
ছবি: জনকণ্ঠ
উত্তরাঞ্চলে আষাঢ়ে বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকেও এবার আষাঢ় তার চিরচেনা রূপে এখনও ফেরেনি। খরায় হুমকির মুখে পড়তে পারে ফসল উৎপাদন। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির পাশাপাশি বিরূপ আবহাওয়ায় ফসল উৎপাদন এখন বড় চ্যালেঞ্জ মুখে পড়ছে। বলতে গেলে খরায় পুড়ছে উত্তরাঞ্চলের রংপুর কৃষি অঞ্চলের নীলফামারী, রংপুর,লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা সহ ৫ জেলা।
এদিকে খরিপ-২ আমর ধান মৌসুমে বর্ষাকালিন খরার কবলে পড়া তিন জেলা নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের নির্ধারিত কমান্ড এলাকায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান শুরু করেছে।
উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে গত তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় প্রভাব পড়েছে আমন চাষে।কৃষকেরা বলছেন, নষ্ট হচ্ছে বীজতলার চারাও। সেচ দিয়ে চারা রোপণে খরচ বাড়ছে।'এভাবে খরচ বাড়লে লাভের মুখ দেখা কঠিন হবে,'আমনচাষীদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা ৬ লাখ ২০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদনের ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৭২ টন । এর মধ্যে নীলফামারীতে ১ লাখ ১৩ হাজার ২২০ হেক্টর, রংপুরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৮৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ হেক্টর ও কুড়িগ্রামে ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ হেক্টরে। বৃস্টির অভাবে শনিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত আমনের চারা রোপন করা হয় মাত্র ২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে।
এদিকে রংপুর অঞ্চলের আহবাওয়া অফিস জানায়, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য থাকছে মাত্র ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর অঞ্চলে এখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে সর্বোচ্চ ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চলছে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে তাপদাহ বেশী অনুভুথ হচ্ছে।
রবিবার (১৩ জুলাই) রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'বৃষ্টির অভাবে চারা রোপণে দেরি হচ্ছে। তবে জুলাই ও আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে আমনচারা লাগানো যাবে। সময়মতো রোপণ ও পর্যাপ্ত সেচ নিশ্চিত করা গেলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব।'তিনি জানান, এ পর্যন্ত ২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন করেছে কৃষক। এ ছাড়া তিস্তা সেচ প্রকল্প সেচ কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানে ৬৩ হাজার হেক্টরে পানি উন্নয়নবোর্ড সেচ দিচ্ছে।
এ ছাড়া বরেন্দ্র সেচ রয়েছে। এরপরেও কৃষকরা সেচে বাড়তি খরচ থেকে রক্ষা পেতে বৃস্টির অপেক্ষা করছে। তিনি জানান, 'বৃষ্টি না হলে বীজতলার চারাগুলো নষ্ট হতে পারে। তবে চলতি সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে, যা কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে।' তিনি আরও জানান, কৃষকের ফসল যেন তিগ্রস্থ না হয়, সেজন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিভিন্ন সেচ পা¤েপর মালিকদের সাথে যোগাযোগ করেছে কৃষি বিভাগ। তারা যদি নিয়মিত জমিতে পানি সরবরাহ করে এবং সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে তাহলে আশা করা যায় আমন ফসলের তির সম্ভাবনা থাকবে না।'
অপর দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় জানান, পহেলা জুলাই হতে খরিপ-২ রবি মৌসুমে আমন ধানের চারা রোপনের জন্য তিস্তা কমান্ড এলাকায় সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, এবার ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে কমান্ড এলাকায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানে ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে নীলফামারী জেলার সদর, জলঢাকা,কিশোরীগঞ্জ ডিমলা ও সৈয়দপুর উপজেলায় ৩৯ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচরা ও রংপুর সদর উপজেলায় ১৪ হাজার হেক্টর ও দিনাজপুর জেলার খানসামা, পার্বতীপুর, চিরির বন্দর উপজেলার ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবরাহ শুরু করা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করে বলেন, খরিপ-১ (২০২৫) তিস্তা সেচ প্রকল্পের রবি মৌসুমের বোরো ধান উৎপাদনে ৫০ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদান সম্ভব হয়েছিল। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন তিস্তা ক্যানেলগুলোর সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। এটি সমাপ্ত হলে আগামী ২০২৭ সাল থেকে উল্লেখিত জেলাগুলোতে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান সম্ভব হবে।
রবিবার তিস্তা কমান্ড এলাকার দুন্দিবাড়ি এলাকার কৃষকরা জানান, আমরা যারা আগাম আমন ধান চাষ করছি তারা সেচ নিয়ে চারারোপনের প্রস্তুতি নিয়েছি। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার হরিশচন্দ্রপাট, কাঁঠালি ও দেশীবাই গ্রামের কৃষকরা জানান, তিস্তা সেচের পানি পহেলা জুলাই থেকে দেয়া শুরু হয়েছে। এলাকাভেদে আমন চারা রোপন চলে আগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। এখন চলছে আমন ধানের চারা রোপণ মৌসুম। বৃস্টির অভাবে আমরা তিস্তা সেচের পানিতে চারা রোপন শুরু করেছি।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র সুত্র মতে, গত জুন মাসের ১৬ দিনে তিস্তা অববাহিকার ডালিয়া পয়েন্টে বৃস্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৩৬৬ মিলিমিটার। জুলাই মাসের ১৩ দিনের মধ্যে দুইদিন বৃস্টি হয়। এরমধ্যে ২ জুলাই ২২ মিলিমিটার ও ৫ জুলাই ৪০ মিলিমিটার। এরপর আর বৃস্টি হয়নি তিস্তা অববাহিকায়।
শহীদ