ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কবতিা

প্রকাশিত: ২১:১৩, ১৬ মার্চ ২০২৩; আপডেট: ২২:৩১, ১৬ মার্চ ২০২৩

কবতিা

-

ল্যা-স্কেপ

শেখ আতাউর রহমান
    
('A Tribute to John Denver: ÔCountry road—-take me home!')
হেঁটে যায় সুকন্যা লালটপ কালো কেডস পায়-পাতা ঝরা রাস্তায়
ওর সাথে আমিও হাঁটি ধুলিমাখা পথে সুরম্য মনোরথে
কখনোবা জমির আলে-ডেনভার’ এর গানের তালেতালে-নেইকো শকট!
এ-‘রাঙা মাটির পথ’ আমারেও টানে-গাঁথে ‘মোবিডিক’ হারপুনে-যেন কতোদিনের 
চেনা এইপথ-নিশ্চয়ই এখানে আঁধার রাতে অরণ্যে আলো দেয় মথ!  
এ-বৃক্ষ শর্ষেখেত নিরিবিলি দিঘি-সুনসান বাড়ী বাহারি-!
কারা যেন কানেকানে কয়-কতোদিন দেখিনাগো মহোদয়-তাই তোমার সাথে 
আমাদের আড়ি আড়ি আড়ি!- আমি ফেরাই চোখ তাড়াতাড়ি!
অতঃপর ছলকে ওঠে ‘সেল্’এ বিষণ্ণ সিঁড়ি-হাওয়ায় দোলে জবা ঝিরিঝিরি!
এসব আমার অতি চেনা ধাম-জানি তার নাম
নিশ্চয়ই এটা ত্রিশালের আরেকটা ‘গোদাগাড়ী’র ‘নবগ্রাম!’
এমনি করে হাজার বছর ধরে মায়েভায়ে বাস করে ষোলো কোটি হোমোস্যাপিয়ান
কখনো দুঃখ কখনো সুখ-জীবন তবুও বয়ে চলে বিপুল ঐশ^র্যে মহিয়ান!
সুকন্যা হেঁটে যাও তুমি এমনি করেই হাজার বছর
এ-মাটির তলেই শুয়ে রব আমি-জানেন বুঝি তা অন্তর্যামী-তারপর একদিন হয়ে যাবো 
‘মহেনজোদর!’-এমনি করেই সভ্যতা মরে যায়-নয়া সভ্যতা আসে-নিশ্চয়ই জানো তুমি 
বস্তুগত ‘বিবর্তন’ এর এমন জেনেটিক খবর-তাই দীপ্ত ভঙ্গিমায় বাঁধভাঙা বন্যায় মাড়িয়ে যাও 
তুমি জীর্ণদিনের দীর্ণ কবর! একটুও কোরোনাকো সংজ¦র-ভিজিয়োনা 
কণ্ঠস্বর-এগিয়ে চলুক তোমার নবসৃষ্টির আনন্দ বহর!
জেনে যাও আজ এই সংবাদ যার শতভাগ সত্য অনন্ত প্রহরঃ
মাটির ওপর গতি ময় সভ্যতা লীলা করে বিরামহীন-নীচে পড়ে রয় মৃতের শহর!!


** উপমাদের পাতাগৃহ

শিউল মনজুর

উপমাদের পাতাগৃহ বিধ্বস্ত হলে 
কার কী আসে যায়
মল্লিকাদের বাগানেও
লালপিঁপিলিকারা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায়

যেমন, লুটপাটের লাটিম ঘুরাতে ঘুরাতে
কেউ কেউ চাঁদের গ্রহে যায়
কেউ কেউ হাঁড়িপাতিল নিয়ে যায়
বেগমপাড়ায়

অথচ, পাখিশিল্পের নীরবতা
পড়ে আছে দূরের নির্জনতায়...


** অলক ও অস্পৃশ্য রোদ

শাহেদ সাদ উল্লাহ

অলক চলে গেলে, 
মরে গিয়েছিল দূর্বাঘাসের মতো তার অনিদ্র আকাশ,
বসন্তে ঘরকোনো উইপোকাগুলোও।

তবুও
আমার অতলে, অস্পৃশ্য
রোদগুলো ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেÑভাবি, 
এ জীবন কিছু নয়, তৃষ্ণার্ত কাকের ডাকের মতো।
যে দিন ত্রস্ত নিঃশব্দতা পানকৌড়ির মতো ডুবে ছিল, সে দিনও কাঁচ-ভাঙা রোদ এসে বুক পুড়িয়ে দিত। সেই দাহে পোড়া ঘ্রাণ ছাড়া কী ছিল বলো?

