ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে ॥ সিনিয়র সচিব ॥ এনসিটিবির ৬ পদ শূন্য

দেড় হাজার কোটি টাকার কাজ শুরু নিয়মিত চেয়ারম্যান ছাড়াই

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ৫ জুলাই ২০২৫

দেড় হাজার কোটি টাকার কাজ শুরু নিয়মিত চেয়ারম্যান ছাড়াই

.

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) শুরু হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার কাজ। চলছে দরপত্র যাচাই-বাছাই। কিন্তু এই সময়ে বোর্ডে নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই। তিন মাস ধরেই এমন অবস্থা। পদ খালি আরও ৫ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার। এতে আগামী বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া নিয়ে চিন্তার ভাজ পড়েছে। যদিও প্রায় ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যক্রম আগেভাগেই শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সব বই ছাপিয়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দেশের ৫৮৫টি কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু নানামুখী সংকট পুরো প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে।
জানা যায়, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের কাছে একটি পদের জন্য কোটি টাকার যে অফার এসেছিল। সেটি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান পদের জন্যই। সংবাদ সম্মেলনে স্বয়ং শিক্ষা উপদেষ্টা এমন তথ্য জানিয়েছিলেন। যদিও তিনি এনসিটিবির নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু এরপর শিক্ষা প্রশাসনে হয় তুমুল আলোচনা। মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি অভিমানে বা মনের দুঃখে এর পর আর কাউকেই এই পদে বসাননি বলেও গুঞ্জন রয়েছে। আবার এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, মন্ত্রণালয় যোগ্য কর্মকর্তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। অধিকাংশ কর্মকর্তার আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতা আছে।  
তবে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যক্রম শুরুর সময়ে একজন নিয়মিত চেয়ারম্যান না থাকাই তাদেরকে চরম নেতৃত্ব সংকট তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট সিদ্ধান্ত অনুমোদন করাতে ছুটতে হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এ ছাড়া এনসিটিবির বোর্ড সভাও হয়নি দীর্ঘদিন। ফলে টেন্ডার মূল্যায়ন, কাজ বণ্টন, পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতসহ বিভিন্ন কাজে বিঘ্ন ঘটছে। দীর্ঘ সময় ধরে এনসিটিবিতে চেয়ারম্যানসহ ৬ পদ খালি থাকায় বোর্ড গতিহীন হয়ে পড়েছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসানের মেয়াদ শেষ হয় গত ২৫ মার্চ। এরপর থেকে পদটি শূন্য। চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী। এ ছাড়াও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রাথমিক শিক্ষাক্রম বিভাগের সদস্যপদ কয়েক মাস ধরে ফাঁকা। প্রাথমিকের ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ পদটিও শূন্য। এ ছাড়া মাদরাসা শাখার ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ ও গবেষণা কর্মকর্তা পদে দীর্ঘদিন ধরে কেউ নেই। এর বাইরে আইসিটি সেলের প্রধানের পদটিও শূন্য রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের জানান, ‘বিষয়টি শিক্ষা উপদেষ্টা অবগত আছেন। বর্তমানে সেখানে একজন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রণালয় থেকেও তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত যাতে সেখানে একজন নিয়মিত চেয়ারম্যানকে পদায়ন করা যায়। আশা করি, সেটা সম্ভব হবে’।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৩ (সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী- এনসিটিবির ৯ সদস্যের একটি বোর্ড থাকবে। এ বোর্ডের সভাপতি থাকবেন চেয়ারম্যান। বাকি ৮ সদস্য হলেন- সদস্য (পাঠ্যপুস্তক), সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম), মাদ্রাসা শিক্ষাক্রমের প্রধান, কারিগরি শিক্ষাক্রমের প্রধান, শিক্ষাক্রম প্রশিক্ষণের একজন, শিক্ষাক্রম গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের একজন এবং সদস্য অর্থ বিভাগ। বর্তমানে চেয়ারম্যান, সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) এবং মাদ্রাসা শিক্ষাক্রমের প্রধান পদগুলো শূন্য। তা ছাড়া সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) পবিত্র হজ পালনে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করেছেন। ফলে বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ চারজন সদস্য অনুপস্থিত। এমন পরিস্থিতিতে কোনো বোর্ড সভা করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী- এনসিটিবির বোর্ড সভায় শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, পরিমার্জন, পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন, পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, প্রকাশনা ও বিতরণ কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সভা না হওয়ায় অনেক সিদ্ধান্ত অনুমোদন আটকে আছে। আর এতে বর্তমান অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যানের কর্তৃত্ব থাকার সুযোগও রয়েছে। এ বিষয়ে এনসিটিবি সচিব মো. সাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন বোর্ড সভা হয়নি বলেও জানিয়েছেন।
আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের জন্য ছাপানো হবে ৮ কোটি ৫২ লাখ ৫৩ হাজার ২৪ কপি বই। এতে খরচ হবে প্রায় ৪২৩ কোটি টাকা। আর মাধ্যমিকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপা হবে ২১ কোটি ৪০ লাখ পাঠ্যবই। এতে ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এমন অবস্থায় নিয়মিত চেয়ারম্যান না থাকলে কেমন সমস্যা হয় এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির সাবেক একজন চেয়ারম্যান বলেন, বোর্ডে যে সিদ্ধান্তগুলো হয়, তাতে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের প্রাধান্য বেশি থাকে। চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নেন, তাতে সবাই অনেকটা বাধ্য হয়ে সায় দিয়ে দেন। মাঝে-মধ্যে দু-একজন সদস্য নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে থাকেন। সেটা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম এবং অর্থ বিভাগের সদস্য। অন্য যারা থাকেন, তারা সবসময় একটু ডাউন থাকেন। কিন্তু একজন ব্যক্তি একটি পদ ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকায় একক কর্তৃত্ব বাড়তে পারে।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের সদস্য। আমার কাজটা হলো মাধ্যমিকের অর্থাৎ, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষাক্রম নিয়ে। চেয়ারম্যান পদ শূন্য থাকায় সরকার আমাকে সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্বে বসিয়েছে। এটা আমি চেয়ে বা তদবির করে নিইনি।

×