ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাঝ পথেই কেন থেমে যায় তদন্ত!

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৪৯, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

মাঝ পথেই কেন থেমে যায় তদন্ত!

নারী নির্যাতন এখন প্রতিদিনের এক যন্ত্রণাদায়ক লোমহর্ষক ঘটনা।

নারী নির্যাতন এখন প্রতিদিনের এক যন্ত্রণাদায়ক লোমহর্ষক ঘটনা। সেখানে বাল্য বিয়ের অভিশাপ, যৌতুকের কারণে নিপীড়ন, সম্ভ্রমহানি এবং অন্যায়ভাবে হেনস্তা করা যেন এক বেদনাবিধূর অঘটন। নিপীড়িতের পিতামাতা ও অভিভাবক এমন চরম অত্যাচারের নিগৃহীত হওয়া কন্যা সন্তানটির জন্য বিচারের দাবিতে মামলা দায়ের করেন। অত্যাচারের  নৃশংস সময়ে ৯৯৯ তে ফোন করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসতে দেরিও করেন না। শুধু তাই নয় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। শেষ অবধি তদন্তকারী সংস্থা মামলার বিষয়বস্তু যাচাইয়ের নিমিত্তে হরেক কাজকর্ম শুরু করার দৃশ্যও স্পষ্ট। তবে সে তদন্ত আর না এগুনোর বিষয়টিও হতাশাব্যঞ্জকই নয় তার চেয়ে বেশি অপরাধী পার পেয়ে যাওয়ার অনন্য সুযোগ তো বটেই।

নারীরা শুধু নির্যাতিত হয় তা কিন্তু নয় বরং অত্যাচারের শেষ পর্যায়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করতেও অপরাধীর হাত কাঁপে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে ৯৯৯-তে কল পেয়ে পুলিশ হাজির হচ্ছেন ঘটনাস্থলে। মামলা তদন্ত শুরু করা গেলেও তার আর কোন অগ্রগতিই দেখা যাচ্ছে না। তথ্য উপাত্তে ওঠে আসে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলতি বছরের ১০ মাসে ধর্ষণের অঘটন ঘটেছে ৮৩০টি-পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪১১জন।

অমানবিক আর জঘন্যভাবে হত্যা করা হয়েছে ২৫৩ জনকে। লোমহর্ষক এবং সভ্যতাবিবর্জিত মধ্যযুগীয় বর্বরতা তো বটেই। যা স্মরণ করলেই সব কিছু যেন ওলট-পালট হয়ে যায়। ৭৯ জন নারী দুঃখ, তাপে, যন্ত্রণায়  আত্মাহুতি দিতে বাধ্য হয়েছে। আর হেনস্তার শিকার হয়েছেন ১৪৮ জন নারী। সারাদেশের বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ পরিবেশনের ওপর জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়।

পরিবার ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে মামলা-তদন্ত শুরু করা হলেও শেষ অবধি সেটা অন্ধকারেই আটকে থাকে। আলোর মুখ দেখতে শুধু দীর্ঘ সূত্রিতাই নয় বরং অপেক্ষারও কোনো শেষ পরিশেষ থাকে না। ধরে নিতে হয় মামলা কোনোভাবেই আর বিন্দুমাত্র সামনের দিকে যেতে ব্যর্থ। দায়ী কি শুধু তদন্তকারী সংস্থা কর্মকর্তাই না প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলাবদ্ধ শিকলে আটকে পড়াটাই স্বাভাবিক এক কার্যক্রম।

অবশ্য তা খতিয়ে দেখাও জরুরি। তবে অনুমান করতে কষ্ট হয় না অপেক্ষাকৃত প্রভাবশালী অপরাধীরা কোনো কিছুর বিনিময়ে মামলা ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্ট ক্রমাগত চালিয়েই যায়। প্রত্যক্ষদর্শী এক দর্শক অভিমত দেন অনেক ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা দোষীব্যক্তির সঙ্গে অর্থলেনদেনের মাধ্যমে নিষ্পত্তির প্ররোচনা চালিয়ে যায়। আর আর্থিক সম্পন্ন ব্যক্তিরা যে কোনো রফা-দফার মামলাটিকে তদন্তের মাঝপথে থামিয়ে দিতে বাধ্য করে সংশ্লিষ্টদের। আর ভুক্তভোগীরা মনে করেন- আমরা দরিদ্র পিতামাতা।

কন্যা সন্তান নির্যাতনের বিচার চাইতে গিয়ে সেভাবে অর্থ বিনিয়োগ করতেও পারি না। সে কারণেই কি তারা আইন ও বিধিসম্মত বিচার থেকে বঞ্চিত হন? এমন যৌক্তিক প্রশ্ন উড়িয়েও দেওয়ার মতো নয়। মানুষ যদি অন্যায় করেও তার প্রাপ্য শাস্তির থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যায় তাহলে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাওয়ার কি কোনো সুযোগ থাকে? এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা ভুক্তভোগীর পক্ষেই সচেতন দায়বদ্ধতার পাশে থাকাটা প্রচলিত বিধি নিয়মের আওতাধীন।

আইনকানুন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয় অন্যায়কারীকে শাস্তির আওতায় আনতে। সেখানে শাস্তিটাই যদি গুরু পাপে লঘু দ- হয় তাহলে দেশের আইনকানুনের মর্যাদা কোথায় থাকে? আইনি বিধান সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্যই শুধু নয় সমাজকে অপরাধমুক্ত করার শাণিত কার্য প্রক্রিয়াও। তাকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করাই যাবে না।
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×