সীমান্তে সবুজ পাসপোর্ট
পুঁটি মাছের ঝোল আর বিরিয়ানির গল্প, সীমান্তে সবুজ পাসপোর্ট, জগদীশ জেলে যখন জেলে, শিলিগুড়ির দেয়ালে শেখ মুজিব, ¯্রােতধারা, পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের পরে, আয়কর কর্মকর্তা ও একজোড়া পেয়ারা, তিনি যখন তরঙ্গমালায়, দ্বিধা বিভক্ত, প্রতিশ্রুতি, বিবাহপরবর্তী জটিলতা গল্পগুলো নিয়ে ফরিদুর রহমানের আলোচ্য গল্পের বই।
ফরিদুর রহমানকে সত্তর দশক থেকে চিনি, তখন থেকেই লিখছেন। এ কারণে তাঁকে সত্তর দশকের লেখক অভিধায় চিহ্নিত করলে আমার কাছে তা অগ্রহণযোগ্য হবে না। বৈভিন্নতার চরম শেখরে উঠে সত্তর দশকের সবার পরিচিত ছড়াকার ফরিদুর রহমান এ গল্পগ্রন্থে বিচিত্রগামী এগারোটি গল্প ফেঁদে বসেছেন।
সীমান্তে সবুজ পাসপোর্ট গল্পটি সার্বিয়ায় বসে ভাবনা-চিন্তার ফসল, পুঁটি মাছের ঝোল আর বিরিয়ানির গল্প মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পরিবেশ তুলে ধরে, জগদীশ জেলে যখন জেলে আমাদের সমাজের নিরীহদের ওপর আমাদের অজ্ঞ অত্যাচারের পরিচয় বহন করে, শিলিগুড়ির দেয়ালে শেখ মুজিব গল্পটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি, পরেরটি মৃত মুক্তিযোদ্ধার শেষ স্মৃতি কবরটাও চরে বন্যার পানি ঢুকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিম্বলিক গল্প, পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের আগে গল্পটি Psycho phenomena ধরনের তবে ভুতুড়ে নয়, পরেরটা কিছুটা রসাত্মক আর implied sex কথকতা বহন করে, তিনি যখন তরঙ্গমালায় নিরেট রিপোর্টিং বা হতেও পারে একজন ‘মুক্তিযোদ্ধার জমে থাকা নিমগ্ন ত্রন্দন’, দ্বিধা বিভক্ত শর্ট ফিকশনটি রফবহঃরপধষ আর বঃবৎহধষ জগতে সুন্দরভাবে পদচারণা তবে, ম্যাজিক রিয়ালিজম বলে অনেকে ধারণা করলে তা আমার কাছে ভ্রান্ত বলে বিবেচিত হবে। পরের দুটো চলনসই, যদি আরো কৌতূহল জাগে তাহলে পাঠকদের বলছি, শাহবাগের জনান্তিক প্রকাশনী থেকে কিনে পড়তে পারেন।
হাঁ, তাঁর লেখায় বাক্যের গঠন ও বাঁধন পরিপুষ্ট, শুরুতেই বলেছি, বিচিত্র পরিবেশ ও সময় নিয়ে বহুধামুখী শর্ট ফিকশন, বহু টেলিনাট্য রচয়িতা, দায়বদ্ধতার লেখক, ইত্যাদি, ইত্যাদি বিশেষণ যোগ করা যায় ১৯টি বইয়ের এ লেখককে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখে ঢুকতে না দিলে ‘যারা এই পাসপোর্ট দিয়েছে, তাদের গুষ্টি কিলাই’ বীতশ্রদ্ধ ডায়ালগটি দু’বার দুটি গল্পে ব্যবহার হয়েছে- অর্থাৎ পুরো বইটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। এর মুন্সিয়ানা বিস্তার করতে গেলে অনেক বড় হবে।
এ কারণে এ গল্প বা শর্ট ফিকশনগুলোর দু’একটি গল্পের (আমার) প্রশান্তির ব্যবচ্ছেদ করতে প্রলুব্ধ হচ্ছি মাত্র। নোবেলখ্যাত জাপানী বংশোদ্ভূত বিলেতী কধুঁড় ওংযরমঁৎড়, পোলিশ ঙষমধ ঞড়শধৎপুঁশ, চধঃৎরপশ গড়ফরধহড় বা অনোবেলখ্যাত ব্রাজিলীয় লেখক ও গীতিকার যাঁর ঞযব অষপযবসরংঃ বইটি বিশে^ ৫৬টি ভাষায় অনুবাদ হয়ে সাড়ে পাঁচ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে সেই চধঁষড় ঈড়বষযড়-এর (পাওলো কোয়েলহো) ফিকশন ও শর্ট ফিকশনগুলোতে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাঁরা সধমরপ-ৎবধষরংস বা জাদু বাস্তবতাকে অতিক্রম করে সময় এমনকি মানচিত্র অতিক্রম করতে চাইছেন অন্য এক ফর্মে এক ঁহরাবৎংধষ বঃবৎহরঃু এর সময় প্রবাহ সৃষ্টি করতে। এ ধরনের একটি প্রবণতা ফরিদুর রহমানের দুটো গল্পে লক্ষ্য করা যায়। তবে এটি সৃষ্টি করা খুব কঠিন।
দ্বিধা বিভক্ত গল্পে তিনি এক মানবের দুটি মানবসত্ত্ার চংুপযড় ঢ়যবহড়সবহধ এর ব্যবচ্ছেদ করেছেন। সারা বিশ^ম-লে এটি বিরাজমান থাকলেও আমরা এটি সবসময় অনুভব করতে পারি না। আর পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের পরে গল্পটিতে সময়কে চলমান কাল থেকে অনন্ত ভবিষ্যতের দিকে প্রবাহিত করে দেয়া হয়েছে কিংবা দূরবর্তী অতীতকে বর্তমানে বসে দেখার ক্ষমতা বেশ নান্দনিক ও যুক্তিগ্রাহ্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এখানে বরং ফিকশনার ফরিদুর রহমানকে কাজুও ইশিগুরো, প্যাট্রিক মোদিয়ানো এমনকি পাওলো কোয়েলহোর চেয়ে সময়ের অনন্ত যাত্রাকে বুনটের দক্ষতা বরং ফরিদুর রহমানেরই বেশি মনে হয়েছে এই বইয়ে। কিন্তু আমাদের প্রচারণা কম হচ্ছে, আর তাদেরটা বেশি। গভীর মনোনিবেশে এবং বিশে^র অন্যান্য দেশের সাহিত্য পঠন-পাঠনে অভ্যেস করে নিলে দেখা যাবে আমাদের উৎপাদিত সাহিত্য অনেক উন্নতমানের সোপানে উঠে যাচ্ছে।