
সংগৃহীত
নিশ্ছিদ্র নিয়মে বাঁধা দেশ: জাপান ভ্রমণের আগে যা যা অবশ্যই জানা জরুরি,জাপান—প্রযুক্তির রাজ্য, শৃঙ্খলার প্রতীক, আর সংস্কৃতির নিখুঁত সংমিশ্রণ। এই দেশ ঘুরতে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না জানলে আপনার সুন্দর ট্রিপ অনাকাঙ্ক্ষিত অস্বস্তিতে পরিণত হতে পারে।
টোকিওর রোবট ক্যাফে থেকে কিয়োটোর প্রাচীন মন্দির কিংবা ফুজির চূড়ায় সূর্যোদয় দেখা সব কিছু উপভোগ করতে হলে মানতে হবে কিছু নিয়ম, জানতে হবে কিছু নিষেধ।
ভিসা: বাংলাদেশিদের জন্য বাধ্যতামূলক
- জাপানে ঢুকতে হলে বাংলাদেশি নাগরিকদের ট্যুরিস্ট বা বিজনেস ভিসা নিতে হয়। ঢাকায় অবস্থিত জাপান দূতাবাস থেকে আবেদন করতে হয়, প্রয়োজন পড়ে পাসপোর্ট, ছবি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্রাভেল প্ল্যানসহ আরও কিছু কাগজপত্র। নির্ভুলভাবে আবেদন করলে ভিসা পাওয়া কঠিন নয়।
মুদ্রা ও খরচ: ইয়েন ছাড়া গতি নেই
- জাপানের মুদ্রা ইয়েন (¥)। দেশটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল, তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে বাজেট ঠিক রাখা সম্ভব। অনেক দোকানে এখনো ক্যাশ প্রেফার্ড—তাই নগদ ইয়েন হাতে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
থাকার ব্যবস্থা: ঐতিহ্য বনাম আধুনিকতা
- থাকতে পারেন ঐতিহ্যবাহী "রয়কান"হোটেলে, কিংবা মজার অভিজ্ঞতা নিতে "ক্যাপসুল হোটেলে"। চাইলে Airbnb বা সাধারণ হোস্টেলও পাবেন সহজে। আগে থেকেই রিজারভেশন করাই উত্তম।
খাবার: সুশি থেকে শুরু করে হালাল
- জাপানি খাবার যেমন সুশি, রামেন, তেম্পুরা—আপনাকে নতুন স্বাদের সাথে পরিচিত করাবে। হালাল খাবারের সংখ্যা এখনো সীমিত, তাই উপাদান দেখে অর্ডার করুন। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে খাওয়াকে অশোভন মনে করা হয়।
যাতায়াত: সময়ের চেয়ে পয়েন্টি কিছু নেই!
- জাপানের ট্রেন সিস্টেম বিশ্বের অন্যতম সেরা। "JR Pass" কিনলে শহর থেকে শহরে কম খরচে যাওয়া যাবে। ট্রেনে উঠে চুপ থাকা, মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা এবং লাইন মেনে চলা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সমাজ ও সংস্কৃতির নিয়ম
জাপান এমন এক দেশ যেখানে ‘নিয়ম’ মানে শুধু আইন নয়, এটি জীবনযাপনের অংশ।
যা অবশ্যই জানতে হবে:
- ট্যাটু থাকলে অনেক স্পা, অনসেন ও সুইমিং পুলে প্রবেশে বাধা আসতে পারে। কারণ জাপানে ট্যাটুকে এখনো অপরাধ-সংগঠনের প্রতীক (ইয়াকুজা) হিসেবে ধরা হয়।
- ট্রেনে/বাসে চুপচাপ থাকুন।মোবাইলে কথা বলা বা জোরে গান শোনা বেয়াদবি মনে করা হয়।
- জুতা খুলে ঢোকা বাধ্যতামূলক। অনেক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ঘর, এমনকি কিছু দোকানেও জুতা খুলতে হয়। ইনডোর স্লিপার ব্যবহারের সংস্কৃতি প্রচলিত।
- ধূমপান শুধু নির্ধারিত এলাকায়। পাবলিক প্লেসে ধরা পড়লে জরিমানা।
- টিপস নয়, সৌজন্যই যথেষ্ট।জাপানে কাউকে অতিরিক্ত টাকা দিলে সেটিকে অপমান হিসেবে ধরা হতে পারে।
দর্শনীয় স্থান
- টোকিও: প্রযুক্তি ও শহুরে জীবনের কেন্দ্র।
- কিয়োটো: ঐতিহ্যবাহী মন্দির ও সাংস্কৃতিক হৃদয়।
- ওসাকা: খাবার প্রেমীদের স্বর্গ।
- ফুজি পর্বত: প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য।
ইন্টারনেট ও যোগাযোগ
ইংরেজি জানলেও জাপানি ভাষার জ্ঞান খুব কম। তাই "গুগল ট্রান্সলেট ও অফলাইন ম্যাপ" ডাউনলোড করে রাখুন। এয়ারপোর্ট থেকেই "পকেট ওয়াইফাই বা সিম" কিনে ফেলাই ভালো।
জরুরি নম্বর
- ১১০ — পুলিশ
- ১১৯ — ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স
- মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স করে গেলে ভালো, কারণ চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
জাপান ঘোরার মজাই আলাদা, তবে এর সংস্কৃতি, শৃঙ্খলা ও সামাজিক রীতিনীতিকে সম্মান জানিয়ে চলতে পারলে আপনার অভিজ্ঞতা হবে আরো বেশি প্রাণবন্ত ও সম্মানজনক।
হ্যাপী