
ছবি: প্রতীকী
রাগ কন্ট্রোল করতে শিখলে সত্যিই জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। আমরা প্রতিদিন নানা রকমের পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। কেউ কথা দিয়ে কথা রাখে না, কেউ আমাদের অসম্মান করে, কেউবা আমাদের কাজের ভুল ধরে। এসব দেখে বা শুনে রাগ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই রাগ যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তাহলে ক্ষতিটা হয় আমাদেরই। সম্পর্ক নষ্ট হয়, মানসিক শান্তি নষ্ট হয়, এমনকি শরীরেও প্রভাব পড়ে।
রাগ যখন খুব বেশি হয়, তখন আমরা অনেক সময় এমন কিছু বলি বা করি, যেটা পরবর্তীতে আমাদের আফসোসের কারণ হয়। কাছের মানুষদের কষ্ট দিয়ে ফেলি, সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। রাগের মুহূর্তে আমাদের যুক্তিবোধ কাজ করে না, আমরা শুধু প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাই। কিন্তু পরে যখন মাথা ঠান্ডা হয়, তখন বোঝা যায়—এতটা রাগ না করলেও হতো।
রাগ কন্ট্রোল করা মানে এই না যে, রাগ না করা। রাগ হবে, কারণ আমরা মানুষ। কিন্তু সেটা প্রকাশ করার আগে একটু ভাবা দরকার—এটা কি বলা উচিত? এটা বললে বা করলে আমি বা অন্য কেউ কষ্ট পাবে কি না? রাগের সময় যদি আমরা ৫ মিনিট চুপ করে থাকি, কিংবা জায়গা থেকে উঠে একটু হাঁটি, তাহলে মাথা ঠান্ডা হয়। তখন অনেক বিষয়কে নতুনভাবে দেখা যায়।
রাগ কমাতে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো—নিজেকে বোঝানো যে, সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রণে না। অনেক সময় মানুষ যেমনটা আশা করি, তেমন আচরণ করে না। কেউ কেউ ইচ্ছা করে কষ্ট দেয়, কেউ আবার না বুঝেই দেয়। আমি যদি প্রতিবার রেগে যাই, তাহলে আমি তো প্রতিনিয়ত অশান্তির মধ্যে থাকব। তার চেয়ে বরং নিজেকে বোঝানো ভালো যে, কিছু বিষয়কে ক্ষমা করে দিতে হয়, কিছু বিষয়কে এড়িয়ে যেতে হয়।
রাগ কন্ট্রোল করতে পারলে আমাদের মানসিক চাপ অনেক কমে যায়। মাথা ঠান্ডা রাখলে আমরা যেকোনো সমস্যার সমাধান সহজে খুঁজে পাই। অফিসে, বাসায়, রাস্তায়—সব জায়গাতেই মানুষ আছে, এবং প্রতিটি মানুষ আলাদা। সবাইকে একভাবে আশা করা ভুল। তাই রাগ করে প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেয়ে ধৈর্য ধরাই বুদ্ধিমানের কাজ।
রাগের কারণে শরীরেও অনেক ক্ষতি হয়। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ঘুমের সমস্যা, হজমের সমস্যা—সবকিছুর পেছনে এক ধরনের মানসিক চাপ কাজ করে, যার বড় একটি উৎস হলো অতিরিক্ত রাগ। রাগ কমাতে পারলে স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। মানসিক শান্তি বজায় থাকে, যা আমাদের জীবনের মান উন্নত করে।
রাগ কন্ট্রোল করলে সম্পর্কগুলো টিকে থাকে। বন্ধুত্ব, দাম্পত্য, সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক—সবই ভালো থাকে। একজন ঠান্ডা মাথার মানুষকে সবাই পছন্দ করে, বিশ্বাস করে। রাগী মানুষকে সবাই এড়িয়ে চলে, কারণ কখন যে সে কি বলে বা করে—তার কোন ঠিক থাকে না।
রাগ কমাতে ধ্যান, প্রার্থনা, বই পড়া, গান শোনা, হাঁটা বা অন্য যে কোনো পজিটিভ অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। নিজের সময়টা নিজের মতো করে কাটানো, নিজের অনুভূতি বোঝা—এসব রাগ কমাতে সাহায্য করে। রাগ হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে একটু সময় নেওয়া খুব দরকার। এতে পরিস্থিতি অনেক সময় এমনিতেই সামলে যায়।
রাগ কন্ট্রোল করা মানে দুর্বলতা নয়। বরং এটা এক ধরনের শক্তি, যা সবাই পারে না। যে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে আসলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে। আর নিজের ওপর যার নিয়ন্ত্রণ আছে, তার জীবন অনেক সুন্দর হয়। তাই ধৈর্য ধরুন, নিজের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন, এবং প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে সংযত রাখার অভ্যাস করুন। দেখবেন, জীবন সত্যিই অনেক সহজ হয়ে গেছে।
এম.কে.