ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালির খাদ্যপ্রিয়তা ইতিহাস ও সাহিত্যে

প্রদীপ দত্ত

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২ মার্চ ২০২৩

বাঙালির খাদ্যপ্রিয়তা ইতিহাস ও সাহিত্যে

বাঙালি বরাবরই ভোজনরসিক। তারা যেমন খেতে ভালোবাসে তেমনি ভালোবাসে অন্যদের খাওয়াতে

বাঙালি বরাবরই ভোজনরসিক। তারা যেমন খেতে ভালোবাসে তেমনি ভালোবাসে অন্যদের খাওয়াতে। বাঙালির আতিথেয়তার সুনাম বিশ্ববিদিত। চীনা পরিব্রাজক হিউয়ন সাঙ তার সি-ইউকি নামক ভ্রমণ বিবরণীতে এ ভূখ-ের মানুষের খাদ্যপ্রিয়তা, আতিথেয়তা, সরলতা সব কিছুরই প্রশংসা করেছেন। ঝড়-ঝঞ্ঝা বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যুদ্ধবিগ্রহ মহামারী এমনকি ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের ঘাত প্রতিঘাত সয়ে বাঙালিকে তার কাল অতিক্রম করতে হয়েছে। কিন্তু নিজের স্বভাব আর সংস্কৃতি থেকে সে কখনো সরে আসেনি। পলিবিধৌত এই উর্বর সমভূমিতে বিচিত্র ফসল ফলিয়ে সৃষ্টি করেছে আরও বৈচিত্র্যময় খাদ্য উপকরণ।
ইতিহাস গবেষণার এক প্রধান উপাদান হলো সমকালীন সাহিত্য, শিলালিপি, তাম্রশাসন, পাথর কিংবা মাটির ফলক, সীলমোহর চিত্রকলা প্রভৃতি। চর্যাপদের কাল থেকে মধ্যযুগের সাহিত্য শিল্পকলা আর পুরাকীর্তির নমুনায় বাঙালির খাদ্যাভ্যাস আর ভোজনপ্রিয়তার যে চিত্র ফুটে উঠেছে; তা থেকে আমাদের বৈচিত্র্যময় খাদ্যরুচি আর সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। চর্যাপদের অন্যতম পদকর্তা শবরপাদের একটি বিখ্যাত চর্যাগীতিতে বলা হচ্ছে ‘কঙ্গুচিনা পাকেলা রে, শবর শবরী মাতেলা’ এর অর্থ হচ্ছে চিনা পেকেছে তা কাটার সময় হয়েছে তাই শবর পুরুষ ও নারী আনন্দে মেতে উঠেছে।

এই চিনা ও কাউন জাতীয় শষ্য যদিও এখন প্রায় বিলুপ্ত তবুও ব্রহ্মপুত্র যমুনার চরাঞ্চলে কিছু কিছু জায়গায় এখনো এসবের চাষ দেখতে পাওয়া যায়। মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত একটি ব্রাহ্মীলিপিতে তিল সরিষা ও ধানের উল্লেখ পাওয়া যায়। বুকানন হ্যামিলটনের উদ্ধৃতি দিয়ে উইলিয়াম হান্টার লিখছেন বহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় আউশ ও আমন ধানের চাষ হতো, তিনি প্রায় একশত সত্তর জাতের আমন ধানের কথা উল্লেখ করেছেন। কবি রামেশ^র চক্রবর্ত্তী আঠার শতকের শুরুর দিকে শিবায়ন রচনা করেছিলেন সেখানে রচিত তাঁর পদে শতাধিক ধানের নামাবলি পাওয়া যায়।

এগুলো একান্তই বাংলার ধান। যেমন- ‘ছত্রখালি জটাখালি জগন্নাথ ভোগ/জামাঞিলাডু জলারাঙ্গী জীবন সংযোগ/ ঝিঞাখালি বলাইভোগ ধূল্যা বিলক্ষণ /নিমাঞি নন্দনশালি রূপনারায়ণ।’ বানগড়ে প্রাপ্ত একটি মাটির সীলে ধানগাছের চিত্র উৎকীর্ণ আছে। লিপিমালায় গ্রামের তিনটি উৎপন্ন দ্রব্যের নাম পাওয়া যায়। যেমন আম মহুয়া ও ধান।
সুবিখ্যাত প্রতœলেখক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া তাঁর ‘বাংলাদেশের প্রতœসম্পদ’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে  নব্যপ্রস্থর যুগের পরে পরেই এদেশের অধিবাসীরা এক সুসভ্য জাতিতে পরিণত হলো। বর্তমানকালের অনেক সুসভ্য জাতি যখন যাযাবরের মতো জীবন যাপন করতেন তখন বাংলার আধিবাসীরা এক সভ্য ও সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করতেন। তারা চাষ করতে জানতেন। জমি চাষ করে ধান উৎপাদন করে সেই ধান থেকে চাল তৈরি করে সেই চাল রান্না করে ভাত খেয়ে জীবনধারণ করতেন।

