কোরবানির পশু
আষাঢ় শেষ হতে চললো, কিন্তু ঢাকায় এখনো সেভাবে টানা বৃষ্টিই হলো না। অল্পস্বল্প বৃষ্টিতে ঢাকা শহর জলাবদ্ধতার শিকার হয়। বৃষ্টি কম হলে বরং নাগরিক বিড়ম্বনাও কমে বটে। সেদিক দিয়ে বিচার করলে বর্ষাকালে ঢাকায় কম বৃষ্টি অনেকের কাছেই কাক্সিক্ষত।
পদ্মা সেতুতে মোটরবাইক প্রসঙ্গ
পদ্মা সেতু এখন তুমুল আলোচনার সাবজেক্ট। পদ্মা সেতুর সুরক্ষা নিয়ে এবং মোটরবাইকের সাময়িক পারাপারে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। ড. এম সামছুল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক। তার সাক্ষাতকার পড়ছিলাম গণমাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো। তিনি বলছেন, ‘আমি মনে করি মোটরসাইকেল বন্ধ করে দেয়া উচিত। কারণ, মোটরসাইকেলের চলাচল পদ্মা সেতুর সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সেখানে যে এক্সপ্রেসওয়ে হয়েছে, তার উদ্দেশ্য দ্রতগতিতে যান চলাচল নিশ্চিত করা। সেই রাস্তায় মোটরসাইকেলের চাপ ও চলাচল ভারী যানবাহনের চলাচলের গতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ও দুর্ঘটনা এড়াতেও এটা জরুরী। ভারী যানবাহন যখন দ্রুতগতিতে চলে, তখন এর বাতাসও একটি মোটরসাইকেলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
মোটরসাইকেলকে বাঁচাতে গিয়ে আমাদের মহাসড়কগুলোতে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। মহাসড়কগুলোর জন্য এখন বড় আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোটরসাইকেল। আগে আমরা ভটভটি, নছিমনকে দোষ দিতাম। এখন তার জায়গা দখল করে নিয়েছে মোটরসাইকেল। পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় শুরুতে আমরা দেখলাম যে মোটরসাইকেলের কারণে অধিকাংশ বুথ দখল হয়ে গেছে। সেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। অন্য বাহন পার হতে পারছে না, সেখানে দীর্ঘ জট তৈরি হচ্ছে। তাই যদি হয়, তবে পদ্মা সেতু যে উদ্দেশ্য নিয়ে বানানো হয়েছে, তা বাধাগ্রস্ত হবে।’
কোরবানির প্রস্তুতি
ঢাকা অভিমুখে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। আগামীকাল বুধবার থেকেই হাটে বেচাকেনা শুরু হচ্ছে। গত দুই বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে রাজধানীর হাটকেন্দ্রিক উৎসবের আমেজে অনেকটা ভাটা পড়েছিল। রাজধানীর সব পশুর হাটে জনসমাগম ছিল নিয়ন্ত্রিত। নির্ধারিত হাটের সংখ্যাও কমিয়ে এনেছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও হাটের সংখ্যা কমানো হয়েছে।
পাশাপাশি ডিজিটাল হাটের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এবার উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসানো হচ্ছে ৮টি অস্থায়ী পশুর হাট। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসতে যাচ্ছে ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট। গবাদিপশু ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, মূলত ঈদের তিনদিন আগে হাটগুলো পুরোপুরি জমে উঠবে। করোনা সংক্রমণরোধে অনলাইনে ও ডিজিটাল পশুর হাট এরই মধ্যে জমে উঠেছে। বিচিত্র বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে ফেসবুকেও।
রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদ- দুই ঈদে ঢাকার দিনরাত প্রায় একই রকম, অবশ্য কিছুটা পার্থক্যও রয়েছে। ঈদের আগে ঢাকা ফাঁকা করে বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা-শহর ও গ্রামের উদ্দেশে ছুটে যাওয়া সাধারণ নিয়মে পরিণত।
যারা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যেতে ব্যর্থ হন তাদের হৃদয়ের ভেতর চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস, যারা যান না বলে আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখেন, তারা এবং তাদের সঙ্গে ঢাকার অন্য নাগরিকরা ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নেন। রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে আসায় ঢাকার চিরচেনা বা বলা ভাল স্থায়ী হয়ে যাওয়া রূপ বদলে যায় সাময়িকভাবে।
