১৬ নভেম্বর, ১৯৮৯-এ, আমি প্যারিসে সোভিয়েত দূতাবাসে ফোন করে মিঃ এস এর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম
১৬ নভেম্বর, ১৯৮৯-এ, আমি প্যারিসে সোভিয়েত দূতাবাসে ফোন করে মিঃ এস এর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। সুইচবোর্ড অপারেটর উত্তর দেয়নি। দীর্ঘ নীরবতার পর, একজন মহিলার কণ্ঠস্বর বলল : ‘আপনি জানেন, মিস্টার এস গতকাল মস্কোতে ফিরে গিয়েছেন।’ সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিলাম। আমার মনে হয়েছিল যে আমি এই বাক্যটি আগেও ফোনে শুনেছি।
শব্দগুলো একই ছিল না তবে তাদের একই অর্থ ছিল, একই রকম ভয়ঙ্কর ওজন ছিল এবং বিশ্বাস করা অসম্ভব ছিল। একটু পরে, সাড়ে তিন বছর আগে আমার মায়ের মৃত্যুর ঘোষণার কথা মনে পড়ে, কিভাবে হাসপাতালের নার্স বলেছিলেন : ‘আজ সকালে নাস্তা করার পর আপনার মা মারা গেছেন।’
বার্লিন প্রাচীর এক সপ্তাহ আগে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত সোভিয়েত শাসনব্যবস্থা একের পর এক পতন ঘটছিল। যে ব্যক্তি সবেমাত্র মস্কোতে ফিরে এসেছিলেন তিনি ছিলেন ইউএসএসআর-এর বিশ্বস্ত দাস, প্যারিসে পদায়ন করা একজন রাশিয়ান কূটনীতিক।
তার আগের বছর মস্কো, তিবিলিসি এবং লেনিনগ্রাদে লেখকদের সম্মেলনে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, একটি সমুদ্রযাত্রায় আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য তাকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। আমরা শেষ রাত একসঙ্গে কাটিয়েছি, লেনিনগ্রাদে। ফ্রান্সে ফিরে আসার পর, আমাদের দেখা হতে থাকলো। তার সঙ্গে পরিচয়ের পরে আমাদের যাপনের সময় সে ছিল কিউবা ফেরত রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির তরুণ সদস্য (ঈচঝট) ও গোয়েন্দা।
সে দৃঢ় উচ্চারণে দ্রুত ফরাসি কথা বলতেন। যদিও বাহ্যিকভাবে গর্বাচেভ এবং পেরেস্ত্রোইকার পক্ষপাতী, তিনি যখন মদ্যপান করতেন তখন তিনি ব্রেজনেভের জন্য শোক করেছিলেন এবং স্ট্যালিনের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কথা গোপন করেননি। তখন অবশ্য তার সব কার্যকলাপ সম্পর্কে বিশেষ কিছু গভীরভাবে জানতাম না।
আজ ভাবতেই অবাক লাগে এর বেশি কিছু আমিও জানতে চাইনি।
ঐ সময় আমি আমার কিশোরবেলা নিয়ে কাজ করছিলাম। কৈশোরের জায়গা, জমি, মানুষগুলোকে তুলে ধরছিলাম আমার লেখায়। সে ফ্রান্স ত্যাগ করার পর, আমার মধ্যে যে আবেগ ছড়িয়ে পড়ে সে সম্পর্কে একটি বই লিখতে শুরু করি। আমি এটি ১৯৯২ সালে প্রকাশ করি।
জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি ২০০০ এ এস-এর সঙ্গে আমার সম্পর্কের বছরগুলোতে লেখা আমার জার্নালগুলো পুনরায় পড়তে শুরু করি। আমি সেগুলো লেখার পাঁচ বছর হয়ে গেছে। (এখানে আর উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, লেখাগুলো আমার কাছে গভীর গোপন হয়ে পড়েছিল?) আমি বুঝতে পারছিলাম যে সেই পৃষ্ঠাগুলোতে লুকিয়ে রয়েছে সত্য; যা সরল উপলব্ধি আবেগেরও গভীর কিছু . . . ভীষণ কাঁচা এবং অন্ধকারে ঢাকা, পরিত্রাণ ছাড়া, উৎসর্গ আর নিবেদনে ভরা- আমি তাই ভাবতে থাকি, এটিও আলোতে আনা উচিত।
আমি এটি টাইপ করার সময় মূল পাঠ্যের কোনো অংশ পরিবর্তন বা অপসারণ করিনি। (নিচের পাঠ্যটি মূল থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।) আমার জন্য, যে কোনো মুহূর্তের চিন্তাভাবনা এবং সংবেদনগুলোকে ধারণ করার জন্য কাগজে লেখা শব্দগুলো সময়ের মতো অপরিবর্তনীয়।
মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৭,১৯৮৮
তিনটি দৃশ্য আলাদা। সেই সন্ধ্যায় (রবিবার) এসএর রুমে, যখন আমরা একে অপরের কাছাকাছি বসেছিলাম, স্পর্শ করছিলাম, তখন কোনো কথাই হচ্ছিল না, কী হতে যাচ্ছে তাই শুধু অনুভব করছিলাম, যার সবটাই আমার ওপর নির্ভর করতে থাকে। প্রতিবার সে তার সিগারেটের ছাই মেঝের পাত্রে রাখার সময় আমার পা তার হাত দিয়ে মুছে দেয়। সবার সামনে।
তারপর আমরা এমনভাবে কথা বলছিলাম যেন খুব স্বাভাবিক, আমাদের অন্য কোনো খেয়াল নেই! তারপর অন্যরা চলে যায় (গধৎরব জ., ওৎèহব, জঠচ) কিন্তু ঋ. ফিরে আসে। আমি জানি যে এখন যদি আমি এস-এর রুম ছেড়ে চলে যাই তবে আমার ফিরে আসার শক্তি থাকবে না। তারপর ঋ. ঘরের বাইরে চলে যায়, দরজা প্রায় খোলা, এবং ঝ. এবং আমি দুজন দুজনের দিকে মনোযোগ দিই। তারপর আমরা ঘর বন্ধ করে দিই। আমার পিঠ, ধীরে দেয়ালে চাপতে থাকে, আলো জ্বলছে, নিভে। আমি আমার রেইনকোট, হ্যান্ডব্যাগ, স্যুট জ্যাকেট ফেলে দিই। ঝ. আলো নিভিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় মুহূর্ত, সোমবার বিকেলে। যখন আমি আমার সুটকেস প্যাক করা শেষ করেছি, সে আমার রুমের দরজায় ধাক্কা দেয়। আমরা দরজায় একে অপরকে আদর করি। সে আমাকে এতটাই চায় যে আমি নতজানু হয়ে তাকে আমার মুখের কাছে টেনে নিতে বাধ্য করি। সে নীরব, তারপর শুধু তার রাশিয়ান উচ্চারণে আমার নামটা মন্ত্রের মতো জপতে থাকে।
আমার পিঠ দেয়ালে চাপা পড়েছে- অন্ধকার (সে আলো জ্বালাতে চান না) - পূর্ণ নীরবতায় ভরা ঘর।
তৃতীয় মুহূর্তটি মস্কোর জন্য স্লিপার ট্রেনে। আমরা পিছনের বগিতে গভীর চুম্বনে নিমগ্ন, আমার মাথা একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের পাশে (যা আমি পরে শনাক্ত করি)। এই সব ঘটেছে লেনিনগ্রাদে।
গতকাল ফ্লাইটে বাড়ি ফেরার পর থেকে, আমি মুহূর্তগুলো পুনর্গঠন করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা আমাকে এড়িয়ে যায়। আমি নিশ্চিত যে শনিবার, জাগোর্স্কে, যখন আমরা ধন-সম্পদে ভার মঠ পরিদর্শন করি, আমাদের পায়ে চপ্পল, সে আমাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য কোমর ধরে নিয়ে যায় এবং আমি তখনই জানি যে আমি তার সঙ্গে সয্যায় যেতে রাজি হব। আমরা সিøপার ট্রেনে লেনিনগ্রাদের উদ্দেশে রওনা হই।