তারা মাছ ধরতে ও সেই মাছ রান্না করে ভাতের সঙ্গে খেতে জানতেন।’ লক্ষণ সেনের শাসনামলের শেষ দিকে সদুক্তিকর্ণামৃত সংকলনটিতে সভাকবি যোগেশ^রের একটি শ্লোকে পাওয়া যায় ‘শালিধানচ্ছেদ হালিকাগৃহা: সংসৃষ্টনীলোৎপল/ স্নিগ্ধ শ্যাম যব-প্ররোহ-নিবিড় ব্যদীর্ঘ সীমোদর :’ কাটা শালিধানে সমৃদ্ধ চাষীর ঘর, যবের ফলনও ভালো হয়েছে, যবের শীষগুলো নীলপদ্মের মতো। ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর একটি অভিভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায় তাঁর ‘বাঙালার ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখছেন ‘যখন লোকে লোহার ব্যবহার জানিত না, তখন বেতে বাঁধা নৌকায় চড়িয়া বাঙালিরা নানা দেশে ধান চাল বিক্রয় করিতে যাইত। সে নৌকার নাম ‘বালাম নৌকা’।

তাই সে চালের নাম ‘বালাম’ হইয়াছে।’ ভাতের সঙ্গে বিভিন্ন পদ দিয়ে খাবার সংস্কৃতি অনেক পুরনো। ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্ত্তী চন্ডীমঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন। প্রথমখ-ের রূপক চরিত্রগুলো শিব সতী মেনকা গৌরী প্রভৃতি। এখানে স্বয়ং শিব গৃহকর্তা, তিনি তাঁর স্ত্রী গৌরীকে দুপুরের খাবারের জন্য বেশ কয়েকটি পদ রাঁধতে বলছেন। তাই গৌরী রেঁধেছেন নিমপাতা দিয়ে সিম ও বেগুন ভাজা, কুমড়ো ও বেগুন দিয়ে সুক্তো, নটেশাক ও কাঁঠালবিচি সঙ্গে ডালের বড়ি ভাজা, সরষে শাক ভাজা, কটু বা সরিষার তেলে বথুয়ার শাক ভাজা, এগুলো পরিবেশিত হবে খাবারের প্রথম পর্বে অর্থাৎ শুরুতে, এরপর শিব আদেশ করছেন ‘রান্ধিবে মুসুরী সুপ দিয়া টাবাজল, খন্ডে মিশাইয়া রান্ধ করঞ্জার ফল।’

টাবা অর্থাৎ পাতিলেবু দিয়ে মুসুরী ডাল আর গুড় দিয়ে করঞ্জা ফলের টক বা চাটনি। এর পর আরও আছে ঘিয়ে ভাজা বড়ি, ছোলার ডাল, মানকচু বাটা এবং ঘি ও জিরা দিয়ে পালংশাকের ঝোল। খাবারের শেষ পর্যায়ে থাকছে কাসুন্দি ও পাতিলেবুর রস। এখানে এতগুলো পদ রান্না করার পরও শিব রসিকতা করে বলছেন ‘আপনি উজ্জোগ যদি কর তুমি গৌরী, ভোজন করিয়া খাই হাঁড়ি দশ ক্ষীরি’ অর্থাৎ এত কিছুর পরও দুধের ক্ষীর হলে ভালো হয়।

একই কাব্যগ্রন্থের ব্যাধপর্বে ফুল্লরা ও কালকেতুর উপাখ্যানে ব্যাধ কালকেতু সারাদিন বনে-বাদাড়ে পশুপাখি শিকার করে দিন শেষে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে তার স্ত্রী ফুল্লরা যে খাবার পরিবেশন করেছিল তাতে বলা হচ্ছে ‘একশ^াসে সাতহাড়ি আমানি উজাড়ে’ আমানি অর্থ পান্তাভাত, তাছাড়া খুদের জাউ মসুরী আলু ওল পোড়া কচু করঞ্জা আমড়া দধি ইত্যাদি খাবারের বর্ণনা আছে। এখানে প্রান্তিক মানুষের দীন আয়োজন, তাই বলা হয়েছে ‘অভাগী ফুল্লরা করে উদরের চিন্তা’ কাজেই সে পান্তাভাত আর খুদ-কুড়াতেই সন্তুষ্ট। কবিকঙ্কণ-এর প্রায় দুশো বছর পর ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর অন্নদামঙ্গল রচনা করেছিলেন।

