
ছবি: প্রতীকী
এখন আমি যে ঘটনাটি লিখছি তা গল্পের মতো হলেও, সত্যি ঘটনা। ভেবেছিলাম কখনো ঘটনাটি প্রকাশ করব না, কারণ অনেকে নিছক হাসি ঠাট্টা করবে, না হয় আমাকে মিথ্যাবাদী কিংবা পাগল ভাববে। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার নীরব সাক্ষী খুঁজলে এখনো পাওয়া যাবে।
বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা, গ্রামীণ ফোন সেন্টারে কাস্টমার ম্যানেজার ছিলাম তখন । আমার দায়িত্ব ছিল কাস্টমারদের ভাল সার্ভিস দেয়া। সেদিন শুক্রবার ছিল, ডে অফ ছিল সোমবারে, তাই প্রতি শুক্রবারেই আমার গ্রামীণ ফোন সেন্টারে ডিউটি করতে হতো। আগের দিন রাতে ঔষধ কিনতে আমার এক মামার দোকানে যাই। মামা আমাকে বলল, ভাগিনা, আমাকে না অনেক রাত্রে মোবাইলে জিনের বাদশা ফোন করে অনেক কিছু বলে, তুমি কি একটু দেখবা ব্যাপারটা।
মামাকে বললাম এগুলো আপনি বিশ্বাস করবেন না, আমাকে মোবাইল নাম্বারটা দিন আমি একটু চেক করে দেখতে পারি কোন জিনের বাদশা আপনাকে প্রতি রাতে ফোন করে। শুক্রবার সকাল ৯ টায় অফিসে পৌঁছালাম। আমার সঙ্গে আরো ৩ জন কলিগ ঐদিন ডিউটি করছিল, রিপন, ইমু, সাকিব। আমার পাশের চেয়ারটা ছিল ইমুর। ও একমনে কাস্টমার সার্ভিস দিচ্ছিল আর আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এর মধ্যেই কখন ১২ টা বেজে গেছে বুঝতেও পারি নাই। কাজের চাপ একটু কম এক দুজন কাস্টমার কে দেখা যাচ্ছে।
সুযোগটা পেয়ে গেলাম মামাকে ফোন করা সেই জিনের বাদশার মোবাইল সিমটি চেক করার জন্য। কম্পিউটারে সফটওয়্যারটি ওপেন করে দেখতে শুরু করলাম, একজন লোকের ছবি পেলাম মুখে বেশ বড় দাড়ি এইটুকু মনে আছে। কম্পিউটার পাসওয়ার্ডটা লক করে উঠে পরলাম আমার ডেস্ক থেকে। একটু পরেই মনে হল ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ের সাথে অন্য লোকের পায়ে পা লাগলে যেমন অনুভূতি হয় ঠিক তেমন অনুভূতি লাগল আমার। এর মধ্যেই একজন কাস্টমার বলল ভাইয়া আপনার চেয়ারে যেন কি বসে আছে। ডেস্ক থেকে অল্প দূরেই আমি, তাই বিলম্ব না করে ঘুরে চলে আসলাম ডেক্সের দিকে। এসেই তো আমি একটু হলেও ভয় পেয়ে গেলাম। আসলে অদ্ভুত ঘটনাটির সামনে নিজেকে একটু অবাস্তব লাগছিল।
আমার ডেস্ক সবসময় আটকা একটা জায়গায় ছিল। আমরা কাস্টমার ম্যানেজার ছাড়া ডেস্কে বসা সাধারণের জন্য এত সহজ কাজ না। যে মানুষের মত জিনিসটা আমার চেয়ারে বসেছিল তার সারা শরীর পানি দিয়ে ভেজা। হাত-পা খুব চিকন মাথাটা ফ্লাইমিং সসাড়ের মত, এমন কুৎসিত আকারের মানুষ আমি এ পৃথিবীতে দেখি নাই। ডেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে আমি মানুষ আকৃতির জিনিসটাকে বলব তোমার নাম কি, না বলে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে ফেলেছি তুমি কোথা থেকে এসেছো। আমার প্রশ্নের উত্তর করল লোকটি, আমি যশোর থেকে এসেছি। আমার কলিগ ইমু তখনো টের পাইনি যে ওর পাশে আমি বসা নেই।
