
ছাত্রজীবন মানেই কি শুধু বই-খাতা আর পরীক্ষার চাপে গুটিয়ে থাকা? না, আসলেই কি সেই একমাত্র গল্প? আজকের তরুণরা বুঝতে পেরেছে, শুধু টেবিলের সামনে বসে পড়াশোনা করলেই হবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে দরকার বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস আর অভিজ্ঞতা। আর সেই অভিজ্ঞতা আসছে পার্ট-টাইম কাজের মাধ্যমে—যা শুধু পকেট ভারী করে না, গড়ে তোলে শক্তিশালী ক্যারিয়ার ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ।
পার্ট-টাইম কাজ বলতে বুঝায় এমন একটি কাজ যা দিনে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং যার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের খরচ চালাতে পারে। আমাদের দেশে যদিও এই ধারণা এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, তবে অনেক শিক্ষার্থী নিজের চেষ্টায় বিভিন্ন কাজের সুযোগ করে নিচ্ছে। কল সেন্টার থেকে শুরু করে গ্রাফিক ডিজাইন, ফুড ডেলিভারি থেকে টিউশনি—এই কাজগুলো শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করছে।
পার্ট-টাইম কাজ শুধু অর্থ উপার্জন নয়, এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত দক্ষতার এক গুরুত্বপূর্ণ খোলস। একজন শিক্ষার্থী এখানে যোগাযোগ দক্ষতা, সময় ব্যবস্থাপনা, দলগত কাজ করার ক্ষমতা, এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনা শিখে যা ভবিষ্যতে যে কোনো ক্যারিয়ারে উপকারে আসে। পাশাপাশি পার্ট-টাইম কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে চাকরিদাতারা প্রার্থীকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়।
অবশ্য, দেশে পার্ট-টাইম কাজকে এখনও অনেক পরিবার পুরোপুরি স্বাগত জানায় না। অনেক অভিভাবক মনে করেন এটি পড়াশোনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে। অথচ উন্নত বিশ্বে দেখা যায়, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তুলছে। শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ বাড়ানো এবং পরিবারের মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি, যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তবজীবনের দক্ষতাও অর্জন করতে পারে।
পার্ট-টাইম কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করে, আর্থিক ব্যবস্থাপনা শেখে এবং সময় সঠিকভাবে ব্যবহার করার ক্ষমতা গড়ে তোলে। এছাড়াও এই কাজের মাধ্যমে নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়, নেটওয়ার্ক তৈরি হয় যা পরবর্তীতে কর্মজীবনে বড় সহায়ক হয়। এইসব অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করে এবং ভবিষ্যতে চাকরি বা ব্যবসার পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
সব মিলিয়ে, ছাত্রজীবন যেন হয় শুধু পরীক্ষার দৌড় নয়, বরং বাস্তব জীবনের এক প্রশিক্ষণ মঞ্চ। যেখানে পার্ট-টাইম কাজ শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলে দক্ষ, আত্মবিশ্বাসী ও স্বাধীনতাসম্পন্ন নাগরিক। তাই শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবক ও শিক্ষাব্যবস্থাকেও সচেতন হতে হবে, যেন পার্ট-টাইম কাজের মূল্যায়ন হয় যথাযথভাবে।
মিমিয়া