ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

নকল ও ভুয়া ওষুধ চেনার ৫টি কার্যকর উপায়

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ১০ জুলাই ২০২৫

নকল ও ভুয়া ওষুধ চেনার ৫টি কার্যকর উপায়

ছবি: সংগৃহীত

আজকের দিনে এটা দুঃখজনক বাস্তবতা যে, অনেক সাধারণ ক্রেতাই আসল ওষুধ আর নকল ওষুধের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। আরও ভয়াবহ বিষয় হলো, অনেক সময় চিকিৎসকরাও রাসায়নিক বিশ্লেষণ ছাড়া ওষুধের সত্যতা যাচাই করতে পারেন না।

নকল ওষুধ প্রস্তুতকারকরা প্যাকেট, ট্যাবলেটের আকৃতি, রঙ, বোতল বা ভায়ালের আকার-আকৃতি—সবকিছুই এমনভাবে নকল করছে, যা দেখলে আসল ও নকলের মধ্যে তফাৎ বোঝা কঠিন।

তবে আপনি সচেতন হলেই অনেকখানি ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেওয়া হলো, যা অনুসরণ করলে ওষুধের সত্যতা যাচাই সহজ হবে—

১. সিল ঠিক আছে কি না, দেখুন

বিশেষ করে বোতলজাত ওষুধে সুরক্ষা সিল বা সীলমোহর ভাঙা বা খোলা থাকা উচিত নয়।
কেনার আগে ভালো করে দেখুন—সিল টেপে কোনো ফাটল, ছেঁড়া বা অস্বাভাবিকতা আছে কি না।
সন্দেহ হলে, সেই ওষুধ কিনবেন না।

২. মোবাইলের মাধ্যমে এসএমএস যাচাই

ভুয়া ওষুধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি আধুনিক প্রযুক্তি হলো—মোবাইল অথেনটিকেশন সার্ভিস (MAS)।
এখন অনেক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাদের ওষুধের প্যাকেটে স্ক্র্যাচ কার্ড সংযুক্ত করে থাকে।

ওই স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষে পাওয়া কোডটি নির্দিষ্ট নম্বরে এসএমএস করলে খুব দ্রুতই জানতে পারবেন ওষুধটি আসল কি না।

৩. অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

নকল ওষুধে সাধারণত কার্যকর ‘অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট’ (API) থাকে না।
অনেক সময় এতে ভুল উপাদান, ভুল মাত্রা বা ক্ষতিকর বস্তু মেশানো থাকে, যার কোনো চিকিৎসা-প্রভাব নেই।

যদি ওষুধ খাওয়ার পর অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অ্যালার্জি বা রোগের অবনতি ঘটে—
তা হলে ওই ওষুধটি খাওয়া বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

৪. কিউআর কোড

কিউআর কোড হচ্ছে এমন একটি ২-ডি বারকোড, যেখানে ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে।
এটি সাধারণ বারকোডের তুলনায় অনেক বেশি তথ্য ধারণ করতে পারে।

ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন প্যাকেটের গায়ে কিউআর কোড ছাপায়, যাতে ওষুধের আসল-নকল যাচাই করা যায়।

৫. কিউআর কোড ব্যবহার করে ওষুধ যাচাইয়ের নিয়ম

১. প্যাকেটের ঢাকনার ভেতরে থাকে ইউনিক কিউআর কোড।
২. এটি স্ক্যান করলে আপনি চলে যাবেন নির্দিষ্ট একটি ওয়েবসাইটে।
৩. ওয়েবসাইটে দেখানো হবে ওষুধটি আসল কি না।
৪. এই পদ্ধতিটি সবচেয়ে নিরাপদ, কারণ ইউনিক কোড নকল করা প্রায় অসম্ভব।

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

যদি আপনার মনে সন্দেহ হয় যে, ওষুধটি নকল—তা হলে সেটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
অবশ্যই চিকিৎসক ও ফার্মেসিকে বিষয়টি জানান এবং পরবর্তী করণীয় জেনে নিন।

প্রয়োজনে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যোগাযোগ করুন।
প্রতিটি ওষুধের ব্যাচ নম্বর তাদের রেকর্ডে থাকে। তারা সহজেই বলতে পারবে, ওষুধটি আসল কি না।
অনেক সময় ফোনেই তারা ওষুধের ব্যাচ নম্বর দেখে নকল শনাক্ত করতে পারে।

প্রয়োজনে স্থানীয় ‘Buy Safely’ ওয়েবসাইটে গিয়ে ওষুধ নিষ্পত্তি কেন্দ্রের খোঁজ নিতে পারেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে—
“অনেক সময় ভুয়া ওষুধের ব্যাচ নম্বরই আসলে অকার্যকর বা ভুয়া হয়। কোম্পানি সেই নম্বরের তালিকা ধরে সহজেই শনাক্ত করতে পারে,” বলছেন বিশেষজ্ঞ কলানান।

ওষুধ কিনতে গেলে সচেতন হোন, নকল ওষুধ চিনতে শিখুন—আপনার ও আপনার পরিবারের সুস্থতার জন্য এটা খুবই জরুরি।

আবির

×