এই কাব্যের শিব-গৌরী অংশে তাদের বাসভূমি কৈলাশ যেন বঙ্গভূমির মতই শষ্যপূর্ণা। এখানে  গৌরী এত পরিমাণ ভাত রান্না করেছেন যে অন্নের পর্বত সৃষ্টি হয়েছে, ‘ঘৃত মধু দুগ্ধ দধি সাগর সাগর’। ঈশ^র পাটনি দেবী অন্নপূর্ণার কাছে বর চেয়েছিলেন ‘প্রণমিয়া পাটনি কহিছে জোর হাতে/ আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। প্রসন্ন হয়ে দেবী বর দিয়েছিলেন ‘দুধে ভাতে থাকিবে তোমার সন্তান’। চিরকাল সাধারণ বাঙালির এটুকুই চাওয়া। তবে অন্নদামঙ্গল কাব্যের তৃতীয় অংশে আবার সেই মহাভোজের আয়োজন।

অন্নদার এয়োজাত পর্বে ভক্ত ভবানন্দ মজুমদারের দুই স্ত্রী পদ্মমুখী ও হাস্যমুখী রান্না চড়িয়েছেন, সেখানে তেইশ প্রকার পদের বর্ণনা আছে। যার মধ্যে শাকভাজা, শুক্তানি, নানা রকম ডাল, দুধ দিয়ে কলার থোরের ডালনা, বড়াবড়ি, কলা, মুলা ও নারিকেল ভাজা। কিন্তু শুধু নিরামিষে বাঙালির রসনা তৃপ্ত হয় না; তাই কাতলা রুই চিতল মাগুর ফলুই কই চিংড়ি শোল প্রভৃতি মাছের ঝাল-চচ্চড়ি-অম্বল, তারপর মাছ ও কাছিমের ডিম ভাজা। এবার ভারত চন্দ্র লিখছেন ‘কচি ছাগ মৃগ মাংস ঝাল ঝোল রসা /কালিয়া দোলমা বাগা সেক্চি সমসা/ অন্নমাংসে শিকভাজা কাবাব করিয়া/ রান্ধিলেন মুড়া আগে মসলা পুরিয়া।

কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম নিরামিষ পদ পর্যন্তই থেমেছিলেন কিন্তু ভারতচন্দ্র আমিষ তথা মাছ মাংস তার পদে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, সেই সঙ্গে লক্ষণীয় যে ততদিনে মোগলাই ধরনের পদ যেমন শিককাবাব, মাংসের কিমা দিয়ে সমুচা, ভাত ও মাংস মিশিয়ে বিরানী এসব মধ্যবিত্তের খাবার তালিকায় ঢুকে পড়েছে। শেষে আছে ‘সুধারুচী মচ্মচে লুচি, অম্বল-পায়েস’।  
‘পড়িয়া লিখিয়া মরিব দুখে, মৎস্য মারিব খাইব সুখে’ এই আপ্তবাক্যটি কৌমভিত্তিক কৈবর্তজীবন থেকে সকল বাঙালির মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে। বৌদ্ধযুগে সর্বানন্দের অমরকোষ গ্রন্থের টিকা অনুযায়ী দেখা যায় পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষ (বঙ্গল বচ্চা) সিধ্মলা (শুঁটকি) মাছ ভালোবাসতো। কবি ঈশ^রগুপ্ত লিখছেন ‘ভাত মাছ  খেয়ে বাঁচে বাঙালি সকল/ধানে ভরা ভূমি তাই মাছ ভরা জল’।

বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল বা পদ্মপুরাণ পুঁথিতে বেহুলার বিয়ের অনুষ্ঠানে মাছের বিচিত্র রকমের পদের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন বেসন দিয়ে চিতলমাছের পেটি ভাজা, বড় বড় কৈ মাছ লবঙ্গ দিয়ে তেলে ভাজা, মহাশৌল মাছের অম্বল, রুই মাছের মাথা দিয়ে মাষকলাই এর ডাল, ইলিশ ভাজা ইত্যাদি। বিজয় গুপ্ত এখানে লিখছেন ‘আনিল ইলিশ মৎস্য করিল ফালা/তাহা দিয়া রান্ধে ব্যাঞ্জন দক্ষিণ সাগর কলা/মাংসেতে দিবার জন্য ভাজে নারিকেল/ছাল খসাইয়া রান্ধে বুড়া খাসির তেল’। রান্নায় লবঙ্গ তেজপাতা দারুচিনি ধনিয়া এসবের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় অনেক পদকর্তার রচনায়।

