ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শেকড়ের সন্ধানে ইংরেজি মাস ও বছর

মো. জোবায়ের আলী জুয়েল

প্রকাশিত: ২১:১৬, ৫ জানুয়ারি ২০২৩

শেকড়ের সন্ধানে ইংরেজি মাস ও বছর

যদি আমাদের জিজ্ঞেস করা হয়, ইংরেজি বারো মাসের নাম কি কি

যদি আমাদের জিজ্ঞেস করা হয়, ইংরেজি বারো মাসের নাম কি কি? তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা বলতে শুরু করব জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ...। তেমনি দিনগুলোর কথা বলা হলে বলব, সানডে, মানডে, ইত্যাদি। এতো জানা কথা। সবাই তা জানে। কিন্তু নামগুলো কোত্থেকে এলো সে কথা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না।
সে এক মজার ইতিহাস। প্রথমে ইংরেজি দিনগুলোর কথাই ধরা যাক। কিন্তু তার আগে ‘টিউটনদের’ সম্বন্ধে আমাদের কিছু জানা দরকার। কেননা, সপ্তাহের সাতটি দিনের ভেতর চারটি দিনের নামকরণ টিউটনরাই করেছিল।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, রোমান স¤্রাজ্যের উত্তর প্রান্তে বহু যুগ ধরে শক্তিমান একদল লোক বাস করত। তারা লেখাপড়া কিছুই জানত না। তবে যুদ্ধ করতে তারা ভালোবাসতো। অর্থাৎ অর্ধ সভ্য ছিল এই সব লোকেরা। টিউটনদের গায়ের রঙ ছিল সাদা। ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও আমেরিকানদের অনেকেই পূর্ব পুরুষ ছিল এই টিউটনরা।
গ্রিক বা রোমানদের মতো টিউটনরাও দেব-দেবতায় বিশ্বাসী ছিল। তবে তাদের দেব দেবীরা ছিল ভিন্ন ধরনের। গ্রিক, রোমানদের দেব-দেবীর সঙ্গে তাদের কোনো মিল ছিল না। টিউটনের শ্রেষ্ঠ দেবতার নাম ‘উডেন’। উডেন হলো যুদ্ধের এবং আকাশের দেবতা। টিউটনরা মনে করত উডেন আকাশের ‘ভাল হাল্লা’ নামের এক আজব প্রাসাদে বাস করত। এই দেবতার নামানুসারেই উডনেস-ডে বা বুধবার নামকরণ হয়েছে।
টিউটনদের পরবর্তী শ্রেষ্ঠ দেবতা ছিল ‘থর’। থর ছিল মেঘ-গর্জন ও বিদ্যুতের দেবতা। হাতে একটা হাতুড়ি নিয়ে থর দূর-দূরান্তে অবস্থিত ঠা-া দেশের দানব-দৈত্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করত। তার নামানুসারেই হয়েছে ‘থারস-ডে’ বা বৃহস্পতিবার।
টিউটনদের দুজন দেবতার একজনের নাম ছিল ‘টিউ’ আর একজনের নাম ছিল ‘ফেরা’। তাদের নামনুসারে টুইস ডে বা মঙ্গলবার এবং ফ্রাই-ডে বা শুক্রবার হয়েছে। বাকি তিনদিন সান-ডে বা রবিবার, মান-ডে বা সোমবার হয়েছে সূর্য ও চন্দ্রের নামানুসারে। গ্রিকদের কৃষি ও সভ্যতার দেবতা ‘স্যাটান’ এর নামানুসারে স্যাটার-ডে বা শনিবারের নামকরণ হয়েছে।
এবার ইংরেজি মাসগুলোর নাম কি করে হলে সে কথাই বলছিÑ
প্রথমে আসছে জানুয়ারি মাসের কথা। রোমানদের বহু দেব-দেবী ছিল। তোরণ ও দরজার জন্য ছিল দুই মুখ বিশিষ্ট এক দেবতা নাম তার ‘জানুস’। আমরা জানি কোন জায়গায় প্রবেশ করতে হলে প্রথমে তোরণ বা দরজা অতিক্রম করতে হয়। সেই জন্য জানুসকে আরম্ভের দেবতাও বলা হতো।
মাসগুলোর ভেতর জানুয়ারি প্রথম থাকায় দেবতা জানুস এর নামানুসারে নামকরণ করা হয়।
মাসের পনেরো তারিখে রোমনরা পবিত্র ও শুদ্ধির জন্য ভোজের আয়োজন করত। ল্যাটিন ভাষায় এটাকে বলা হয় ‘ফেব্রুয়া’ সেই থেকে পরবর্তী মাসকে তারা ফেব্রুয়ারি নামে অভিহিত করত।
মার্চ মাসের নাম এসেছে রোমানদের দেবতা ‘মারস’ এর নাম হতে। মারস্ ছিলেন যুদ্ধ ও কৃষির দেবতা। অ্যাফ্রোডাইট ছিলেন প্রেমের দেবী। গ্রিকরা সংক্ষেপে তাকে ‘অ্যাফ্রো’ নামে ডাকত। এপ্রিল মাসের নাম হয়েছে অ্যাফ্রো দেবীর নামানুসারে।
রোমানদের দেবী ‘মে’ ও ‘জুনো’র নামানুসারে ইংরেজি মে ও জুন মাসের নাম হয়েছে। জুনো ছিল স্বর্গের দেবী। তাছাড়া মেয়েদের অভিভাবিকা ও বিয়ের দেবীও ছিলেন জুনো।
রোমের বীর সেনাপতি সীজারের নামেই ইংরেজি জুলাই মাসের নামকরণ করা হয়েছে। সীজারের পুরো নাম ছিল জুলিয়াস সীজার। তার নামের প্রথম শব্দ জুলিয়াস থেকে জুলাই কথাটি গ্রহণ করা হয়েছে,
অগাস্টাস সীজার ছিলেন সীজারের পোষ্যপুত্র। তার আসল নাম ছিল অক্টভিয়াস্। বিশাল স¤্রাজ্যের অধিপতি হয়ে তিনি এই উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। রোমকদের কাছে সুশাসনের জন্যে তিনি দেবতা রূপে পুঁজিত হতেন। তার নামেই অগাস্ট মাসের নামকরণ করা হয়েছে।
‘সেপ্টেম’ ‘অক্টো’ ‘নভেম্’ ও ‘ডিসেম্’ প্রভৃতি ল্যাটিন শব্দগুলো থেকে বছরের বাকি চারটি মাস যথাক্রমে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের নামকরণ করা হয়েছে।
ল্যাটিন ভাষায় সেপ্টেম্ শব্দের অর্থ সাত, অক্টো অর্থ আট, নভেম্ ও ডিসেম অর্থ যথাক্রমে নয় ও দশ। সুতরাং রোমানদের কাছে এই মাসগুলো ছিল যথাক্রমে সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম মাস। কিন্তু ইংরেজরা এই নিয়ম পাল্টে দিয়েছে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস আজ আর সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম মাস নয় বরং নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ মাস। এভাবেই ইংরেজি মাসের নামকরণ হয়েছে।

×