ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় ফের জেএমবির গোপন তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

গাইবান্ধায় ফের জেএমবির গোপন তৎপরতা

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৩ এপ্রিল ॥ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি ইউনিয়নের বসন্ডেরপাড়ায় জেএমবি ক্যাডার ফজলে রাব্বি ম-লকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নড়েচড়ে উঠেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। বহুল আলোচিত জেএমবির সামরিক প্রধান ছিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়ের অন্যতম ঘাঁটি ছিল এ বসন্ডেরপাড়া। সেখানে জেএমবি ক্যাডার হত্যাকা-ের ঘটনায় পুলিশ সংগঠনটি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। পুলিশ ও এলাকাবাসীর ধারণা, বাংলাভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি সাঘাটার আকন্দেরপাড়া এবং পার্শ্ববর্তী বসন্ডেরপাড়া, শিমুলবাড়ি, বগারভিটা, ছিলমানেরপাড়া, কানাইপাড়া ও হলদিয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আবার জেএমবির গোপন তৎপরতা শুরু হয়েছে। জেএমবি ক্যাডার আত্মগোপনকারী ফজলে রাব্বি ম-লের হঠাৎ করে সাঘাটায় আগমন এবং রবিবার রাতে তাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তাই তাদের পক্ষ থেকে গত সোমবার গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এলাকার ১৬ বিশিষ্ট ব্যক্তি স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগপত্রে সাঘাটা উপজেলায় উগ্রবাদী জঙ্গীবাদের উত্থান প্রতিরোধ ও জঙ্গী ক্যাডারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। ২০০৭ সালে এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া জেএমবি ক্যাডার ফজলে রাব্বি ঢাকার কেরানীগঞ্জে এত দিন আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি বসন্ডেরপাড়া গ্রামের সাদাক্কাস আলীর ছেলে। ঈদ উপলক্ষে তিনি গোপনে বাড়িতে আসেন। জেএমবির কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ফজলে রাব্বি ম-লের বিরুদ্ধে সে সময় একাধিক মামলা করা হয়। গত রবিবার রাতে পার্শ্ববর্তী জুমারবাড়ি হাট থেকে তার এক সঙ্গীসহ বাড়ি ফেরার পথে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে সøুইস গেটের কাছে দুটি মোটরসাইকেল তাদের সামনে অবরোধ সৃষ্টি করে এবং ফজলে রাব্বিকে খুব কাছে থেকে গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় সেখানে তিনি পড়ে গেলে মোটরসাইকেল আরোহীরা পালিয়ে যায়। পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ সময় তার সঙ্গী সাবেক জেএমবি ক্যাডার এনামুল্লাহ মিয়াকে মারধর করে মোটরসাইকেল আরোহীরা। পরে পুলিশ এনামুল্লাহকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। এ ব্যাপারে ফজলে রাব্বির বাবা সাদাক্কাস আলী আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সাজু এবং তার ছেলে রনি বাবু, রাজু মিয়া ও আবু তাহেরকে আসামি করে সাঘাটা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার বিবরণীতে নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এ খুনের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়। এ ধরনের মামলা ঘটনায় এলাকাবাসীর ধারণা জেএমবির সংশ্লিষ্টতাকে আড়াল করতেই পূর্বশত্রুতার অভিযোগ এনে এ ধরনের মামলা করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানা, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সামরিক প্রধান বাংলাভাইয়ের স্ত্রী ফাহিমা খাতুন বর্তমানে কারাগারে আছেন। জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরির অভিযোগে উচ্চ আদালত তাকে আজীবন কারাদ- দিয়েছে। ফাহিমা খাতুন আকন্দপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের দ্বিতীয় মেয়ে। পুরনো সূত্র ধরেই জেএমবির ক্যাডাররা বর্তমানে আবার এখানে সংগঠিত হচ্ছে। ফাহিমা খাতুনের পরিবারের লোকজনও এতে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। যমুনা নদীসংলগ্ন চর এলাকার বিভিন্ন স্থানে মহিলাদের ধর্মীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উগ্র মৌলবাদী চেতনায় দীক্ষিত করে তোলা হচ্ছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিশিষ্ট লেখক হুমায়ুন আজাদের অন্যতম খুনি নুর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজিব ওরফে তৌহিদ সাঘাটা উপজেলার জেএমবি অধ্যুষিত ওই বসন্ডেরপাড়া ও পার্শ্ববর্তী শিমুলবাড়ি এলাকার অধিবাসী। এ দুজনের মধ্যে সালাউদ্দিন ওরফে তৌহিদ বর্তমানে সৌদি আরবে পলাতক রয়েছে। এরাই গোপন তৎপরতা চালাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে এবং অর্থের যোগান দিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
×