি বিক্রি করেছি। মূলত প্রচারের কারণে আমাদের এই উদ্যোগ। তিনি বলেন, সবজি মেলায় অংশগ্রহণ করে আমরা সফল হয়েছি। কারণ, মেলার তিন দিনই দর্শনার্থীর প্রচুর ভিড় ছিল। আমরা আমাদের বিক্রি টার্গেট পূরণ করেছি। ভবিষ্যতে এ রকম আরও মেলা হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিরাপদ সবজি ক্রয় করতে মেলায় আসার প্রধান কারণ ছিল দর্শনার্থীদের। এছাড়া সবজির দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম ছিল। তাই সবজির বিক্রিও বেশি হয়েছে। অনেককে বাসার ছাদে অথবা বারান্দায় সবজি চাষ করতে বিভিন্ন ধরনের চারা ক্রয় করতে দেখা গেছে। মেলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবারে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী হয়েছিল। মেলার তিন দিনই সকাল থেকে রাত সব সময় দর্শনার্থীর পদচারণায় সরগরম ছিল মেলা চত্বর। মেলায় ২৭ প্রকারের শিম ও ২৩ প্রকারের আলুসহ মোট ১৩৬ প্রকারের শাক-সবজি দেখা গেছে। এর মধ্যে সমতলের ৭৬ এবং পাহাড়ী ৬০ রকমের শাক-সবজি ছিল। মনিপুরপাড়া থেকে পরিবারকে নিয়ে আসা রোমেল মার্ক গোমেস জনকণ্ঠকে বলেন, সন্তানকে বিভিন্ন রকম সবজির সঙ্গে পরিচিত করাতেই আমার মেলায় আসার মূল কারণ। এছাড়া এখানে নিরাপদ সবজি পাওয়া যায়। তাই বেশ কিছু সবজি আমি ক্রয় করেছি। মেলায় সবজির দাম তুলনামূলক কম। তিনি বলেন, মেলার পরিবেশ চমৎকার। তাই এই রকম মেলা আরও হওয়া দরকার। মেলার মাধ্যমে আমরা অনেক অচেনা পাহাড়ী সবজির সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছি। সমাপনী বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, আগের মতো প্রত্যেক বাড়িতে দুই/চারটি গাছ লাগালে ওই পরিবারের সারা বছরের নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্মত সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব। এক সময় গ্রামে বাড়ি বাড়ি এক ধরনের মরিচ ও বেগুন দেখা যেত, যা সারাবছর চাষ হতো। এখন তা আর দেখা যায় না। তিনি বলেন, সেই মরিচ ও বেগুন ফিরিয়ে আনার জন্য কৃষি সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি। আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, শুধু নিরাপদ ও পুষ্টিমানের সবজি নয়। সারা বছরের নিরাপদ প্রাণীজ আমিষ অর্থাৎ মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম গ্রহণের পরিমাণও বাড়াতে হবে।
×