ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

এই সাধারণ ৩টি ভুলেই ধ্বংস করছেন আপনার লিভার

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ১৩ জুলাই ২০২৫

এই সাধারণ ৩টি ভুলেই ধ্বংস করছেন আপনার লিভার

ছবি: সংগৃহীত

লিভার বা যকৃৎ মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি দেহ থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ দূর করে, খাদ্য হজমে সাহায্য করে, প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংরক্ষণ করে এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলোর নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও লিভারের রয়েছে নিজেকে পরিষ্কার ও নিজে নিজে নিরাময় করার অসাধারণ ক্ষমতা, তবুও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। অনেকেই মনে করেন কেবলমাত্র মদ্যপানই লিভার ক্ষয়ের একমাত্র কারণ, কিন্তু বাস্তবে এমন আরও অনেক অভ্যাস আছে যা লিভারকে নীরবে ধ্বংস করে দিচ্ছে। নিচে এমনই ৩টি অভ্যাস তুলে ধরা হলো—

১. অতিরিক্ত জাংক ফুড খাওয়া
বিস্কুট, চানাচুর, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি আজকের জীবনে খুবই জনপ্রিয়—এগুলি যেমন সহজলভ্য, তেমনই স্বাদে আসক্তিকর। কিন্তু এই খাবারগুলোতে থাকে অতিরিক্ত পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট, চিনি ও লবণ, যা লিভারের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করে।

প্রতিনিয়ত এই ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ফ্রুকটোজ তৈরি হয়, যা লিভার প্রক্রিয়াজাত করতে না পেরে ফ্যাটে রূপান্তরিত করে। এই ফ্যাট ধীরে ধীরে জমা হয়ে তৈরি করে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও গুরুতর হয়ে লিভার সিরোসিস-এ পরিণত হতে পারে, যা জীবনহানিও ঘটাতে পারে।

ট্রান্স ফ্যাট এবং অতিরিক্ত লবণ যুক্ত খাবার শরীরে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে, যেগুলো লিভার রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত ফাস্ট ফুড খায়, তাদের লিভার-সম্পর্কিত সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

সুস্থ লিভারের জন্য নিয়মিত ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাকস কমিয়ে দিন। পরিবর্তে প্রতিদিন খাবারে রাখুন শস্যদানা, টাটকা ফলমূল, সবজি ও চর্বিহীন প্রোটিন।

২. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ও অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ
মাংসপেশীর ব্যথা, জ্বর কিংবা মাথাব্যথা কমাতে আমরা প্রায়ই নিজেরাই প্যারাসিটামল, ব্যথানাশক বা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ খেয়ে ফেলি। কিন্তু নিয়মিত ও অতিরিক্ত মাত্রায় এসব ওষুধ খাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে লিভারে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে—এমন প্রমাণ অনেক গবেষণাতেই পাওয়া গেছে।

লিভার হচ্ছে আমাদের দেহের প্রধান 'ফিল্টার' বা ছাঁকনি—যার কাজ হলো শরীরে প্রবেশ করা প্রতিটি ওষুধকে ভেঙে প্রক্রিয়াজাত করা। কিন্তু যখন একসঙ্গে অনেক বেশি ওষুধ গ্রহণ করা হয়, তখন লিভার অতিরিক্ত চাপে পড়ে এবং এর কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে লিভার টক্সিসিটি পর্যন্ত হতে পারে।

শুধু ওষুধই নয়, বিভিন্ন হারবাল সাপ্লিমেন্ট বা ভিটামিন সাপ্লিমেন্টও যদি মাত্রাতিরিক্তভাবে নেওয়া হয়, তাহলেও লিভার আক্রান্ত হতে পারে।

৩. অতিরিক্ত ওজন এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
শরীরচর্চার অভাব ও অতিরিক্ত ওজন, বিশেষ করে পেটের মেদ, লিভার রোগের বড় একটি কারণ। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম না করেন বা ওজন অতিরিক্ত হয়, তাহলে দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়, যার ফলে রক্তে চিনি এবং ফ্যাটের মাত্রা বেড়ে যায়।

এভাবে ধীরে ধীরে অতিরিক্ত চর্বি লিভারে জমতে শুরু করে এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) তৈরি হয়। এর ফলে লিভার কোষে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, এবং পরবর্তীতে ফাইব্রোসিস ও সিরোসিসে রূপ নেয়—যা লিভারের স্বাভাবিক কাজকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।

অধিক ওজন থাকার পাশাপাশি যারা সেডেন্টারি লাইফস্টাইল অনুসরণ করেন, তাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়, যা সরাসরি লিভারের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন: বেশি করে টাটকা ফল, সবজি, শস্যদানা ও প্রোটিনভিত্তিক খাবার খান। ফাস্ট ফুড, সফট ড্রিংকস এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
ওষুধ গ্রহণে সচেতন হোন: ব্যথানাশক বা যেকোনো সাপ্লিমেন্ট চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করবেন না।
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করুন: হাঁটা, দৌড়, জিম কিংবা যোগব্যায়াম—আপনার জন্য যেটি সহজ, সেটিই বেছে নিন। তবে নিয়মিত হতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে লিভার সহজে টক্সিন পরিষ্কার করতে পারে।
ধূমপান ছাড়ুন: ধূমপানে থাকা টক্সিনও লিভারের ক্ষতি করে। ধূমপান করলে এখনই ছেড়ে দিন।

 

আবির

×