ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

এবার কিমের সৈন্যদের নিয়ে মরণকামড় দেবেন পুতিন

প্রকাশিত: ০১:৪৭, ১৪ জুলাই ২০২৫

এবার কিমের সৈন্যদের নিয়ে মরণকামড় দেবেন পুতিন

ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পাশে রয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জংউন। যুদ্ধক্ষেত্রে শুধু রাজনৈতিক নয়, সামরিকভাবেও রাশিয়ার পক্ষে সক্রিয় হয়েছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ইতোমধ্যে ১ লাখেরও বেশি উত্তর কোরিয়ার সেনা ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দানে অংশগ্রহণ করেছে, এবং যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করছে পিয়ংইয়ং।

সম্প্রতি এই সমর্থন আরও একধাপ এগিয়ে গেল। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে উত্তর কোরিয়ায় অবস্থান করছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ। এ সময় উপকূলীয় শহর উনছানে, ১২ জুলাই এক বৈঠকে কিম জংউনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন লাভরভ। বৈঠকে কিম জংউন সরাসরি জানান,
“ইউক্রেন সংকট সমাধানে রুশ নেতৃত্বের গৃহীত সব পদক্ষেপকে উত্তর কোরিয়া নিঃশর্তভাবে সমর্থন করবে।”

এই ঘোষণায় ফের স্পষ্ট হলো—ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিটি পর্বেই রাশিয়ার প্রতি কিম জংউনের শক্ত অবস্থান। কিমের ভাষায়, যে সিদ্ধান্তই পুতিন নেন না কেন, উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে থাকবে নিঃশর্ত সমর্থন।

পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া বরাবরই সোচ্চার। ভূরাজনৈতিক নতুন বাস্তবতায় তাদের পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা আরও গভীর হয়েছে। পুতিনের ‘নতুন বিশ্বব্যবস্থার’ পরিকল্পনায় অন্যতম সহযোগী হয়ে উঠেছেন কিম জংউন। শুধু রাজনৈতিক নয়, সামরিক ক্ষেত্রেও রাশিয়ার অন্যতম ভরসার জায়গা এখন পিয়ংইয়ং।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কাছে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি ১৫২ মিমি আর্টিলারি সেল পাঠিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধীদলীয় এক এমপিকে জমা দেওয়া প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উত্তর কোরিয়া প্রায় ২৮ হাজার কন্টেইনারে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাশিয়ার কাছে পাঠিয়েছে।

এছাড়া, গত এপ্রিলে রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েনের কথা প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে পিয়ংইয়ং। জানায়, ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত পুরস্ক সীমান্ত অঞ্চল পুনর্দখলে রাশিয়াকে সহায়তা করেছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা। এর আগে রাশিয়াও স্বীকার করেছিল, কুরস্ক অঞ্চলে যুদ্ধাভিযানে উত্তর কোরিয়ার সেনারা অংশ নিচ্ছে।

যদিও দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক আগেই দাবি করেছিল, উত্তর কোরিয়া গত বছরই ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ১ লাখের বেশি সেনা কুরস্কে পাঠিয়েছিল।

এই সহায়তা ও অংশগ্রহণের জন্য উত্তর কোরিয়ার প্রশংসা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেও। গত বছর জুনে উত্তর কোরিয়া সফর করেন পুতিন, এবং বলেন—
“ইউক্রেনের চলমান সামরিক অভিযানে রাশিয়াকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া।”
সেই সঙ্গে তিনি দুই দেশের বহুমাত্রিক অংশীদারিত্ব আরও জোরদারের ঘোষণা দেন।

বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার এই জোট শুধু সামরিক নয়, এক গভীর কৌশলগত অংশীদারত্বের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এখন আর শুধু ইউরোপীয় সংকট নয়, এর জালে জড়াচ্ছে এশিয়ার পরাশক্তিরাও।

 

শেখ ফরিদ 

×