হোটেল ইউরোপে খাবার খাচ্ছি : আমি তার পাশে বসে আছি, আর ভ্রমণের শুরু থেকে এটি অনেকবার ঘটেছে। (একদিন, জর্জিয়ায়, যখন সে আমার পাশে বসেছিলেন, আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার জিন্সের প্যান্টে আমার ভেজা হাত মুছে নিয়েছিলাম।) হার্মিটেজ পরিদর্শনে, আমরা খুব বেশি কাছাকাছি হইনি। ফেরার পথে নেভার ওপর একটি সেতু পার হয়ে, আমরা আমাদের কনুই দিয়ে প্যারাপেটে হেলান দিয়ে থাকি। হোটেল কারেলিয়াতে ডিনার : মারিকে নাচতে আনার জন্য জঠচ তাকে কয়েকটা ডিমের লোভ দেখায়।
আমি জানি তারও আমার মতই নাচার ইচ্ছা আছে। (আমি আরেকটি পর্বের কথা ভুলে গেয়েছিলাম : ব্যালে, ডিনারের আগে। তার পাশে বসে, আমি তার জন্য আমার সব নিবেদন ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না, বিশেষ করে পারফরম্যান্সের দ্বিতীয় অংশের সময় : থ্রি মাস্কেটার্স, ব্রডওয়ে-স্টাইল। আমার মাথায় এখনো গানটা বাজছে। আমি মনে মনে বলি, আমি যদি লুই-ফার্দিনান্দ সেলিনের সেই সঙ্গী, যে একজন নর্তকি, তার নাম স্মরণ করতে পারি, তো আজ সেই স্মরণে আমরা রাত্রিশয্যায় যাবো। আমার মনে পড়ে, সে নর্তকির নাম লুসেট আলমানজোর।)
বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর
কখনো কখনো আমি তার মুখচ্ছবি কল্পনায় আঁকতে পারি, কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী মাত্র। যা, এই এখন আমি আবার হারিয়ে ফেলেছি। আমি তার চোখ, তার ঠোঁটের আকৃতি, তার দাঁত সব চিন ও জানি, কিন্তু সেগুলো একটা সম্পূর্ণ রূপ পায় না। শুধু তার শরীর শনাক্ত করা যায়- কিন্তু তার হাত নয়। আমার কান্নার প্রতিটি বিন্দু পর্যন্ত কামনার গ্রাসে আচ্ছাদিত।
আমি প্রেমে পরিপূর্ণতা চাই, যেমন আমি বিশ্বাস করি, অ ডড়সধহ’ং ঝঃড়ৎু লিখে আমি এক ধরনের পরিপূর্ণতা পেয়েছি। এটি কেবল নিবেদনের মাধ্যমেই ঘটতে পারে, যখন সমস্ত সতর্কতা বাতাসে লুকিয়ে থাকে।
শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর
সে এখনো ডাকেনি। আমি জানি না তার প্লেন কখন ঢুকবে। লেনিনগ্রাদে সেই রবিবারের অদ্ভুত, নীরব আবেগের চুক্তিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়! সব কিছু কী শেষ হয়ে যায়?
শনিবার, ১ অক্টোবর
তখন সোয়া একটা। তার ফ্লাইট তিন ঘণ্টা দেরিতে ছিল। বেদনাদায়ক সুখ। আমি আজ রাতে লিল আর প্যারিসের মধ্যবর্তী রাস্তায় মারা যাওয়ার ভয় পাচ্ছি, এমন কিছুর ভয় আমাকে তাড়া করে ফিরছে, যা আমাকে তাকে আবার দেখা থেকে বিরত রাখতে পারে।
(অংশ বিশেষ)
দা প্যারিস রিভিউ ॥ সংখ্যা: ২৩৯; বসন্ত ২০২২
* (ফরাসি থেকে ইংরেজি অনুবাদ : অ্যালিসন এল. স্ট্রেয়ার)