মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী ও মেঘনা সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব সওজ কর্তৃপক্ষের হলেও বাস্তবে টোল আদায় করছে সিএনএস নামের কোম্পানি। এছাড়া ওভারলোড কন্ট্রোল মেশিন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ওই দুটি সেতু দিয়ে ভারি যানবাহন দেদার চলাচল করছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ওই সেতু দু’টি। এদিকে যানবাহন থেকে টোল আদায় নিয়েও টোল প্লাজায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। টোল আদায়কারী সিএনএস টেকনোলজি নামের ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টোল আদায়ের অভিযোগ এনে ইনফার্টেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে রিট পিটিশনও দাখিল করেছে।
জানা যায়, ২০১১ সালের ১৭ ডিসেম্বর দাউদকান্দির টোল প্লাজায় স্থাপন করা হয় ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশন। বর্তমানে মেঘনা-গোমতী ব্রিজের ওভারলোড কন্ট্রোল স্কেল বন্ধ থাকায় দায়িত্বরতরা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে অতিরিক্ত মালবোঝাই যানবাহন নির্বিঘেœ চলাচল করতে দেয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে মেঘনা-গোমতী, মেঘনা ব্রিজ। সূত্র জানায়, শুধু ওভারলোড কন্ট্রোল স্কেল অচল এমনটি নয়, মেঘনা-গোমতী ও মেঘনা ব্রিজের কম্পিউটার কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কখনও রসিদে আবার কখনও বিনা রসিদে দুটি টোলপ্লাজার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিএনএসের লোকজনকে নিজেদের ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত টোল আদায় করতে দেখা গেছে। গত দু’বছর পূর্বে ৪৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হলেও বর্তমানে নির্বিঘেœ ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে ব্রিজ দুটি আবারও হুমকির মুখে পড়ছে। জানা যায়, মেঘনা-গোমতী ও মেঘনা ব্রিজের টোল আদায়ের দায়িত্বে ছিল এশিয়ান ট্রাফিক টেকনোলজিস্ট নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে টোল আদায়ের দায়িত্ব নেয় ঢাকা জোনের নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এর পর থেকে সওজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওভারলোড কন্ট্রোল স্কেল ও কম্পিউটার কন্ট্রোল রুম বন্ধ, মনগড়া অতিরিক্ত টোল আদায়সহ নানান অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে। দুটি টোলপ্লাজায় টোল বক্সের সামনে থাকা নির্ধারিত টোলের তালিকা মানা হচ্ছে না। যানবাহনের কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, টোল আদায়ের নামে এ দুটি ব্রিজ ঘিরে রীতিমতো চলছে অর্থের লোপাট। তারা জানান, বর্তমানে ট্রেইলর ১২৫০ টাকার স্থলে ১৫-১৬শ’ টাকা, হেভি ট্রাক ৫শ’ টাকার স্থলে ৭-৮শ’ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ১৯০ টাকার স্থলে ৪-৫শ’ টাকা, বড় বাস ৪৫০ টাকার স্থলে ৫-৬শ’ টাকা, মিনি ট্রাক ৯০ টাকার স্থলে ১৫০-২০০ টাকা, মিনিবাস ১৮৫ টাকার স্থলে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ৯০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা- কখনও রসিদে কখনও বিনা রসিদে আদায় করছে। জানা যায়, কর্তৃপক্ষ দুটি সেতুর টোল আদায়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করলে এতে ইনফার্টেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে এবং দরদাতাদের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রথম অবস্থানে থাকে। কিন্তু ওই দুটি ব্রিজের টোল আদায়ের কার্যাদেশ ইনফার্টেক কন্সট্রাকশন কোম্পানিকে দেয়া হয়নি। সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগ এ দায়িত্ব পালন করছে এমন কথা বলা হলেও বাস্তবে বিনা কার্যাদেশে টোল আদায় করছে সিএনএস টেকনোলজি নামীয় প্রতিষ্ঠান। সিএনএস টেকনোলজি কোম্পানির অবৈধভাবে টোল আদায় করার প্রতিকার চেয়ে গত ১৯ অক্টোবর ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে ইনফার্টেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নং-এস.এল-২৫০৩৬/২০১৫) করেছে। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী সামসুদ্দিন বলেন, কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ স্কেল নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে।