ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

এবার নতুন বোমারু বিমান তৈরি করছে ভারত, একবারেই ১২ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিবে এই যুদ্ধবিমান

প্রকাশিত: ১৬:০২, ১৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৬:০২, ১৭ জুলাই ২০২৫

এবার নতুন বোমারু বিমান তৈরি করছে ভারত, একবারেই ১২ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিবে এই যুদ্ধবিমান

ছবিঃ সংগৃহীত

ভারত এমন একটি সুদূরপাল্লার কৌশলগত বোমারু বিমান তৈরির পরিকল্পনা করছে, যা ১২,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব পাড়ি দিতে পারবে রিফুয়েলিং ছাড়াই। এই Ultra Long-Range Strike Aircraft (ULRA) প্রকল্পটি ভারতীয় বিমান বাহিনীকে আকাশপথে আঘাত হানার এক নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেবে।

এই বিমানটি মূলত রাশিয়ার TU-160 'Blackjack' এবং আমেরিকার B-21 Raider-এর আদলে তৈরি হবে, তবে হবে সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তি ও চাহিদার উপযোগী। এর মাধ্যমে আকাশপথে ভারতের পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও দৃঢ় হবে।

বিশ্ব মানের বোমারু: ভারতের নতুন অগ্রযাত্রা
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের B-2 স্পিরিট বা ভবিষ্যতের B-21 Raider এবং চীনের উন্নয়নশীল H-20 বোমারু যেভাবে বিশ্বে সামরিক ক্ষমতার চিত্র বদলে দিচ্ছে, তাতে ভারত আর শুধু সীমান্তের লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ থাকতে চাচ্ছে না। বরং, আন্তর্জাতিক আকাশ সীমায় প্রভাব রাখার মত শক্তি অর্জনই এ প্রকল্পের লক্ষ্য।

এই বোমারু বিমানটি শুধু যে দূরে যেতে পারবে তা নয়, এর মধ্যে থাকবে স্টেলথ প্রযুক্তি, রাডার ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা এবং সম্পূর্ণ অটোমেটেড ফ্লাইট সিস্টেম। উদ্দেশ্য একটাই— চোখে না পড়ে পৌঁছানো, এবং লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানা।

ব্রহ্মোস-NG: প্রধান অস্ত্র
এই ULRA বোমারু বিমানে প্রধান অস্ত্র হিসেবে থাকবে ব্রহ্মোস-NG মিসাইল। ছোট আকারের হলেও, এটি ঘণ্টায় তিনগুণ গতিতে ছুটে গিয়ে ২৯০–৪৫০ কিমি দূরের টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম।

পাশাপাশি এতে Agni-1P ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, লেজার বোমা এবং অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইল যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে, যার মাধ্যমে শত্রু ঘাঁটি, রাডার এবং কমান্ড সেন্টারে একক আঘাতে ধ্বংস নামানো যাবে।

রাশিয়া-ফ্রান্সের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা
এ ধরনের সুপারসনিক বিমান তৈরি মোটেই সহজ নয়। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO), হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL), এবং Aircraft Development Agency (ADA) একসঙ্গে কাজ করছে। রাশিয়া ও ফ্রান্সের সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়ে কথাবার্তা চলছে। ইঞ্জিনের জন্য ভাবা হচ্ছে GE-414 অথবা রাশিয়ার NK-32-এর মতো শক্তিশালী প্রযুক্তি নিয়ে।

২০৩৫-এর মধ্যে আকাশে দেখা যেতে পারে প্রথম প্রোটোটাইপ
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রথম প্রোটোটাইপ ২০৩২ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে উড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এখনো ডিজাইন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপে রয়েছে, তবে মডেল তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে।

কী বদলাবে এই বোমারু বিমান এলে?
🔹 পারমাণবিক ত্রিভুজ সম্পূর্ণ হবে (স্থল, জল ও আকাশপথে পারমাণবিক আক্রমণের ক্ষমতা)

🔹 শত্রুর উপর দূর থেকে সুনির্দিষ্ট হামলার ক্ষমতা বাড়বে

🔹 ভারত বৈশ্বিক সামরিক নকশায় গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠবে

🔹 ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত প্রভাব বৃদ্ধি পাবে

একটি পরিণত বার্তা বিশ্বের উদ্দেশে
ভারত যেন এই বার্তা দিচ্ছে — “আমরা শুধু সীমান্ত রক্ষা করতে চাই না, প্রয়োজনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও প্রস্তুত।”

এটি আত্মনির্ভর ভারতের আরেকটি বড় পদক্ষেপ, যা শুধু প্রযুক্তি নয়, কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিতেও এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

 
 

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×