
ছবি: সংগৃহীত
আমরা প্রায়ই অন্যদের মন বুঝতে চাই, অথচ নিজের মনের কথাই বুঝি না ঠিকমতো। আত্মপরিচয়, মানসিক সুস্থতা এবং সম্পর্কের পরিপক্বতার জন্য নিজেকে বোঝা অত্যন্ত জরুরি। মন বোঝা মানে শুধু আবেগ চেনা নয়—বরং অনুভূতির পেছনের কারণ, আচরণের ধরন ও চিন্তার গঠনও অনুধাবন করা। নিচে নিজের মন বুঝতে সাহায্যকারী ৫টি বাস্তব পরীক্ষিত কৌশল দেওয়া হলো:
১. আবেগের নাম দিন — “Name it to tame it”
যখন আপনি রাগান্বিত, দুঃখিত বা বিভ্রান্ত বোধ করেন, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: “আমি এখন ঠিক কী অনুভব করছি?” আপনার আবেগের নাম দিন—যেমন: হতাশা, লজ্জা, ঈর্ষা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। বিজ্ঞান বলছে, আবেগকে নাম দিলে মস্তিষ্কে ‘রেগুলেশন সেন্টার’ অ্যাকটিভ হয়, যা সেই আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
২. জার্নালিং বা ‘মন লেখার’ অভ্যাস
প্রতিদিন ৫–১০ মিনিট সময় নিয়ে নিজের ভাবনা লিখে ফেলুন। প্রশ্ন করতে পারেন: আজ আমি কী অনুভব করেছি? এটা কেন হলো? কী করলে আমি ভালো বোধ করতাম? ফলাফল: মনের অবচেতনে জমে থাকা চিন্তা ও আবেগ ধরা পড়ে কাগজে, যা বিশ্লেষণ করতে সহজ হয়।
৩. মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করুন
প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে নিজের নিঃশ্বাস ও অনুভূতির দিকে মনোযোগ দিন। মনের ভেতরে কী ভাবনা আসছে, সেটা দূর থেকে ‘দর্শকের’ মতো লক্ষ্য করুন—কিন্তু প্রতিক্রিয়া জানাবেন না। এই অভ্যাস আপনার চিন্তার ধারা ও আবেগকে “অবজেক্টিভলি” দেখার সুযোগ করে দেয়।
৪. চিন্তার ধরন চিহ্নিত করুন (Cognitive Pattern Tracking)
আপনার চিন্তা কি বারবার নেতিবাচক পথে যাচ্ছে? নিজেকে প্রশ্ন করুন: “এই চিন্তা কি বাস্তবতার সঙ্গে মেলে?” “এটা কি অতিরঞ্জিত?”
“এই চিন্তার বদলে আরও ইতিবাচক ব্যাখ্যা সম্ভব?” এভাবে চিন্তার কাঠামো ধরতে পারলে মনের ভেতরের ‘অটোমেটিক রেসপন্স’ বোঝা সহজ হয়।
৫. নীরব সময় কাটান নিজের সঙ্গে
প্রতিদিন অন্তত ১০–১৫ মিনিট নিজের সঙ্গে একা সময় কাটান—মোবাইল, টিভি বা গান ছাড়া। এই সময় নিজেকে প্রশ্ন করুন: “আমি এখন কী চাই?” “আমার ভেতরে কী চলছে?” “কী করলে আমি বেশি ‘আমি’ বোধ করতাম?” নিজেকে বুঝতে হলে নিজের সঙ্গে সংযোগ গড়া সবচেয়ে জরুরি। নীরবতা সেই সংযোগের সেতু।
নিজের মন বুঝতে শিখলে আপনি আর আবেগের দাস থাকবেন না—বরং নিজের জীবন পরিচালনায় সচেতন ক্যাপ্টেন হয়ে উঠবেন। এগুলো শুধু অভ্যাসের বিষয়, চেষ্টা করলে প্রতিদিন আপনি নিজেকে আরও ভালোভাবে চিনতে পারবেন।
ফারুক