ইমু ঘুরে তাকাতেই সুবদ বালকের মত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পরল আর আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করল ভাই এটাকে এখান থেকে চলে যেতে বলেন। আমি গ্রামীণ ফোন সেন্টারের সিনিয়র কাস্টমার ম্যানেজার হওয়ার কারণে কাজটি আমারই করতে হবে উনাকে চলে যাওয়ার জন্য। একটু পরেই অদ্ভুত আকারের লোকটি পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে বলল কম্পিউটার কত দিন দেখি না। তখন আমার বেশি ভয় লাগতে শুরু করল কিন্তু তার পরও ঐ ডেক্সের সামনে থেকে সরতে পারছি না। একটু সামনের দিকে বসা রিপন নামে আমার আরেকজন কলিগকে ডাকলাম, ভাবলাম আমি হয়ত কিছু ভুল দেখছি। রিপন এসেই খুব ভয় পেয়ে বলল ভাই আমি ঐ অদ্ভুত লোকটাকে কিছু বলতে পারব না, যদি খারাপ কিছু ঘটে।
এর মধ্যে ইমু তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, কারণ ইমুর ডেস্ক থেকে বেড় হওয়ার কোন জায়গা ছিল না। কাজটা যেহেতু আমাকেই করতে হবে তাই সাহস করে অদ্ভুত আকৃতির লোকটাকে বলে ফেললাম আপনি কোন দিক দিয়ে আমার চেয়ারে এসে বসলেন। লোকটি আমার দিকে লাল ছোট ছোট চোখ দিয়ে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকাল। মনে হল সে যেন আমার কথাতে রাগ হয়েছে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ৪ থেকে ৫ মিনিট পার হয়ে গেল। চেয়ার থেকে লোকটি উঠে গ্রামীণ ফোন সেন্টারের বাইরে চলে গেল। বাইরে যাওয়ার পরপরই তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। শুধু এটাই বুঝলাম কিছু একটা গোলমাল আছে এখানে।
অদ্ভুত লোকটির গা যেহেতু ভেজা ছিল সেহেতু আমার ডেক্সের চেয়ারের অংশ অনেকটা ভিজে গেল কিন্তু অফিসের মধ্যে লোকটির পায়ের কোন ছাপ পাওয়া গেল না। একটু স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম আমার বসার চেয়ারটা চেঞ্জ করলাম এবং আমার অন্য কলিগদের বললাম তোমরা স্বাভাবিক থাকো। তার পরেই আমাদের এরিয়া ম্যানেজারকে ঘটনাটি ফোনে জানালাম। উনি আমাকে বলল রুবেল ভাই ঘটনাটি আপনি আপাতত কাউকে বলবেন না তাহলে কাস্টমাররা ভয় পাবে। কারণ এরূপ একই ঘটনা ঘটেছিল যশোর কাস্টমার কেয়ার এর একজন কাস্টমার ম্যানেজার এর সঙ্গে।
এই ঘটনার পর থেকে বাড়িতে আমি ৫ থেকে ৭ দিন রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়েছি। তেমন কাউকে ঘটনাটি বলতে পারি নাই কারণ আমাকে তখন কেউ পাগল না বলে এই ভেবে। আমার ঘটনার নীরব সাক্ষী রিপন ও ইমু। ওরা এখন ভালো চাকরি করে অন্য জায়গাতে। কিন্তু এই ঘটনাটি এখন পর্যন্ত আমার কাছে রহস্য থেকে গেল। চিন্তা করে পেলাম না ঐ অদৃশ্য ব্যক্তিটি কীভাবে আমার ডেক্সের চেয়ারে বসলো আবার কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল আর জিনের বাদশার সিমটির সাথে ঐ অদ্ভুত আকৃতির লোকটির কি সম্পর্ক................
রবিউল হাসান