মনসামঙ্গলের কবি দ্বিজ বংশীদাস লিখছেন ‘ভাজিছে খাসির তৈলে দিয়া তেজপাতা/ধনিয়া সুলপা বাটি  দারুচিনি যত/মৃতা মাংসে ঘৃত দিয়া ভাজিলেক কত’। অমরকোষ গ্রন্থে করকচ্ লবনের উল্লেখ পাওয়া যায়। বেশ কিছু পদে ঘি এর ব্যবহার পাওয়া যায়। প্রাকৃত পৈঙ্গলের বহুল ব্যবহৃত পদটি বেশ আলোচিত ‘ওগরা ভত্তা, রম্ভঅ পত্তা/গাইক ঘিত্তা, দুগ্ধ সংযুক্তা/মৌইনি মচ্ছা নালিতে গচ্ছা/দিজ্জ্্্্্্্্ই কন্তা খায় পূণ্যবন্তা।’ কলা পাতায় গরম ভাত ঘি দুধ মৌরলামাছ আর পাটশাক যদি কোন নারী তার স্বামীকে পরিবেশন করে তবে  সে বড় ভাগ্যবান।

আর একটি পদে বলা হচ্ছে ‘সের অক্ক জঁই পাঅই ঘিত্তা/মন্ড বিশ পকাইল নিত্তা’ অর্থাৎ একসের ঘি প্ওায়া গেলে প্রতিদিনই বিশটা মন্ডা বানাতাম। ষোড়শ শতকের কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত শ্রী চৈতন্য চরিতামৃতে হরেক রকম মিষ্টি মিষ্টান্নের বিবরণ আছে। যেমন কাঞ্জিবর ক্ষীরপুলি ক্ষীরখ- সরভাজা চন্দ্রপুলি মনোহরা পায়েস দই ম-া ইত্যাদি। প্রাচীনতম বাংলা কাব্যের কবি শাহ্ মোহাম্মদ সগীরের ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্যগ্রন্থে বেশ কয়েক প্রকার মিষ্টি মিষ্টান্নের বর্ণনা আছে।

‘কনক কটেরা ভরি মধুমিষ্ট মুখে/জলিখা তুলিয়া দেন্ত ইউসুফক মুখে/ ঘৃত-মধু শর্করা বহুল দুগ্ধ দধি/ সুধারসে পুরিত সন্দেশ নানা বিধি। আমাদের লোকসাহিত্যের ছড়া পাঁচালি বারমাসীতে প্রাচীন বাংলাকে খুঁজে প্ওায়া যায়। এমনই একটা বারমাসীতে বলা হচ্ছে- আষাঢ়ে কাঁঠাল  দৈ/শ্রাবণে ঘোল পান্তা /ভাদ্রে তালের পিঠা/ আশ্বিনে শশা মিঠা / কার্ত্তিকে ওল/ অঘ্রাণে খলিসা মাছের ঝোল/ পৌষে আতপ চাল/মাঘে বেল, ফাল্গুনে তেল/চৈত্রে চালিতা বৈশাখে নালিতা।  

ড. নীহাররঞ্জন রায় ‘বাঙালির ইতিহাস’ বইয়ে বিবাহভোজ সম্পর্কে লিখছেন ‘বিবাহভোজে ব্যাঞ্জন তরকারি প্রভৃতির বাহুল্য সেই যুগেও ছিল, এবং এত বেশি আয়োজন হইত যে লোকেরা সব খাইয়া এমনকি গণনা করিয়াও উঠিতে পারিত না। এই ধরনের বৃহৎ ভোজে সামাজিক অপচয়ের কথা ই-ৎ সিঙ বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন’। বাঙালির এই ভোজনবিলাসের কথা মধ্যযুগের সাহিত্যেই থেমে থাকেনি বিদ্যাসাগরের ‘বেতাল পঞ্চবিংশতিতে’ যোগী কর্তৃক মন্ত্রবলে যক্ষকন্যার সৃষ্টি ও অতিথি আপ্যায়নে বিপুল আয়োজন  দেখতে পাওয়া যায়। গল্পগুচ্ছের ‘যজ্ঞেশ^রের যজ্ঞ’ ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন ‘পাত্রের দল একদিন আসিয়া মেয়েটিকে পছন্দ করিয়া ক্ষীরের ছাঁচ, নারিকেলের মিষ্টান্ন ও নাটোরের কাঁচাগোল্লা খাইয়া গেল।’ 
  এভাবেই চলেছে ভোজনপ্রিয় বাঙালির বৈচিত্র্যময় খাবারের স্বাদ আস্বাদন। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় আমাদের এই ভূখ-ে অনেক জাতিসত্তার যেমন আগমন ঘটেছে তেমনি তাদের বয়ে আনা সংস্কৃতি জীবনচর্চা খাদ্যাভ্যাস অনেক কিছুই আমাদের সমাজজীবনে প্রবিষ্ট হয়েছে। তাতে হয়তো কখনো কখনো আমাদের প্রাচীনত্ব হারিয়েছে  কিন্তু আধুনিকতা ও বৈচিত্র্য কম আসেনি।

×