
ছবি: প্রতিকী
চিয়া সিড ছোট হলেও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। এটি ওটমিল, স্মুদি, পুডিং, প্যানকেকসহ নানা খাবারে ব্যবহার করে তার পুষ্টিমান বাড়ানো যায়। মাত্র ২.৫ টেবিল চামচ চিয়া সিড থাকে প্রায় ৪.৫ গ্রাম প্রোটিন, ১০ গ্রাম ফাইবার এবং ৫ গ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এছাড়াও এতে আছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস।
তবে পুষ্টিবিদ ব্রিটানি ব্রাউন বলেন, “চিয়া সিডে থাকা দ্রবণীয় আঁশ এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু অস্বস্তিকর কিংবা স্বাস্থ্যঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।”
চলুন জেনে নেই অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়ার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, নিরাপদ পরিমাণ এবং কিছু বিকল্পের কথা।
অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
১. মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট শোষণে বাধা
পুষ্টিবিদ মেগান বার্ড বলেন, “চিয়া সিড উচ্চ ফাইবার উপাদান যেমন ফ্যাট ও চিনি শোষণ রোধ করে, তেমনি দেহে দস্তা, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানের শোষণও কমিয়ে দিতে পারে।” তাই যাদের এই খনিজের ঘাটতি আছে, তাদের ক্ষেত্রে সাবধানতা প্রয়োজন।
২. হজমে সমস্যা
চিয়া সিড হজমে সহায়তা করলেও পানি ছাড়া বা হঠাৎ করে বেশি খেলে হতে পারে গ্যাস, পেটফাঁপা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য। আইবিএস বা হজমজনিত সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের ধীরে ধীরে ও প্রচুর পানি খেয়ে চিয়া সিড খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
৩. শ্বাসরোধের ঝুঁকি আমি
শুকনো চিয়া সিড মুখে দিয়ে খেলে তা পানি শোষণ করে ফুলে গিয়ে গলায় আটকে যেতে পারে। তাই শুকনো অবস্থায় চিয়া বীজ খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। গলাধঃকরণে সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভেজানো চিয়া বীজ খাওয়া নিরাপদ।
৪. কিডনি স্টোনের ঝুঁকি
চিয়া সিড আছে প্রচুর অক্সালেট, যা ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিডনিতে পাথরের সৃষ্টি করতে পারে। যাদের বারবার কিডনি স্টোন হয়, তাদের চিয়া সিড খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের সঙ্গে খেলে এই ঝুঁকি কমে।
৫. ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া
চিয়া সিডে থাকা উপাদান রক্তচাপ কমাতে এবং রক্ত জমাট বাঁধা রোধে সহায়তা করে, যা ওষুধের কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেলে রক্তে চিনি অতিরিক্ত কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ওয়ারফারিন বা ইনসুলিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া ব্যক্তিদের সাবধানতা জরুরি।
দিনে কতটা চিয়া সিড খাওয়া নিরাপদ?
যদিও নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই, তবে ২.৫ টেবিল চামচ চিয়া সিডে দৈনিক আঁশের চাহিদার ৩৫% পূরণ হয়। কিছু পুষ্টিবিদ ৫ টেবিল চামচ পর্যন্ত খাওয়ার পরামর্শ দেন, তবে তা ব্যক্তি ও সহনশীলতার ওপর নির্ভর করে। আঁশ বাড়ানোর সাথে সাথে পানি খাওয়াও জরুরি।
চিয়া সিডের কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প
গুঁড়ো করা তিসির বীজ: চিয়া সিডের মতো, গুঁড়ো করা তিসির বীজ উদ্ভিদ-ভিত্তিক ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস—কিন্তু এর স্বাদ আরও বেশি পুষ্টিকর। এটি চিয়া সিডের মতো বহুমুখী এবং স্মুদি, ওটমিল বা ডিমের বিকল্প হিসেবে রাখা যেতে পারে।
শণের বীজ: আঁশ কম থাকলেও প্রোটিনে বেশি এবং ক্যালসিয়াম ও জিঙ্কে সমৃদ্ধ। সালাদ বা দইতে খাস্তা টেক্সচার যোগ করে।
সিলিয়াম হস্ক: এটি আঁশে ভরপুর, ২.৫ টেবিল চামচে থাকে ১২ গ্রাম আঁশ। এছাড়া এটি কোলেস্টেরল ও রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
চিয়া বীজ পুষ্টিসমৃদ্ধ হলেও অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা, ওষুধের প্রতিক্রিয়া বা কিডনি স্টোনের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই ধীরে ধীরে খাদ্যতালিকায় যোগ করুন, পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ছোট এই বীজের উপকার পেতে হলে জ্ঞান ও পরিমিতিবোধই সেরা বন্ধু।
সুত্র: https://www.eatingwell.com/dangers-of-chia-seeds-11717491
রবিউল হাসান