বহুজনের প্রত্যাশা থাকে কোরবানি ঈদের দিন সকালে না হোক, বিকেল বা রাতে বৃষ্টি হোক। বৃষ্টি হলে পশু জবাইয়ের রক্তধারা সব ধুয়ে যাবে। এবার আষাঢ়ের শেষে হচ্ছে ঈদ। যতদূর মনে পড়ে, গত কয়েকটা কোরবানি ঈদ বর্ষাকালে হওয়ায় বৃষ্টির সহায়তা পেয়েছে। কোরবানি ঈদের আগে লাখো গরু-ছাগলের আগমনের কারণে রাজধানীর অবয়ব অনেকটাই বদলে যায়। বিশেষ করে আবাসিক এলাকাগুলোয় এক অন্যতর গন্ধ পাওয়া যায়।
যে গলিতে কুকুর-বিড়াল ছাড়া অন্য মানবেতর প্রাণীর প্রবেশাধিকার মেলে না, সেখানে বীরদর্পে ঢুকে পড়ে দশাসই ষাঁড়। সেই সঙ্গে নিরীহ দশনের কিছু ছাগলও। এ দুটি প্রাণীর উদরপূর্তির জন্য খড়-বিচালি ও কাঁঠাল পাতার প্রয়োজন পড়ে। গরু-ছাগলের হাঁকডাক গলির ধ্বনিতরঙ্গে আচমকা ভিন্ন আবহ নিয়ে আসে।
গোবর-গোমূত্রের গন্ধ গণপরিবেশে মিশে থাকে, নগরীতে তা সাময়িক। ফলে, সাময়িকভাবেই বদলে যায় রাজধানীর পরিবেশ। গরু বঁাঁধার জন্য গাছ কি মেলে সব স্থানে? বরং রয়েছে ইলেক্ট্রিকের পোল, ফটকের লোহা বা ইস্পাত নির্মিত বার ও গ্রিল। সেসবের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় কোরবানির পশু। স্বল্পকালীন এই অতিথিরা কোরবানির শেষে এক রকম অদৃশ্যই তো হয়ে যাবে। তবু কটা দিন রাজধানীর সামগ্রিক পরিবেশ ও অর্থনীতিতে একটা বড় প্রভাব পড়তে দেখি আমরা।
সড়কে সড়কে দেখি মাংস কাটার ধারালো সরঞ্জাম, হোগলা পাতার পাটি এবং গাছের গুঁড়ির কর্তিত অংশ নিয়ে বসে পড়েন দোকানিরা। সব মিলিয়ে এক ভিন্নধর্মী বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করে রাজধানীবাসী বছরে এই একটিবার। মমতাভরে কাঁঠালপাতা যে ছাগলটির মুখে তুলে দিতে দেন ঘরণী, ঈদের দিন সেই তিনি ওই প্রাণীটির মাংস দারুণ মসলাসহযোগে রেঁধে তার টুকরো তুলে দেবেন প্রিয়জনের পাতে। করোনাভাইরাসের উর্ধগতিতে কি এসব প্রাণচাঞ্চল্যে কিছুটা ভাটা পড়েছে? পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঢাকার লাখ লাখ পরিবার।
শিক্ষক হেনস্তায় প্রতিবাদ
নড়াইলে কলেজ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা, সাভারে কলেজ শিক্ষক হত্যা, মিথ্যা অজুহাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা, জমি দখল, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদে এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিগত ছয় মাসে হিন্দু নির্যাতনের রিপোর্ট পেশ উপলক্ষে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজক বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট বলেছে, প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও হিন্দু সম্প্রদায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ঘটনার ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে এ দেশে হিন্দুদের বসবাস কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।
অন্যদিকে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে পৃথক সমাবেশে অংশ নেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনাসহ সারাদেশে শিক্ষক লাঞ্ছনার বিভিন্ন ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা।
