ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ইন্টারভিউয়ের প্রতিটি ধাপে এগিয়ে থাকতে চাইলে জেনে নিন এই ৬টি বিশেষ টিপস

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৫:২৬, ৯ জুলাই ২০২৫

ইন্টারভিউয়ের প্রতিটি ধাপে এগিয়ে থাকতে চাইলে জেনে নিন এই ৬টি বিশেষ টিপস

ছবি: সংগৃহীত

নিয়োগকারীর চোখে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা সহজ নয়। চাকরির ইন্টারভিউ অনেকটা স্পিড ডেটিংয়ের মতো—খুব অল্প সময়ে নিজেকে সেরা হিসেবে তুলে ধরতে হয়।

লিংকডইন লার্নিং-এর প্রশিক্ষক পাম স্কিলিংস বলেন, “ইন্টারভিউ আসলে একটা পারফরম্যান্স, যেখানে আপনি নিজেই আপনার চরিত্রে অভিনয় করেন।”

আপনি যদি নতুন চাকরি খুঁজে থাকেন, তবে স্কিলিংসের এই ৬টি কার্যকর পরামর্শ অনুসরণ করুন—যা আপনাকে ইন্টারভিউতে সেরা পারফরম্যান্স দিতে সাহায্য করবে এবং কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে আপনার পথ আরও সহজ করে দেবে।

ইন্টারভিউতে সফল হওয়ার ৬টি কার্যকর কৌশল

১. প্রথম ছাপ তৈরি করুন পরিকল্পিতভাবে

ইন্টারভিউতে সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্ন, ‘‘আপনি নিজের সম্পর্কে বলুন’’—এর উত্তরে ভুল করে জীবনের শুরু থেকে গল্প বলা একেবারেই উচিত নয়।

নিয়োগকারী আপনার জীবন কাহিনী জানতে চান না; বরং জানতে চান আপনি কেন এই চাকরির জন্য সেরা। তাই সংক্ষেপে এবং সরাসরি বলুন আপনি কীভাবে এই পদটির জন্য প্রাসঙ্গিক ও উপযুক্ত।

চোখে চোখ রেখে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলুন। মনে রাখবেন, আপনার গল্পের কোন অংশ বলবেন, তা একমাত্র আপনার সিদ্ধান্ত।

২. নিজের শক্তির দিক তুলে ধরুন

ইন্টারভিউতে নিজের দক্ষতা তুলে ধরা মোটেও অহংকার নয়। বরং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

আগে থেকেই প্রস্তুতি নিন। কীভাবে আপনার শক্তি ও দক্ষতা তুলে ধরবেন, তা প্র্যাকটিস করুন। তিনটি মূল কারণ উল্লেখ করুন, কেন আপনি এই পদটির জন্য সেরা প্রার্থী।

যদি আপনি স্বভাবতই লাজুক বা বিনয়ী হন, তবুও কিছু সহজ উপায় আছে শক্তি তুলে ধরার:
প্রথমে, কৃতিত্বের বিষয়টি সরাসরি বলুন—
উদাহরণ: ‘‘আমি একটি কোটি টাকার প্রজেক্ট লিড করেছিলাম, যা নির্ধারিত সময়ের আগেই সফলভাবে সম্পন্ন করি এবং ক্লায়েন্টের কাছ থেকে দারুণ প্রশংসা পাই।’’

দ্বিতীয়ত, অন্যদের মতামত উল্লেখ করুন—
উদাহরণ: ‘‘আমার পারফরম্যান্স রিভিউতে, ম্যানেজার আমাকে জুনিয়র সহকর্মীদের পরামর্শ দেওয়া এবং দল পরিচালনার দক্ষতার জন্য প্রশংসা করেছেন।’’

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—আওড়ে বলার অভ্যাস করুন। কয়েকবার চর্চা করলেই আপনিও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।

৩. মুখস্থ নয়, পয়েন্ট তৈরি করুন

একদিকে প্রস্তুতি, অন্যদিকে যেনো কথাবার্তা সহজ-স্বাভাবিক—দু'টোই কীভাবে সম্ভব? উত্তর—বুলেট পয়েন্ট।

একেবারে মুখস্থ করে বলার চেষ্টা করবেন না। বরং কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঠিক করে রাখুন, যেগুলো সব প্রশ্নের উত্তরে কাজে লাগবে।

বিশেষ করে, যদি আপনার ক্যারিয়ারে কোনো দুর্বলতা থাকে (যেমন, রেজুমেতে দীর্ঘ বিরতি), তবে আগে থেকেই তার জন্য প্রস্তুত থাকুন। যাতে আপনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন।

৪. পদটির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করুন

কোম্পানি সম্পর্কে গবেষণা করা তো বটেই, কিন্তু আরও জরুরি হলো—এই পদটির জন্য আপনার আগ্রহ ও উত্তেজনা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা।

মনে করুন:

  • কেন আপনি এই চাকরির জন্য বিশেষভাবে যোগ্য?

  • কেন আপনাকে সুযোগ দিলে আপনি আরও ভালো করবেন?

  • এই চাকরিটি আপনার ক্যারিয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত?

আপনার দৃঢ় আগ্রহ দেখে নিয়োগকারী নিশ্চিত হবেন যে আপনি কাজের প্রতি যত্নশীল ও কর্মঠ হবেন।

৫. সংক্ষিপ্ত ও মনোমুগ্ধকর গল্প বলুন

নিজের প্রকল্পের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সময় যেন গল্পের আকারে বলুন, কিন্তু সংক্ষিপ্ত রাখুন।

কীভাবে বলবেন?

  • সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দিন, কেন প্রজেক্টটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

  • আপনার পদক্ষেপগুলো ব্যাখ্যা করুন, কী সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন, কীভাবে সমাধান করেছেন।

  • ইতিবাচক ফলাফল তুলে ধরুন—যেমন, ‘‘আমার উদ্যোগে আয় ৮% বৃদ্ধি পেয়েছে’’ অথবা ‘‘আমার নেতৃত্বে বাজেট কম খরচ হয়েছে এবং ক্লায়েন্ট আবার চুক্তি নবায়ন করেছে।’’

গল্প বলার সময়—

  • দুই মিনিটের মধ্যে শেষ করুন।

  • ‘আমি’ শব্দ ব্যবহার করুন, ‘আমরা’ নয়।

  • এটাকে মনোলগ নয়, আলাপের শুরু হিসেবে ভাবুন। যদি নিয়োগকারী বিস্তারিত জানতে চায়, বুঝবেন আপনি সফল হয়েছেন।

৬. ইতিবাচকভাবে ইন্টারভিউ শেষ করুন

অনেকেই ইন্টারভিউ শেষে প্রশ্ন করেন, ‘‘আমার প্রার্থী হিসেবে কোনো দুর্বলতা আছে কি?’’ তবে এটা মোটেই ভালো আইডিয়া নয়।

বড় কোম্পানির নিয়োগকারীরা সাধারণত স্পট-ফিডব্যাক দিতে চান না। তাই নেতিবাচক দিক তুলে না এনে, বরং শেষ করুন ইতিবাচক প্রশ্ন দিয়ে—যেমন:
‘‘এই পদের জন্য আপনার মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ কোনটি?’’

এতে আপনি শেষবারের মতো নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরার সুযোগ পাবেন।

আবির

×