মনে হতো, আজো মনে হয়,
মানুষের ডাক কখনো-কখনো অন্ধ নক্ষত্রের মতো—চোখ বুজে রাখে। 
তবুও
চোখ থেকে চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। হাত থেকে হাতের স্পর্শ উড়ে যায়। তারপর আঙুল থেকে আঙুল...


** জন্মস্বপ্ন

শাহীন মাহমুদ 

তরলের সঙ্গে অনলের এক উদ্ভট আড্ডা 
তিনজন জ্ঞানপ্রেমমগ্ন বনেদি গৃহস্থের সঙ্গে আনাড়ি মূর্খ আমি
রাত যত গভীর থেকে গভীরে
নড়ে চড়ে বসছেন প্লেটো, আরিস্টটল আর প্লোটিনাস।

ধ্যানস্থ প্লেটোকে বললুম- গুরু আজ আমার জন্মদিন-আরিস্টটল সরল দোলকটা ছেপে ধরলেন
চিন্তা চাষিদের শৃঙ্খলিত সূক্ষ্মবুদ্ধি মন্থন করতে করতে বললেন- শুভ জন্মদিন।
প্লোটিনাস হো হো করে হেসে উঠে বললেন
চলো-আমাকে অনুসরণ করো
জন্মস্বপ্ন নিয়ে সূর্যের মতো ডুবে যাও
আমার ছায়া তোমার সংগী হবে
আমিও ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি 
শেষ পৃষ্ঠায় পৌঁছে যাব একদিন।


** আজকাল

রেবেকা ইসলাম 

আজকাল একটুতেই 
অনেক কিছু হারিয়ে ফেলি,
রৌদ্র হারিয়ে ফেলি 
ঝকঝকে ভোরে,
বৃষ্টির শব্দ হারাই 
শ্রাবণের বিকেলে, 
রক্তজবার রঙ খুঁজি
আগুন সন্ধ্যায়,
আলো খুঁজে ফিরি 
ভরা জোছনায়
রাতের কালো হারাই
ঘোর অমাবস্যায়।
আজকাল বড়ো ভয় হয়
বড়ো বেশি ভয় হয় 
কখন না আবার হারিয়ে ফেলি
তোমার ভুবনে থেকেও
তোমাকে।


** বিরহ চিরকুট

জহিরুল হক বিদ্যুৎ

হাত বাড়ালেই কত কিছু ছোঁয়া যায়,
ছোঁয়া যায় না গভীর হৃদয়ের নির্ঝর-
না ছোঁয়ার অধরায় অনেকেই ডুবেছে
নিমগ্ন স্মৃতির নস্টালজিক হাঁটুজলে।
কোমলবৃত্তিরা নির্ঝরে মাথা রেখে
বয়ে যায় আঁকাবাঁকা দুর্গমপথে
তবু অবিশ্বাসী হাতগুলো রক্তাক্ত করে
কারবালার ফোরাত নদীর জল।
যে চোখ অনন্ত শপথে হেসে ওঠে
যৌবনের কলাপাতা রঙা রোদ্দুরে,
তবে কেন বেলাশেষে ফিরে আসে
একাকিত্ব বেদনার বিরহ চিরকুট?
শিশিরভেজা ভোর, ঝিঁঝিঁ ডাকা দুপুর,
গেরুয়া বিকেলগুলো ফিরে আসে বারবার।
তবু নিশি মরুতে আবৃত্তির জলসা বসে
ব্যর্থ প্রণয়ে আঁকা কবিতার মূর্ছনায়।


** তবু তোমাকেই খোঁজে

উমর ফারুক

দিন মাস বছর কেটে যায়
ঘড়ির কাঁটা থামে না কখনো 
তবু তোমাকে মন খোঁজে
ফাগুনের আগুনে লাল পলাশের ভুবনে।

রৌদ্রের দাপট খর্ব হয় মেঘ চাপাতে 
ঝড় বৃষ্টি শেষে হাসে পৃথিবী
কিন্তু, অব্যক্ত আবেগ খোঁজে তোমাকে
দিন শেষে রাতের গহীন আঁধারে।

দক্ষিণা বাতাসে উতলা মন
ঢেউ ভাঙে চোখের অশ্রুতে 
বিচ্ছেদের করুণ সুরে তোমাকেই খোঁজে
সময় অসময়ে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে।
 

×