তারা বলেছেন, দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ মহীরুহের আকার ধারণ করছে। প্রশাসনে-পুলিশে-শিক্ষায়-নিরাপত্তা বাহিনীতে কারা চাকরি পাচ্ছেন, সরকারকে এটি দেখতে হবে। তারা মুক্তিযুদ্ধের পারিবারিক ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে পরীক্ষা দিতে দাঁড়িয়েছেন কি না, তা দেখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে এসব জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এসব কথা বলেন। নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে নির্যাতনের প্রতিবাদে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে অংশ নিয়ে প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আমরা যখন পদ্মা সেতুর আলোকচ্ছটার দিকে তাকিয়ে আছি, তখন আমরা খেয়াল করছি না যে কী ভয়াবহ অন্ধকার আমাদের সমাজকে গ্রাস করেছে।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ এখন মহীরুহের আকার ধারণ করছে বলে মন্তব্য করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু নির্মাণের সাফল্যে ২৫ জুন যখন আমরা সবাই ঐক্যের সুরে একত্র হয়েছিলাম, সেদিনও আমরা জানতাম না যে কী ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। পরের দিন সকালে খবর পেলাম, নড়াইলের একটি কলেজের অধ্যক্ষকে পুলিশের সামনে গলায় জুতার মালা পরিয়ে অপমান করা হয়েছে।
পুলিশের দায়িত্ব ছিল মালাটি খুলে ফেলা, কিন্তু তা তারা করেনি। মাথা নত করে একজন শিক্ষক পুলিশের গাড়িতে উঠলেন। আমাদের মনে হয়, এ ধরনের ঘটনাগুলো পরিকল্পিত। গত কয়েক বছরে যে কয়েকজন শিক্ষক নিগৃহীত হয়েছেন, প্রত্যেকেই সনাতন ধর্মের মানুষ। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার বলতে ইচ্ছা করে, এ কোন্ বাংলাদেশ আমরা প্রত্যক্ষ করছি! এই বাংলাদেশ কি আমরা কখনও চেয়েছিলাম?’
প্রসঙ্গত, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাময়িক বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের এক ছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ১৮ জুন কলেজের অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য, নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ওই ছাত্র ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু মুসলমান ছাত্র তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেন। তখন অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের ‘পক্ষ নিয়েছেন’, এমন রটনা ছড়িয়ে পড়লে সেখানে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় উত্তেজিত ছাত্ররা অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ হয়।
এ সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের কিছু ছাত্র ও স্থানীয় ব্যক্তি পুলিশের উপস্থিতিতে স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন।
সাব্বির নাসিরের ঈদ উপহার
ঈদে বিনোদনের পসরা সাজায় টিভি ও ইউটিউব চ্যানেল। এটি এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ও গিটারবাদক সাব্বির নাসির বিগত চার বছর যাবত প্রতিটি ঈদে, পহেলা বৈশাখে এবং সেই সঙ্গে বছরের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নতুন গান রিলিজ করছেন। গত বছর ঈদে ব্যতিক্রমধর্মী গান ‘আধা’ রিলিজ হয়েছিল।
পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল অবশ্য এটিকে মিউিজিক ভিডিও না বলে বলেছেন মিউজিক্যাল ফিল্ম। যাহোক, সাব্বিরের প্রতিটি গানের চিত্রায়নে বিশেষত্ব লক্ষ্য করেছি। তরুণ মুন্সীর সুরে আসন্ন ঈদে আসছে সাব্বির নাসিরের স্যাড রোমান্টিক ঘরানার নতুন গান মন খারাপের দিন। কথা লিখেছেন সুহৃদ সুফিয়ান। গানটির মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন আবু হুরায়রা তানভীর ও পুনম হাসান জুঁই। মিউজিক ভিডিওটি পরিচালনা করেছেন আফফান আজিজ প্রীতুল।
গানটি সাতমাত্রার এবং কথা ও সুরে মন খারাপের গভীরতা তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সাব্বির নাসিরের সচরাচর যেমন গান ভিডিওতে দেখা যায় বা শোনা যায়, তা থেকে এটা একটু অন্য ধাঁচের।
৩ জুলাই ২০২২