ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

মনোবিজ্ঞানের মতে, এই ৫টি অভ্যাসই প্রমাণ করে আপনি জিনিয়াস!

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১৩ জুলাই ২০২৫

মনোবিজ্ঞানের মতে, এই ৫টি অভ্যাসই প্রমাণ করে আপনি জিনিয়াস!

প্রতিদিন সময়ের পেছনে দৌড়াচ্ছেন, কাজের তালিকা শেষ হয় না, নিজের জন্য সময় রাখাও যেন বিলাসিতা! এমনটা কি আপনার সাথেও হয়? তবে জানিয়ে রাখা ভালো, প্রডাক্টিভ বা সৃজনশীল হওয়া মানে শুধু কাজের পাহাড় সামলানো নয়। বরং মনোবিজ্ঞান বলছে, কিছু অস্বাভাবিক অভ্যাসই একজন মানুষের উচ্চমাত্রার বুদ্ধিমত্তা বা জিনিয়াস হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

বুদ্ধিমত্তা একমাত্র IQ স্কোর দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। এটি আরও বিস্তৃত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, শেখার আগ্রহ, সৃজনশীল চিন্তা, মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে, এই সব গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের মাঝে কয়েকটি অদ্ভুত অভ্যাস একেবারে চোখে পড়ে।

মনোবিজ্ঞানের মতে, নিচের এই পাঁচটি অস্বাভাবিক অভ্যাস একজন মানুষের অভ্যন্তরীণ জিনিয়াস মানসিকতার স্পষ্ট লক্ষণ হতে পারে।

১. স্ক্রিনের প্রতি অনাসক্তি
আজকের ডিজিটাল যুগে মানুষ স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটার স্ক্রিনে এতটাই আসক্ত যে কাজের গতি থেমে যাচ্ছে। ‘স্ক্রিন সাক’ নামের একটি টার্ম এখন প্রচলিত, যার মানে ইমেইল চেক করতে গিয়েও ঘণ্টাখানেক ধরে অপ্রয়োজনীয় ভিডিও দেখতে থাকা। এতে সময় যেমন নষ্ট হয়, তেমনি মনোযোগ ও চিন্তার গভীরতাও হারায়।

যারা স্ক্রিন ব্যবহার কমিয়ে নিজের সময় ও মনোযোগ সংরক্ষণ করতে জানেন, তাদের প্রোডাক্টিভিটি স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়।

২. নিয়মিত টু-ডু লিস্ট তৈরি
বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা কাজের পরিকল্পনা কাগজে বা অ্যাপে লিখে রাখেন। মুখস্থ রাখার চেষ্টা যতই হোক, মাথায় একাধিক কাজ জমতে জমতে তালগোল পাকিয়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট তালিকা কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে, মানসিক চাপ কমায় এবং কাজ শেষে তৃপ্তি দেয়।

২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কার্যকর সময় ব্যবস্থাপনায় টু-ডু লিস্ট অত্যন্ত কার্যকরী। এটি কাজের প্রতি নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি জাগায়, যা সফলতার জন্য জরুরি।

৩. প্রয়োজনমতো ‘না’ বলতে জানা
অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়া অনেক সময় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। জিনিয়াস মানসিকতার মানুষরা জানেন—তাদের দিনে কত ঘণ্টা সময় আছে, কোন কাজটা ‘না’ বললে ক্ষতি নেই। অনেকে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা অফিসের অতিরিক্ত কাজের চাপে পড়ে না বলতে পারেন না, এতে করে তারা মানসিকভাবে ক্লান্ত ও অকার্যকর হয়ে পড়েন।

যারা প্রয়োজনমতো না বলতে পারেন, তারা বাস্তবে বেশি ফোকাসড এবং প্রোডাক্টিভ হন।

৪. কাজ ভাগ করে নেওয়ার দক্ষতা
সব কাজ একা করে ফেলা কোনো অর্জন নয়। বরং প্রকৃত প্রোডাক্টিভ ব্যক্তিরা জানেন, কোন কাজ কার সঙ্গে ভাগ করলে দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে শেষ করা যায়। এটি শুধু সময় বাঁচায় না, বরং মানসিক ভার কমিয়ে দেয় এবং কাজের মানও ভালো হয়।

২০২২ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সহানুভূতিশীল ও বিশ্বাসভিত্তিক কর্মপরিবেশ তৈরি করলে কর্মীদের চাপ কমে, উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং কাজের প্রতি সন্তুষ্টিও বৃদ্ধি পায়।

৫. নিজের যত্নকে প্রাধান্য দেওয়া
পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এগুলো প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধির মূলে থাকে। যারা নিজের ভালো থাকার দিকটি উপেক্ষা করেন, তারা দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।

যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, সুষম আহার নেন, ঘুম ঠিক রাখেন এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করেন, তারা জিনিয়াস মানসিকতার মানুষদের মতোই পরিষ্কার চিন্তা করতে পারেন এবং যেকোনো কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন।


এই পাঁচটি অভ্যাস হয়তো সাধারণ চোখে 'অদ্ভুত' বা 'বেখেয়ালি' মনে হতে পারে, কিন্তু মনোবিজ্ঞান বলছে—এগুলোই একজন মানুষকে করে তুলতে পারে ব্যতিক্রমীভাবে প্রতিভাবান ও প্রোডাক্টিভ। স্ক্রিন টাইম কমিয়ে, কাজের তালিকা বানিয়ে, দরকারে ‘না’ বলে, কাজ ভাগ করে নিয়ে এবং নিজের যত্ন নিয়ে প্রতিদিনের জীবনকে আরও কার্যকর ও সাফল্যময় করা সম্ভব।

এই ব্যস্ত, বিশৃঙ্খল পৃথিবীতে নিজের ছোট্ট জগৎটিকে একটু সহজ আর স্বস্তিদায়ক করে তোলার চাবিকাঠি হতে পারে ঠিক এই অভ্যাসগুলো। এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কি সেই চাবিটা ধরতে প্রস্তুত?

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/mn6snuke

আফরোজা

×